WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Thursday, August 27, 2020

গীতা জ্ঞান কৃষ্ণ পূর্বে সূর্য্যকে দিয়েছিলো

 


গীতা জ্ঞান নাকি শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে সূর্য্যকে দিয়েছেন , আর সূর্য্য তার পুত্র আদি পিতা মনুকে দিয়েছেন ও মনু তার পুত্র ইক্ষ্বাকুকে দিয়েছেন ?

গীতা ও মহাভারত অনুসারে কথাটা মিথ্যে নয় , আমাদের বোঝার ভুল আছে অনেক । কারণ কথাটা গীতা জ্ঞান হবে না , হবে কর্ম যোগ সম্পর্কিত জ্ঞান । যদি গীতার জ্ঞান এই কথা বলেন তাহলে আমাকে বলতে হবে যে মহাভারতের পূর্বেও পাণ্ডব আর কৌরবদের মধ্যে আরো একবার বা একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে , কিন্তু কিন্তু প্রকৃত সত্য হল তা হয়নি , মহাভারতের যুদ্ধ একবারই হয়েছে । শ্রী কৃষ্ণ বললেন -

"আমি পূর্বে বিবস্বানকে ( অর্থাৎ সূর্য্যকে ) এই অব্যয় কর্মযোগ জ্ঞান বলেছিলাম, তিনি তাহা মনুকে ও মনু তাহা ইক্ষ্বাকুকে বলেছিলেন ।"

-------------- গীতা ৪ অধ্যায় ১ শ্লোক

অনেক পূর্বের জন্মে শ্রীকৃষ্ণ কর্মযোগ সম্পর্কিত জ্ঞান বিবস্বানকে বলেছিলেন , তিনি আবার তার পুত্র মনুকে বলেছিলেন , আবার মনু ইক্ষ্বাকুকে বলেছিলেন ।

এখন কথা হল গীতায় উল্লেখ্য বিবস্বান বা সূর্য্য বলতে আলো আর তাপ প্রদানকারী সূর্য্যকে বুঝি । আর মনু বলতে আমরা ৭ম মন্বন্তরের আদি পিতা বৈবস্বতকে বুঝি । কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল । তাহলে সত্য কি ? আসুন দেখে নেওয়া যাক  -

"পুনরায় ত্রেতা যুগের আরম্ভে সূর্য্য মনুকে এবং মনু সম্পূর্ণ জগতের কল্যাণের জন্য ইক্ষ্বাকুকে এই জ্ঞান দিয়েছেন । ইক্ষ্বাকুর উপদেশ এই শাশ্বত ধর্মের সম্পূর্ণ জগতে প্রচার করেছে । নরেশ্বর ! কল্পান্তে এই ধর্ম পুনরায় পরমেশ্বর নারায়ণকেই প্রাপ্ত হয়ে যায় ।"

------ মহাভারত/শান্তি পর্ব ৩৪৮/৫১ ও ৫২ শ্লোক

অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ আদি পিতা বৈবস্বত মনুকে ওই কর্মযোগ সম্পর্কিত জ্ঞান দেননি । কারণ বৈবস্বত মনু ত্রেতা যুগের অনেক পূর্বে তথা সত্যযুগেরও অনেক পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেছেন । আর বিবস্বান পুত্র মনু জন্ম গ্রহণ করেছেন ত্রেতা যুগের শুরুতে ।

আমরা সকলেই জানি ইতিমধ্যে ৬ টি মন্বন্তর চলে গেছে , বর্তমানে আমরা ৭ম মন্বন্তরে আছি । আবার ৭ম মন্বন্তরের মধ্যে ২৮তম চাতুর্যুগ চলছে । ৭১ চাতুর্যুগে ১মন্বন্তর হয় । অর্থাৎ আদি পিতা বৈবস্বত মনু ২৮টি চতুর্যুগের একেবারে শুরুতে অর্থাৎ ৭ম মন্বন্তরে শুরুতে জন্ম গ্রহণ করেছেন ।

অপর দিকে গীতায় উল্লেখিত বিবস্বান তথা সূর্য্য ও তার পুত্র মনু ৭ম মন্বন্তরের ২৮তম  চতুর্যুগের যে চার যুগ আছে তথা সত্য , ত্রেতা , দ্বাপর , কলি যুগ আছে , তার মধ্যে ত্রেতা যুগে জন্মে ছিলেন । অর্থাৎ  মহাভারতের মতে গীতা উক্ত এই  মনু কোনো ভাবেই আদি পিতা মনু নয় । গীতার মনু হলেন বিবস্বান নামক এক রাজার পুত্র মনু ও তার পুত্র ইক্ষ্বাকু ।

রাজাদের তথা গৃহাশ্রমে বসবাসকারীদের কর্মযোগ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকলে তারা রাজ্য পরিচালনা ও সংসারে ভালোভাবে বসবাস করতে পারেনা তথা সংসার ধর্ম ভালোভাবে করতে পারে না ।

মুক্তাত্মা কৃষ্ণের বেদ উপনিষদে পূর্ণ জ্ঞান ছিল তার ফলে তিনি বৈদিক সেই কর্মযোগই বিবস্বান নামক রাজাকে বলেছিলেন আর এই কর্মযোগ সম্পর্কিত জ্ঞান বেদ উপনিষদে খুব ভালোকরে দেখতে পাই আমরা ।

কৃষ্ণ পূর্বে অনেকবার জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তার মনেও আছে সেই জন্মের কথা তা তিনি গীতার ৪ অধ্যায়ের ৫ শ্লোক ও ২ অধ্যায়ের ১২ শ্লোকে স্বীকার করেছেন । অর্থাৎ তিঁনিও যে জীবাত্মা ছিল তাও তিনি নিজেই বলেছেন ।

আর মহাভারতের মতে রাম চন্দ্রেরও সেই বিবস্বান তথা সূর্য্য বংশেই জন্ম হয়েছিল এবং রামচন্দ্র ছিলেন সেই বংশের ৫৮তম অধস্তন পুরুষ ।

অর্থাৎ গীতায় উক্ত বিবস্বান বা সূর্য্য , আলো বা তাপ দেওয়া সূর্য্য নয় । আর তার ছেলে মনুও ৭ম মন্বন্তরের আদি পিতা বৈবস্বত মনু নয় । এরা প্রত্যেকেই রাজা ছিলেন আর বৈদিক জ্ঞান সম্পন্ন শ্রীকৃষ্ণ ওনার পূর্ব জন্মে তাদেরকে কর্মযোগ সম্পর্কে বলেছিলেন । কেননা সকলের মতো কৃষ্ণেরও বহু জন্ম হয়েছে এবং তিনি তা মনে রাখতে পারতেন ।
কারণ তিনি মুক্তাত্মা ছিলেন ।

যোগেশ্বর শব্দের অর্থ


"যোগেশ্বর" শব্দের অর্থ কি ?

গীতার ১৮ অধ্যায়ে ৭৫ ও ৭৮ শ্লোকে কৃষ্ণ জীকে

যোগেশ্বর কথন করা হয়েছে । 

"যোগ" শব্দের অনেক অর্থ হয় , যেমন -

"যোগঃ সংহনন-উপায় ধ্যান সঙ্গতি যুক্তিষু" অর্থাৎ এর অর্থ হল উপায় , কৌশল , সাধনা , যুক্তি ।

মহাভারতের নানা জায়গায় এই "যোগ" শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে , যেমন - দ্রোণাচাৰ্য বধের উপায় সম্বন্ধে বলা হয়েছে "একোহি যোগোহস্য ভবেদ বধায়" অর্থাৎ উহাকে বধের একটি মাত্র উপায় বা কৌশল আছে । ঠিক তেমনি  ঈশ্বর প্রাপ্তিরও অনেক রকম যোগ বা উপায় বা কৌশল আছে , যেমন - কর্মযোগ , জ্ঞানযোগ , ধ্যানযোগ , ভক্তিযোগ প্রভৃতি ।

গীতায় অনেক জায়গায় যোগ শব্দ কর্ম যোগ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে । যেমন গীতার ২ অধ্যায়ের ৫০ শ্লোকে বলা হয়েছে "যোগঃ কর্মসু কৌশলম" অর্থাৎ কর্মে কৌশলই যোগ" আর কৃষ্ণকে যোগেশ্বর বলার কারণ হল শ্রীকৃষ্ণ কর্ম , কৌশল , যুক্তি , সাধনা ইত্যাদিতে অন্যান্য যোগীদের থেকে উত্তম বা সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন , তাই শ্রীকৃষ্ণ জীকে যোগেশ্বর কথন করা হয়েছে , এটা একটা উপাধিও বলা যায় ।