WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Showing posts with label ved. Show all posts
Showing posts with label ved. Show all posts

Thursday, July 30, 2020

পবিত্র বেদ ও গীতায় ওঁ জপ

পবিত্র বেদ ও গীতায় ওঁ জপ
__________________________________________

বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তং শরীরম্।
ওম্ ক্রতো স্মর। ক্লিবে স্মর। কৃতং স্মর।।
  
যজুর্বেদ ৪০/১৫ মন্ত্র


পদার্থ : 

(বায়ুরনিলমমৃতমথেদং) প্রানস্বরূপ বায়ু অবিনাশি কিন্তু (ভষ্মান্তং) ভষ্মেই অন্ত (শরীরম্) শরীরের তাই( ওম্ ক্রতো স্বর)  ওঁ স্বরন করো (ক্লিবে স্মর) নিজের স্বরূপকে স্বরন করো (কৃতং স্মর)  কর্মকে স্বরন করো ।

অর্থ : 

প্রানস্বরুপ বায়ু অবিনাশী কিন্ত শরীর বিনাশী ভষ্মেই তাহার অন্ত। তাই মৃত্যু কালে ওঁ স্বরন কর নিজের স্বরুপকে স্বরন করো নিজের কর্মকে স্বরন করো । 

ভাবার্থ : 

আত্মা অবিনাশী কিন্তু এই স্থূল শরীর বিনাশী তাহার অন্ত হয় ভষ্ম তথা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার মাধ্যমে তাই হে জীব শরীর ত্যগ পূর্বে তুমি পরমাত্বার শ্রেষ্ঠ নাম ওঁ  উচ্চারন করো তাহাকে স্বরন পূর্বক জপ করো । নিজের স্বরূপকে স্বরন করো তুমি কেমন ছিলে কেমন আছ এবং পরবর্তীতে তোমার কি হইবে? তুমি স্বরন করো নিজের কর্মকে তুমি কি করেছো? কেমন করেছো ? কেন করেছো ? কেমন ছিলো তোমার কর্ম ? এরুপেই তুমি পরমাত্বাকে জানিতে ও প্রাপ্ত হইতে পারবে ।




ওম্ ইতি একাক্ষরম্ ব্রহ্ম ব্যাহরন্ মাম্ অনুস্মরন্ ।
য়ঃ প্রযাতি ত্যজন্ দেহম্ সঃ যাতি পরামাম্ গতিম্ ।। 

গীতা ৮/১৩ শ্লোক 


পদার্থ 

 (ওম্, একাক্ষরম্, ব্রহ্ম) 'ওঁ' হলো এক অক্ষর ব্রহ্ম অর্থাৎ ব্রহ্মের বোধক যে 'ওঁ' অক্ষর আছে উহাকে (ব্যাহরন্) কথন করে (মাম্, অনুস্মরন্) আমাকে এর অনন্তর স্মরণ করে অর্থাৎ এই পদের উপদেষ্টা হিসেবে জেনে  (য়ঃ) যে পুরুষ (দেহম্, ত্যজন্) দেহকে  ত্যাগ করে  (প্রযাতি) মৃত্যু হয় (সঃ) সে (পরামাম্, গতিম্, যাতি) পরম গতি কে প্রাপ্ত হয়।।

ভাবার্থ 

যে পুরুষ 'ওঁ' নামক ব্রহ্ম অক্ষর কে স্মরণ করতে করতে দেহ ত্যাগ দ্বারা প্রয়াণ করে সে পুরুষ পরম গতি কে প্রাপ্ত হয়।।

ভাষ্য 

এখানে কথন করে যে 'ওঙ্কার' এর জপ সমাধি লাভে উপযোগী, যেমন 'ঈশ্বরপ্রণিধানাদ্বা' যোগদর্শন ১/২৩ সূত্রে কথন করা হয়েছে যে ঈশ্বরের 'প্রণিধান' ভক্তি বিশেষ দ্বারা সমাধি লাভ হয়।।

এই শ্লোকের ব্যাখ্যাতে অবতারবাদী টীকাকারগণ এই অক্ষর কে কৃষ্ণের সাথে মিলিয়ে দেয় অর্থাৎ কৃষ্ণ কে পরমেশ্বর বলে কথন করে। যদি মহর্ষি ব্যাসজীর এমন তাৎপর্য হতো তাহলে এই অক্ষর এর অনন্তর কৃষ্ণজী 'মাম্ অনুস্মর' কথন কথন করতো না, আমাদের বিচারে কৃষ্ণজী নিজেই নিজেকে ওই অক্ষরের উপদেষ্টা হওয়ার কারণে মহত্ত্ব কথন করে, নিজে অক্ষর ব্রহ্ম হওয়ার অভিমানে নয়, যদি স্বয়ং অক্ষর= ব্রহ্ম হওয়ার অভিমান করতো তাহলে 'তমাহুঃ পরমাম্ গতিম্' গীতা ৮/২১ এই বাক্য দ্বারা ওই অক্ষর কে পরম গতি নিরুপণ করে নিজের ধাম কথন করতো না। 'ধাম' শব্দের অর্থ হলো স্থিতি স্থান অর্থাৎ আমার স্থিতির স্থান হয় সেই অক্ষর, এই কথন করে আবার সামনে গিয়ে ওই অক্ষর প্রাপ্তির অন্যান্য ভক্তি দ্বারা কথন করে।।


মধুর ওঁ ধ্বনির ভিডিও টি দেখুন 






Wednesday, July 1, 2020

মাতৃশক্তি ও বেদ

 নারী তার পছন্দ মতো জীবন সঙ্গী বেছে নেবে-
ব্রহ্মচর্য়েণ কন্যা৩ য়ুবানং বিন্দতে পতিম্।
অনড্বান্ব্রহ্মচর্য়েনাশ্বো ঘাসং জিগীর্তি।।১৮।। (অথর্ব০ ১১/৫/১৮)
পদার্থঃ (ব্রহ্মচর্য়েণ) ব্রহ্মচর্য [বেদাধ্যয়ন আর ইন্দ্রিয়নিগ্রহ] দ্বারা (কন্যা) কন্যা [পছন্দের যোগ্য ছেলে] 
(য়ুবানম্) যুবা [ব্রহ্মচর্য দ্বারা বলবান] (পতিম্) স্বামী [পালনকর্তা বা ঐশ্বর্বান পতি] কে (বন্দতে) প্রাপ্ত করেন। (অনড্বান্) [রথ নিয়ে চালনাকারী] দামড়া-ছিন্নমুষ্ক ষাঁড় আর (অশ্বঃ) ঘোড়া (ব্রহ্মচর্য়েণ) ব্রহ্মচর্যের সাথে [নিয়ম দ্বারা নৈষ্টিক ব্রহ্মচারী হয়ে] (ঘাসম্=ঘাসেন) ঘাস দ্বারা (জিগীর্ষতি) সিঞ্চন করে [গর্ভাধান করে] ইচ্ছা করে।।১৮।।
ভাবার্থঃ কন্যা ব্রহ্মচর্য দ্বারা পূর্ণ বিদুষী আর যুবতী হয়ে পূর্ণ ব্রহ্মচারী বিদ্বান যুবা পুরুষের সাথে বিবাহ করবে আর যেরূপ দামড়া -ছিন্নমুষ্ক ষাঁড়, ঘোড়া আদি বলবান আর শীঘ্রগামী পশু ঘাস তৃণ ভক্ষণ করে ব্রহ্মচর্য নিয়ম দ্বারা সময়ে বলবান সন্তান উৎপন্ন করে, ঐরূপই মনুষ্য পূর্ণ ব্রহ্মচারী, বিদ্বান যুবা হয়ে নিজের সদৃশ্য কন্যার বিবাহ করে নিয়ম পূর্বক বলবান, সুশীল সন্তান উৎপন্ন করবে।।১৮।।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরনদাস ত্রিবেদী

নারী নিজের জ্ঞানের দ্বারা সংসারকে সমৃদ্ধি করেন-
কুহূর্দেবানামমৃতস্য পত্নী হব্যা নো অস্য হবিষো জুষেত।
শৃণোতু য়জ্ঞমুশতী নো অদ্য রায়স্পোষং চিকিতুষী দধাতু।।২।। (অথর্ব০ ৭/৪৭/২)
পদার্থঃ (দেবানাম্) দেবের মধ্যে (অমৃততস্য) অমৃত ব্যক্তির (পত্নী কুহূঃ) পত্নী কুহূ, [বিচিত্র স্বভাবের স্ত্রী] (হব্যা) সৎকার পূর্বক আহ্বানীয়, (অদ্য) এই সময় (নঃ অস্য হবিষঃ) আমাদের এই হবিষ্যান্নর (জুষেত) সেবন করে, ভোজন করে। (শৃণোতু) আমাদের প্রার্থনা শুনে, (য়জ্ঞমুশতী) গৃহস্থযজ্ঞের কামনাকারী, (চিকিতুষী) তথা সম্যক-জ্ঞানবান বিদুষী, (নঃ) আমাদের (রায়স্পোষম্) নিজ জ্ঞানরূপী সম্পত্তি (দধাতু) প্রদান করে।।২।।
নারী যেন দুঃখ্য কষ্ট না পায়-
ইমা নারীরবিধবাঃ সুপত্নীরাঞ্জনেন সর্পিষা সংস্পৃশন্তাম্।
অনশ্রবো অনমীবাঃ সুরত্না আ রোহন্তু জনয়ো য়োনিমগ্রে।।৩১।। (অথর্ব০ ১২/২/৩১)
পদার্থঃ (অবিধবাঃ) না বিধবা অর্থাৎ জীবিত পতিশীল, (সুপত্নীঃ) উত্তম-পত্নিরা-(ইমাঃ নারীঃ) অর্থাৎ যে নারীরা (আঞ্জনেন-অঞ্জনেন) অঞ্জন, (সর্পিষা) আর দ্রব্যভূত ঘৃতের সাথে (সংস্পৃশন্তাম্) সংস্পর্শ করেন। (অনশ্রবঃ) অশ্রু থেকে রহিত অর্থাৎ সদা সুপ্রসন্ন, (অনমীবাঃ) রোগ রহিত, (সুরত্নাঃ) অলংকারের দ্বারা সুভূষিত, (জনয়ঃ)  সন্তানোৎপাদিকা এই নারীরা, (য়োনিম্) ঘরে (অগ্রে) পতিকে আগে-আগে হয়ে (আরোহন্তু) চড়ে, প্রবেশ করেন।।৩১।।
[আরোহন্তু=ঘরের ভিত পৃথিবীতল দ্বারা উচু আর সীড়িযুক্ত হওয়া উচিত। (য়োনিঃ গৃহনাম=নিঘ০ ৩/৪)। সংস্পৃশন্তাম্=অঞ্জন দ্বারা চোখের তথা সর্পিঃ দ্বারা শরীরে স্পর্শ]।
ভাষ্যঃ প্রো০ বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার

নারী বিদ্যার দ্বারা শোভা বাড়াবে-
রেভ্যাসীদনুদেয়ী নারার্সী ন্যোচনী।
সূর্য়ায়া ভদ্রমিদ্বাসো গাথয়ৈতি পরিষ্কৃতা।।৭।। (অথর্ব০ ১৪/১/৭)
পদার্থঃ (রৈভী) বেদবাণী (সূর্য়ায়াঃ) প্রেরণাকারী [বা সূর্যের উজ্জ্বলতার সমান তেজশালী] কন্যার (অনুদেয়ী) সহচর [তুল্য] আর (নারাশংসী) মনুষ্যের গুণের স্তুতি (ন্যোচনী) খাঁটি [ছোট সহজ-সরল তুল্য] (আসীত্) হয়। আর (ভদ্রম্) শুভ কর্ম (ইত্) ই (বাসঃ) বস্ত্র [সমান] হোক [কেননা সে] (গাথয়া) গাওয়ার যোগ্য বেদ বিদ্যা দ্বারা (পরিষ্কৃত) সজ্জিত হয়ে (এতি) চলতে থাকে।।৭।।
ভাবার্থঃ কন্যা বেদ আর ইতিহাসকে স্বাধ্যায় করে বিচার পূর্বক শুভ কর্মকরে উত্তম বিদ্যা দ্বারা নিজের শোভা বাড়াবে।।৭।
ভাষ্যঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরনদাস ত্রিবেদী

।।ও৩ম্ শম্।।

Saturday, June 20, 2020

বেদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়







প্রথম পর্ব :
-------------------------

স্তুতা ময়া বরদা বেদমাতা প্রচোদয়ন্তাং পাবমানী দ্বিজানাম ।
আয়ু প্রাণং প্রজাং পশুং কীর্তিং দ্রাবিণং ব্রহ্ম বর্চসম্ ।।
মহ্যং দত্ত্বা ব্রজত ব্রহ্মলোকম ।।

ভক্তের উক্তি :
মনের উৎসাহ দাত্রী , দ্বিজদের পবিত্রকারিণী , শ্রেষ্ঠ জ্ঞান দাত্রী বেদমাতাকে আমি অধ্যায়ন করিয়াছি ।

পরমেশ্বরের উক্তি : 
আয়ু , প্রান , প্রজা , পশু , কীর্তি , ব্রহ্মতেজ
আমাতে অর্পণ করিয়া তুমি মুক্তি প্রাপ্ত হও ।।

🔥 অথর্ববেদ - ১৯/৭১/১ মন্ত্র.....................................................✍️

"বেদ" শব্দটি 'বিদ্' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন । বিদ্' ধাতুর অর্থ - 'জানা' ।  সেজন্য বেদ শব্দের ধাতুগত অর্থ - জ্ঞান বা বিদ্যা । বিদ্যা দুই প্রকার পরা ও অপরা । জগৎকারণ পরব্রহ্ম বিষয়ক অলৌকিক জ্ঞান - পরাবিদ্যা । আর জাগতিক বিষয় সম্বন্ধীয় যাবতীয় লৌকিক জ্ঞান অপরা বিদ্যা । বেদে পরা ও অপরা এই দুই বিদ্যাই উপস্থিত । সেইজন্য বেদকে সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডার বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে বেদের বেদত্ব পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা প্রকাশের জন্য । পরাবিদ্যাই শ্রেষ্ঠ বিদ্যা ।
"বিদ্' ধাতুর চারপ্রকার অর্থ হয় :

"বেত্তি বেদ বিদ জ্ঞানে"

"বিন্তে বিদ বিচারণে"

"বিদ্যতে বিদ সত্তায়ং"

"লাভে বিন্দতি বিন্দতে" 

এই চার প্রকার অর্থ হচ্ছে :

"জানা"

"বিচার করা"

"অবস্থান করা"

"লাভ করা"

যা পাঠ করলে মানুষ সত্য বিদ্যা জানতে পারে , সত্যাসত্যের বিচার করতে পারে , প্রকৃত বিদ্বান হতে পারে এবং প্রকৃত শান্তি ও আনন্দ লাভ করা সম্ভব , তার নাম বেদ ।

👉 মহর্ষি ব্যাসদেব বেদকে চারভাগে করে ।
তাঁর নিজের শিষ্য পৈলকে "ঋগ্বেদ", বৈশম্পায়ন কে "যজুর্বেদ", জৈমিনিককে "সামবেদ" এবং সুমন্ত কে "অথর্ববেদ" প্রচারের জন্য নির্বাচন করেন । বেদ অপৌরুষেয় এবং নিত্য অর্থাৎ কোন পুরুষ বা মানুষের রচিত নয় । ঋগ্বেদে পুরুষ সূক্ত বলেন - বেদ পরমেশ্বরের রচিত নহে । শ্বাস প্রশ্বাসের । মত বেদমন্ত্র স্বতঃ নির্গত । এইজন্য বেদ নিত্য ও অপৌরুষেয় ।

👉 বেদের বিভিন্ন নাম শ্রুতি , ত্রয়ী , নিগম ইত্যাদি। 'শ্রু' ধাতুর অর্থ শ্রবণ করা , সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত যাতে মানুষ সমস্ত সত্যবিদ্যা শ্রবণ করতে পারে তাঁর নাম শ্রুতি । 
তাছাড়া বেদ পূর্বে গুরুশিষ্য পরম্পরাক্রমে যুগ যুগ ধরে শ্রুত হয়ে ঋষি সমাজে প্রচলিত ছিল বলে বেদের অপর নাম শ্রুতি । আর বেদমন্ত্র তিন শ্রেণীতে বিভক্ত - ঋক , যজু , সাম অর্থাৎ  পদ্য , গদ্য , গীতি । সেই জন্য বেদকে ত্রয়ী বলা হয় । আর নিগম শব্দের অর্থ নিশ্চিতরুপে গমন করানো । যে শাস্ত্র পাঠে সাধক কে নিশ্চিতরুপে পরমেশ্বরের নিকট গমন করায় বা নিয়ে যায় তাই নিগম বা বেদ ।



দ্বিতীয় পর্ব :
-------------------------

প্রতি বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত - মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ , মন্ত্রভাগের অপর নাম সংহিতা। এতে প্রধানত যাগ যজ্ঞাদি ক্রিয়ার বিধি নিষেধ , মন্ত্র ও অর্থবাদ প্রভৃতি বিষয়গুলি উল্লেখিত আছে আর সংহিতা ভাগে যে সব গূঢ় রহস্য প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত আছে , সেই সব অপ্রকাশিত অর্থ শ্রুতি নিজেই যে অংশে প্রকাশ করেছে , সেই অংশের নাম ব্রাহ্মণ । ব্রাহ্মণ ভাগে প্রধানত স্তোত্র , ইতিবৃত্ত , উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যা বিষয় উল্লেখ আছে । এই অংশ গুলি গদ্যে রচিত ।

👉 এই ব্রাহ্মণাংশের অংশবিশেষকে "আরণ্যক" বলে । কারন উহা বানপ্রস্থাশ্রমে অরণ্যবাসীদের পাঠ্য ছিল । বানপ্রস্থ অরণ্যবাসীদের পক্ষে যাগযজ্ঞ কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং উচ্চতর জ্ঞানলাভের জন্য তাদের হৃদয় ব্যাকুল হওয়ায় আত্মোপলবদ্ধির জন্য ধ্যান , জপ , প্রার্থনা , উপাসনা ছিল তাদের মুখ্য কাজ যাগ যজ্ঞ ছিল গার্হস্থ জীবনের প্রাধান কাজ । আরণ্যকও গদ্যে রচিত ।

👉 বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ অংশ হলো উপনিষদ । উপনিষদ ব্রহ্মবিদ্যাই বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করেছে । ব্রহ্মবিদ্যাই বেদের সারবস্তু , সেজন্য এর নাম বেদান্ত । অজ্ঞান নিবৃত্তি ও ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায় তাই বেদান্তের অপর নাম উপনিষৎ । উপনিষদের অর্থই ব্রহ্মবিদ্যা । সংহিতা ও ব্রাহ্মণ এই দুই উপনিষদের মধ্যে রয়েছে তাই তারা সংহিতোপনিষদ বা ব্রাহ্মণউপনিষদ নামেও উল্লেখিত হয়ে থাকে ।
বেদের এই চারটে ভাগ সংহিতা , ব্রাহ্মণ , আরণ্যক ও উপনিষদ এদের মধ্যে একটি ক্রমপর্যায় আছে । যেমন প্রথমে সংহিতা , তারপর ব্রাহ্মণ, তারপর আরণ্যক ও সর্বশেষ উপনিষৎ ।

👉 সমস্ত বেদকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় - কর্মকান্ড ও জ্ঞানকাণ্ড । এরমধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণে প্রধানত কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ।  আর আরণ্যক ও উপনিষদ জ্ঞানকাণ্ডেরর অন্তর্গত । এতে উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যার উল্লেখ আছে । কর্মকাণ্ড জীবকে অভ্যুদয় ধনরত্নাদি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং পারলৌকিক স্বর্গাদি ফল প্রদান করে । কিন্তু জ্ঞানকাণ্ড মানুষের চিত্তশুদ্ধি দ্বারা মুক্তি মোক্ষ দান করে ।কর্মকাণ্ড মানুষকে প্রবৃত্তি মার্গে আর জ্ঞানকাণ্ড মানুষকে নিবৃত্তি মার্গে চালনা করার প্রেরণা দিয়ে মানুষের জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে ।



তৃতীয় পর্ব :
-------------------------

বেদমন্ত্র গুলি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত পদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম ঋক গদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম যজু  এবং গানাত্মক মন্ত্রের নাম সাম । সেজন্য বেদের অপর এক নাম ত্রয়ী । ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহার্য এক এক শ্রেণীর মন্ত্রগুলিকে এক এক স্থানে বিভক্ত করে ঋক,যজু,সাম এই তিনটি বেদ গ্রন্থাকারে বিভক্ত করেছিলেন । আর যজ্ঞে ব্যবহার্য নয় অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি যে বেদের অন্তর্ভুক্ত করলেন তাকে অথর্ববেদ বলা হয় ।

পবিত্র বেদ অনাদি ও অনন্ত, এর জ্ঞানরাশি অনাদি অনন্ত ।
ঋগ্বেদের ১০/১৯০/৩ মন্ত্রে উল্লেখ আছে -
"অউম সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথা পূর্বমকল্পয়ৎ"
প্রত্যেক সৃষ্টির পূর্বে আর একটি সৃষ্টি ছিল ।
অতএব যেহেতু সৃষ্টি অনাদি , সুতরাং সৃষ্টির পূর্ববর্তী বেদও অনাদি ।

👉 বেদই সনাতনের ধর্ম , বেদই সনাতনের কর্ম , এক কথায় যিনি বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেন বর্তমানে তিনিই সনাতনী নামে অভিহিত হন । বেদ না মানলে তিনি সনাতন নহেন । বেদে সকল শ্রেণীর সকল হিন্দুর সর্বরকম উপাসনার সার সামগ্রী নিহিত আছে ।বৈদিক পরবর্তিকালে জগতে যত কিছু উপাসনা পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে সবই  বৈদিক উপাসনার অনুকৃত মাত্র । সেজন্য দেখিতে পাই বৈদিক ঋষিরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ তৃণ থেকে নীরাকার নির্গুণ পরব্রহ্মের পর্যন্ত উপাসনা করেগেছেন । বেদের মতে -

"সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"
"ঈশা বাস্যামিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ"

"জগতে চেতন অচেতন যত কিছু বস্তু আছে সমস্ত কিছুর মধ্যেই ব্রহ্ম বিদ্যমান । এই পৃথিবীতে যত জাতি যত ধর্ম সসম্প্রদায় উৎপত্তি হয়েছে , সব জাতির সকল ধর্মের সার সামগ্রী বৈদিক ধর্মের অন্তর্ভুক্ত

বেদ মন্ত্র গুলির মধ্যে একটা নিজস্ব দুর্বার শক্তি নিহিত । তা না হলে কয়েক হাজার বছর ধরে অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও এগুলি আমাদের কাছে পৌঁছোলো কিভাবে ?



                                        🙏 নমস্তে  🙏



Friday, June 19, 2020

হরফ প্রকাশনী বেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন



কিছু লোকের কাছে হরফ প্রকাশনীর বেদ ও নারায়ণ পুস্তকালয় প্রকাশনীর বেদসমগ্র  কেন এতো প্রিয় ? 

উত্তর : কারন এই বেদের অনুবাদ দিয়ে তাদের অপপ্রচার চালাইতে খুবই শুবিধা হয় ।

 প্রথমে হরফ প্রকাশনীর ভুল গুলো দেখে নিই 

 হরফ প্রকাশনীর প্রকাশক একজন মুসলিম নাম "আব্দুল আল আযিয"। আশ্চর্য হলেন বুঝি ?😃 নিচে হরফ বেদ থেকে ছবি দিয়েছি মিলিয়ে দেখুন 👇



এটা কোন গুরুকুল দ্বারা স্বিকৃত নয় । বেদ অনুবাদ অবশ্যই গুরুকুল দ্বারা স্বীকৃত হওয়া চাই- কিন্তু হরফ বেদ কোন গুরুকুল স্বীকৃত নয় 

এটার শুরুতেই মানে ঋগ্বেদের প্রথম খন্ডের ভূমিকাতেই - ১৬,  ১৭ এবং ১৮ নং পেইজে কোরআনের ব্যাখ্যা রয়েছে ।😃 
কি ! শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন ? 
নিচে ছবি দিয়েছি মিলিয়ে দেখুন 
👇



 এটা ব্যাকরন ও নিরুক্ত বিরুদ্ধ অনুবাদ ।  কারন বেদের সংস্কৃত শব্দের অনুবাদ করতে হলে নিরুক্ত ও ব্যাকরন শাস্ত্র দ্বারা সেগুলো অনুবাদ করতে হয় কিন্তু এই হরফ প্রকাশনী বেদে নিরুক্ত ব্যাকরনের কোন ছাপ নেই সম্পূর্ণ বেদ বিরুদ্ধ অনুবাদ এটা ।

এটার বহূ মূল মন্ত্রতেও ভ্যাজাল আছে মানে 
( ১ নম্বর মন্ত্র ৩ নম্বরে,  আর ৩ নম্বর  মন্ত্র ১ নম্বরে এমন বহূ আছে )

এটাতে তৈত্তরীয় সংহিতাকে বেদ বানিয়ে যজুর্বেদ এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে "কৃষ্ণ যজুর্বেদ" নামে ।
👇


এটাতে অথর্ব বেদের রেফারেন্সকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন - ১/১/১/১  যেখানে মূল বেদের রেফারেন্স ৩ ভাগের যেমন - ১/১/১ 

যেখানে অথর্ববেদে বহূ সুক্ত গড়মিল আছে খুজে পাওয়া যায়না ।

যেখানে বেদের এমন অনুবাদ করা হয়েছে যার আগা মাথা কেউ বুঝতে পারেনা ।
👇



যেখানে অবতারবাদ ইত্যাদি অবৈদীক বিষয়কে সাপোর্ট করা হয়েছে 

যেখানে বেদ বিরুদ্ধ মাংসাহারকে সাপোর্ট করা হয়েছে ।


এমন আরো বহূ বা হাজারো ভূল ত্রুটি আছে হরফ প্রকাশনীর বেদে
👇



এবার বলবো নারায়ণ পুস্তকালয়ের বেদসমগ্র নিয়ে 


বেদসমগ্র এটা হরফ প্রকাশনীর বেদের বাংলা অংশ নিয়ে গঠিত মানে এটাতে হরফ প্রকাশনীর বাংলা অংশই আছে সংস্কৃত নেই । 
( মানে হরফ প্রকাশনীর বেদ আর এটা একই শুধু সংস্কৃত থাকা না থাকার ডিফারেন্স )

 এটাতে ঋগ্বেদের ১০ নং মন্ডলটিই নেই 
( যেখানে ঋগ্বেদ ১০ টি মন্ডল নিয়েই গঠিত )

 এটাতে বহূ সুক্ত গায়েব , মানে নেই । 

বেদ সমগ্রের জন্য হরফ প্রকাশনীর দেওয়া বক্তব্যের ৪ এবং ৬ থেকে ১১ নং বক্তব্য দ্রষ্টব্য - কারন এগুলো এই ।
👇


এই ভূল অনুবাদ গুলি দিয়া অধিকাংশ মুসলিমেরা সাধারন সনাতনী ভাই বোন দেরকে ব্রেনওয়াশ করে থাকে

আশাকরি সকল সনাতনী ভাই ও বোনেরা এই হরফ প্রকাশনী ও বেদসমগ্র ত্যাগ করিয়া চলবেন,  কারন এগুলোর অনুবাদে বহূ ভূল রহিয়াছে । এগুলো পড়ে আপনারা বিভ্রান্ত হইতে পারেন তাই এগুলোকে ত্যাগ করুন

পবিত্র বেদের এখনো শুদ্ধ বাংলা অনুবাদ বের হয়নি তবে হিন্দী ও ইংরাজীতে খুব সুন্দর সুন্দর অনুবাদ বের হয়েছে পারলে সেগুলোর  Pdf Download করে পড়তে পারেন

আশাকরি বাংলাতেও অতি সত্বর বের হবে কারন বেদের বাংলা অনুবাদের কাজ চলছে  হয়তো ২-৩ বছরের মধ্যে সকল বঙ্গভাষী সনাতনী ভাই ও বোনেরা শুদ্ধ বাংলায় বেদ পড়তে পারবেন

 🙏 নমস্তে 🙏

যারা বেদ পড়তে আগ্রহী তারা এখান থেকে ইংরাজী ভাষ্য বেদ এর PDF Download করে পড়তে পারেন 

👇👇👇👇👇

ঋগ্বেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

যজুর্বেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

সামবেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

অথর্ববেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

এছাড়াও বেদের ৪০০ মন্ত্রের শুদ্ধ বাংলা অনুবাদ পড়তে পারেন নিচে দেওয়া বইটির PDF Link download করে পড়তে পারেন 

👇👇👇👇👇

বেদসার বাংলা ভাষ্য পড়ুন 

Thursday, June 18, 2020

পবিত্র বেদ অনুসারে ঈশ্বর কে ?

ঈশ্বর কে ? 
_______________

🔥 "ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি বিশ্বজগতের স্রষ্টা"

👉ঋগ্বেদ - ৩|৬৩|১০ মন্ত্র.........................................................✍️


🔥 "ঈশ্বর হলেন তিনি যাহাতে সর্ব জগত আশ্রয় করে আছে"

👉ঋগ্বেদ - ৩২|৮ মন্ত্র................................................................✍️


🔥 ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি সকলের মোক্ষ দাতা

👉ঋগ্বেদ - ১|৭২|১ মন্ত্র...........................................................✍️

🔥 ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি এক এবং অদ্বিতীয়

👉 অথর্ব্ববেদ - ১৩|৪|২ মন্ত্র....................................................✍️


🔥 ঈশ্বর হলেন তিনিই যাহার নিয়মে বিশ্বসংসার চলে

👉 ঋগ্বেদ - ১|২২|১৯ মন্ত্র........................................................✍️

🔥 ঈশ্বর তিনিই যিনি পবিত্র বেদের উৎপাদক

 👉 যজুর্ব্বেদ - ৩৩|৩১ মন্ত্র.......................................................✍️

"ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু, রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান
 একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ"

👉ঋগ্বেদ - ১|১৬৪|৪৬ মন্ত্র......................................................✍️

অনুবাদ : এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন ।

"ন দ্বিতীয়া ন তৃতীয় শ্চতুর্থ না পু্চ্যতে
 ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠ ন সপ্তমো না পুচ্যতে
 নাষ্টমো ন নবমো দশমো না পুচ্যতে
 য এতং দেবমেক বৃতং দেব"

👉অথর্ব্ববেদ - ১৩|৪|২ মন্ত্র....................................................✍️

অনুবাদ : পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম ষষ্ট সপ্তম অষ্টম নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অবিহিত নহে ।

"য এক তমু ষ্টুহি কৃষ্ঠীনাং বিচর্যণি। পতি যজ্ঞে বিষক্রতু"

👉ঋগ্বেদ - ৬|৪৫|১৬ মন্ত্র........................................................✍️

অনুবাদ : যিনি এক অদ্বিতীয়া, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাহার উপাসনা কর ।

"ওঁ খং ব্রহ্ম"

👉যজুর্ব্বেদ - ৪০|১৭ মন্ত্র........................................................✍️

ওঁ -ই ঈশ্বর । 


                                             🙏 নমস্কার 🙏

৩৩ কোটি দেবতার সন্ধানে


       


আমাদের সনাতন বৈদিক ধর্মে ৩৩ কোটি দেবতা সম্পর্কে অনেকেই বিভ্রান্ত হন । হিন্দুরা অনেকেই জানেনা ৩৩ কোটি দেবতা কোন কোন গুলোকে বলা হয়, অনেকেই আবার দুর্গা , কালী, মনসা ,গণেশ ,কার্তিক ইত্যাদি পৌরাণিক চরিত্র কে দেবতা মনে করে। তাই এই ৩৩ কোটি দেবতা বিষয়েই আমার আজকের এই পোস্টটি লেখা ।

👉 দেবতার অর্থ হলো যার দিব্য গুন আছে এবং যার দিব্য গুনের দ্বারা এই জীব জগৎ চলছে তাকেই দেবতা বলে যেমন - সূর্য ।
👉 দেবতার অর্থ ঈশ্বর গ্রহণ করা ভুল কারণ পরমেশ্বর সকল দেবতা কে চালিত করে এবং সকল দেবতারও দেবতা বলে পরমেশ্বর এর এক নাম মহাদেব ,

👉 আর আমাদের মধ্যে যে কোটি শব্দ নিয়ে বিভান্ত আছে তার অর্থ এখন করিবো , সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ প্রকার , যজুর্বেদ ১৪/৩১ মন্ত্র - "ত্রয়স্ত্রিংশৎত্রিশতা" এবং শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫ তেও ৩৩ দেবের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে ।

👉 শুরুতেই বলে রাখি আমাদের ৩৩ দেবের মধ্যে শুধু একটি মাত্র চেতন দেবতা হল 'জীবাত্মা' বাদবাকি ৩২ টি দেবতাই হলো জড় বস্তু।


 বৃহদারণ্যক উপনিষদে‬ আছে..............................✍️

"অষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়ত্রিংশা চিতি"

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/২ ||=

অর্থাৎ - অষ্ট বসু , একাদশ রুদ্র , দ্বাদশ আদিত্য এই কয় জন মিলিয়া একত্রিশ এবং ইন্দ্র ও প্রজাপতি মিলিয়া তেত্রিশ দেব ।


"ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ"

=|| যজুর্বেদ ১৪/৩১ ||=

অর্থ : প্রকৃতির শাসক , প্রজার পালক সর্ব্বব্যাপক , সর্ব্বাধিপতি পরমাত্মার তেত্রিশ ভৌতিক দেব শক্তির অনুশীল কর ।

অর্থাৎ...................✍️

৮ বসু 

১১ রুদ্র 

১২ আদিত্য 

ইন্দ্র  ও

প্রজাপতি 

এই ৩৩ টি কে দেবতা বলা হয় ।

👉 ৮ বসু কাকে বলে ও কি কি ?

 উত্তর:- নিখিল পদার্থ এই সবের মধ্যেই আছে
তাই এদের বসু বলা হয় ।

অগ্নিশ্চ পৃথিবীশ্চ বায়শ্চান্তিরিক্ষং চাদিত্যশ্চ দ্যৌশ্চ চন্দ্রমাশ্চ নক্ষত্রাণি চৈত্রে বসব

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৩ ||=

অর্থ : অগ্নি, পৃথিবী, বায়ু, অন্তরিক্ষ, আদিত্য, দ্যুলোক ,চন্দ্র, নক্ষত্র সকল ইহারা অষ্ট বসু ।

অর্থাৎ ৮ টি বসু হইলো :

১ ) পৃথিবী 
২ ) জল 
৩ ) অগ্নি 
৪ ) বায়ু 
৫ ) আকাশ 
৬ ) চন্দ্রমা 
৭ ) সূর্য 
৮ ) নক্ষত্র সমূহ

👉 ১১ রুদ্র কাকে বলে ও কি কি ?

উত্তর : "দশমে পুরুষো প্রাণা আত্মৈকাদশন্তে"

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদঃ ৩/৯/৪ ||=

অর্থ : পঞ্চ প্রাণ এবং পঞ্চ উপ প্রাণ এই দশ এবং এক জীবাত্মা মিলে একাদশ রুদ্র ।

অর্থাৎ একাদশ রুদ্র গুলো হল :

১ ) প্রাণ 
২ ) অপান 
৩ ) ব্যান 
৪ ) উদান 
৫ ) সমান 

৬) নাগ 
৭ ) কূর্ম 
৮ ) কৃকল 
৯ ) দেবদত্ত 
১০ ) ধনঞ্জয়
 
১১ )জীবাত্মা 

এই ১১টি দেহান্তকালে রোদন করে অর্থ্যাৎ এই ১১ টি সত্ত্বা যখন একটি মনুষ্যের দেহ থেকে বেরিয়ে যায় তখন সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ফলে সবাই কান্না অর্থ্যাৎ রোদন করে ওঠে বলে ইহা দিগকে রুদ্র বলে  ।

👉 দ্বাদশ আদিত্য কাকে বলে ও কি কি ?

উত্তর : "দ্বাদশ বৈ মাস"

 =|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৫ ||=

অর্থ : বৎসরে বার মাস ১২ আদিত্য ।

অর্থাৎ : দ্বাদশ আদিত্য গুলো হল :

১ ) চৈত্র 
২ ) বৈশাখ 
৩ ) জৈষ্ঠ 
৪ ) আষাঢ় 
৫ ) শ্রাবন 
৬ ) ভাদ্রপদ 
৭ ) আশ্বিন 
৮ ) কার্ত্তিক 
৯ ) মার্গশীর্ষ 
১০ ) পৌষ 
১১ ) মাঘ 
১২ ) ফাল্গুন  

১২ টি আদিত্য : সংবৎসরের ১২ মাস সকলের আয়ু হরণ করে বলিয়া এই সকলকে আদিত্য বলে ।

👉 ইন্দ্র ও প্রজাপতি কি ? 

★ স্তনযিত্নুরেবেন্দ্রো

 =|| বৃহদারন্যকোওনিষদ ৩/৯/৬ ||=

অর্থাৎ বিদ্যুৎ হচ্ছে ইন্দ্র  ।

★ যজ্ঞঃ প্রজাপতিরিতি

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৬ ||=

অর্থ : যজ্ঞ ( অর্থাৎ শুভ কর্ম ) হচ্ছে প্রজাপতি 

পরম ঐশ্বর্য্য হেতু বলিয়া বিদ্যুতের নাম ইন্দ্র এবং প্রজাপতি অর্থাৎ যজ্ঞ, ইহা দ্বারা বায়ু ও বৃষ্টির জলের শুদ্ধি হয়ে থাকে, এর দ্বারা উত্তম অন্নাদি উৎপন্ন হয়।

[ এই হল আমাদের ৩৩ কোটি (প্রকার) দেবতা ]

👉 এখন বলুন এর মধ্যে কি দুর্গা কালি মনসা গণেশ ইত্যাদি পৌরাণিক কাহিনির যে অবাস্তব চরিত্র গুলোকে দেবতা ভাবেন সেগুলোকে কি পেলেন এখানে ?

( এই ৩৩ টি দেবতার উপাসনা করার কথা বেদাদী অর্থাৎ বেদানুকূল শাস্ত্রে কোথাও নেই কারণ আমাদের শাস্ত্র অনুযায়ী শুধু মাত্র নিরাকার ,অজন্মা, সর্বব্যাপক ,অবিনাশী , নিত্য ,অমর সেই পরমেশ্বরের উপাসনা করতে হবে ,অন্য কারো নয় । আজও হিন্দুরা দেবতা সম্পর্কে কিছুই না জেনে অনেকেই ভ্রম জালে পতিত হচ্ছে এবং তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে জন্মগত বমুনেরা )


👉 অনেক পন্ডিতেরা এখন আবার বলিতে পারে যে শিব , বিষ্ণু ইত্যাদি এরাও তো দেবতা কেননা এদের নাম বেদে আছে ।

তাদের উত্তরে আমি বলিব - না , শিব , বিষ্ণু  কোন দেবতা নয় ।  কারন শিব , বিষ্ণু হচ্ছে পরমাত্বার গুনবাচক নাম । যেমন - পরমাত্মা যখন মঙ্গলময় তখন তিঁনি শিব নামে পরিচিত । এবং যখন তাকে সর্বব্যাপী মনেকরি তখন তিনি বিষ্ণু 😃

👉 কোন কোন পন্ডিত আবার বলিবে তাহলে তো শিব ও বিষ্ণু পৌরানিক ও বিষ্ণুর চারহাত ও তিনি বৈকুন্ঠে থাকে আর শিব কৈলাশে থাকে হাতে তৃশুল থাকে মানে তারা দুজনেই আকার 😃

তাদের উত্তরে বলিব - না , কারন শিব ও বিষ্ণু নিরাকার তাদের কোন আকার নেই ( পৌরানিক যুগে ঈশ্বরের এই পবিত্র নামগুলি শিব বিষ্ণু ইত্যাদি নাম দিয়ে একেকটি দেবতা নামক চার হাত পাঁচহাত ওয়ালা এলিয়েন তৈরী করা হয়েছে )  কারন পরমাত্বা নিরাকার  যজুর্বেদ ৪০/৮ মন্ত্র মতে তিনি নিরাকার শরীর রহিত জন্ম রহিত মৃত্যু রহিত । তাই বুঝতে হবে যে শিব বা বিষ্ণু একই জন এবং তিনি নিরাকার পরমাত্বা ।

♥️ সত্যকে জানুন এবং মিথ্যা পরিত্যাগ করুন ♥️

Tuesday, June 16, 2020

গায়েত্রী মন্ত্রের বিজ্ঞান ভাষ্য


                       

🔥 গায়েত্রী মন্ত্রের বিজ্ঞান ভাষ্য 🔥

ওঁ ভূ র্ভুবঃ স্ব
তৎসবিতুর্বরেণ্যং 
ভর্গো দেবস্য ধীমহি 
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ 

ঋগ্বেদ - ৩/৬২/১০ ; যজুর্ব্বেদ - ৬/৩৫ ; সামবেদ - উঃ ৬/৩/১০



আদি দৈবিক ভাষ্য : 

পদার্থ : (ভূঃ) ‘ভূঃ’ নামক ছন্দরশ্মি কিংবা অপ্রকাশিত কণা বা লোক, (ভুবঃ) ‘ভুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা আকাশ তত্ত্ব, (স্বঃ) ‘সুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা প্রকাশিত কণা , আকাশ কণা বা সূর্যাদি তারা আদিতে যুক্ত । (তত্) ওই অগোচর বা দূরস্থ সবিতা অর্থাৎ মন, ‘ওম্’ রশ্মি, সমস্ত ছন্দরশ্মি, বিদ্যুৎ সূর্যাদি আদি পদার্থকে (বরেণ্যম্ ভর্ঘঃ দেবস্য) সাধারণ-ভাবে আচ্ছাদিতকারী ব্যাপক [ভর্গঃ=অগ্নি বৈ ভর্গঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৮; আদিত্য বৈ ভর্গঃ জৈ০ উ০ ৪.১২.২.২; বীর্যং বৈ ভর্গহত্রর্ষ বিষ্ণুর্য়জ্ঞঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৭] আগ্নেয় তেজ, যে সম্পূর্ণ পদার্থকে ব্যাপ্ত করে অনেক সংযোগ সংকোচকারী বল দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত লোকের নির্মাণ যুক্ত প্রেরিত করতে সমর্থ, (ধীমহি) প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ পদার্থ ঐ আগ্নেয় তেজ, বল আদিকে ব্যাপক রূপে ধারণ করেন । (ধিয়ঃ য়ঃ নঃ প্রচোদয়াত্) যখন সে উপযুক্ত অগ্নিতেজ ঐ পদার্থকে ব্যাপ্ত করেন, তখন বিশ্বামিত্র ঋষি জ্ঞান ভিত্তিক মন বা ‘ওম্’ রশ্মি রূপ পদার্থ [ধীঃ=কর্মনাম নিঘ০ ২.১; প্রজ্ঞানাম নিঘ০ ৩.৯; বাক্ বৈ ধীঃ ঐ০ আ০ ১.১.৪] নানা প্রকারের বাক্ রশ্মির বিবিধ দীপ্তি বা ক্রিয়া দ্বারা যুক্ত করিয়ে উত্তম প্রকার প্রেরিত বা নিয়ন্ত্রিত করতে থাকে ।

ভাবার্থ : মন এবং ‘ওম্’ রশ্মি পরিব্যাপ্ত রশ্মির দ্বারা যুক্ত হয়ে ক্রমশঃ সমস্ত মরুত, ছন্দরশ্মির অনুকূলতা থেকে সক্রিয় করিয়ে সমস্ত কণা, পরিণাম এবং আকাশ তত্ত্বকে উচিত বল বা নিয়ন্ত্রণ দ্বারা যুক্ত করেন । ইহাতে সমস্ত লোক তথা অন্তরিক্ষে বিদ্যমান পদার্থ নিয়ন্ত্রিত শক্তি দ্বারা যুক্ত হয়ে নিজে-নিজে ক্রিয়ায় উপযুক্ত রূপে সম্পাদিত করতে সমর্থ হয় । ইহাতে বিদ্যুৎ বলও উত্তমরূপে নিয়ন্ত্রিত থাকে ।

সৃষ্টির প্রথমে দৈবী গায়ত্রী ছন্দ পরাওম্ প্রকট হয় । পরা ওম্ ২৪ অক্ষর রশ্মির গায়ত্রী ছন্দের নির্মান করে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ বলের নির্মান করেন ।
উক্ত বিদ্যুৎ তথাকথিত ব্যবহার্য বিদ্যুৎ নন । প্রতিটি ২৪ টি অক্ষরই সূক্ষ সূক্ষ কম্পনরূপী ছন্দ বল যাহা আকাশ আদিকে অবকাশ মুক্ত করে সৃষ্টি নির্মানের জন্য গতি , বল , স্থান , প্রাণ সব কিছুই দান করে থাকে ।

[ বেদ বিজ্ঞানী স্বামী অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজী কর্তৃক সম্পাদিত গায়েত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ]