WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Showing posts with label ধর্ম. Show all posts
Showing posts with label ধর্ম. Show all posts

Thursday, June 11, 2020

সনাতন ধর্মের বৈদিক গ্রন্থ গুলি কি কি ?

 



সনাতন ধর্মের বৈদিক গ্রন্থ গুলো কি কি ? 

আজ আমি চেষ্টা করছি ক্ষুদ্র পরিসরে জানানোর । 
আমাদের সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি বেদের ( চার বেদ ) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সাদৃশ্যপূর্ণ এবং বেদের ব্যাখ্যা করার জন্য বিবেচিত গ্রন্থ সকলকে বৈদিক ধর্মগ্রন্থ বলা হয় 
মনে রাখবেন , 
এখানে বেদ হচ্ছে প্রামাণ্য গ্রন্থ । 
যেকোনো গ্রন্থেরই কোনো বাণী বেদ বিরোধী হলে তা বর্জনীয়। সমগ্র বেদ / শ্রুতি শাস্ত্র / সংহিতা ৪ ভাগে সংকলিত 

১ ) ঋগ্বেদ
২ ) যজুর্ব্বেদ 
৩ ) সামবেদ 
৪ ) অথর্ব্ববেদ 

পরবর্তীতে আসে স্মৃতি শাস্ত্র সমূহ 

👉* উপবেদ ৫ টি 
👉* বেদাঙ্গ ৬ টি
👉* ব্রাহ্মণ ৬ টি 
👉* আরণ্যক ৬ টি 
👉* সূত্র ৯ টি 
👉* স্মৃতি ২ টি 
👉* দর্শন ৬ টি 
👉* উপনিষদ ১০ টি 
( যদিও ১০৮ টি, কিন্তু মূল ১০ টি থেকে ১২ টি ধরা হয় )
👉* ইতিহাস ( পুরান )
👉* নীতি ৪ টি 

আসুন পর্যায়ক্রমিক ভাবে এসব গ্রন্থে আলোচিত 
বিষয় বস্তু নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলি - 

১ ) ঋগ্বেদ : প্রধান আলোচ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে- পরমাত্মা, আত্মা ও প্রকৃতি। এখানে বর্ণিত হয়েছে ঈশ্বরের হাজারো গুণাগুণ, বৈশিষ্ঠ্য । ইহলৌকিক ও পরলৌকিক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান । তাছাড়া আছে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, গ্রহবিজ্ঞান, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি । আবার বস্তুর (ক্ষেত্রবিশেষে ) ফিজিকাল, মেটাফিজিকাল এবং স্পিরিচ্যুআল ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করে ।
ঋগ্বেদে ১০ টি মন্ডল, ১০২৮ টি সুক্ত এবং ১০৫৮১ টি মন্ত্র রয়েছে । 

২ ) যজুর্ব্বেদ : মানুষের মনোজাগতিক বিভিন্ন দিক এবং আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে যজুর্বেদ । মানুষের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করে তাকে জীবনের পরম উদ্দেশ্য মোক্ষ লাভের জন্য করনীয় কার্যবিধি আলোচিত হয়েছে । 
যজুর্ব্বেদে ৪০ টি অধ্যায় এবং ১৯৭৫ টি মন্ত্র রয়েছে । 

৩ ) সামবেদ : প্রধানত জীবন-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি এবং মোক্ষ লাভের জন্য আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকর্মের কথা বলা আছে । সৃষ্টির বর্ণনা, ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণের বর্ণনা এবং আধ্যাতিক গুণাবলী অর্জনের কথা বলা হয়েছে এতে । 
সামবেদে ২ টি ভাগ - ক ) পূর্বাচিক খ ) উত্তরাচিক 
মোট ১৮৭৪ টি মন্ত্র রয়েছে । 

৪ ) অথর্ব্ববেদ : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্র, গণিত, জ্যোতিষ বিদ্যা, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব, চিকিৎসা বিদ্যা ( বিশেষ করে শল্য এবং ভেষজ চিকিৎসা ), কৃষি, কারিগরী, যুদ্ধ বিদ্যা, উড্ডয়ন যান বিদ্যা, রাজ্নীতি, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহ । ( ইতিহাস ব্যাতীত ) ।
অথর্ববেদকে ব্রহ্মবেদ-ও বলা হয় ( একেশ্বরবাদ ) । 
অথর্ব্ববেদের ২০ টি কান্ড, ১১১ টি অনুবাক, ৭৩১ টি সুক্ত, ৫৯৭৭ টি মন্ত্র রয়েছে  । 


👉* উপবেদ :

🔥 আয়ুর্ব্বেদ ( জীবন এবং চিকিৎসা )
🔥 ধনুর্ব্বেদ ( সমরবিদ্যা অথবা যুদ্ধবিদ্যা, রণকৌশল, আধ্যাত্মিকতা, কর্ম, কর্তব্য, নাগরিক, কূটনীতি বিদ্যা )
🔥 গন্ধর্বব্বেদ ( সংগীত ও প্রাকৃতিক সুর )
🔥 শিল্প বিদ্যা ( স্থাপত্য বিষয়ক বিদ্যা )
🔥 অর্থ বিদ্যা ( অর্থনীতি, রাজনীতি  )

👉* বেদাঙ্গ : 
বেদ শুদ্ধ ভাবে বুঝা ও ব্যাখ্যা করার জন্য বেদাঙ্গ বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিৎ নয়তো অর্থ সঠিক ভাবে অনুদিত হবে না ।  
বেদাঙ্গ সমূহ হল -

🔥 শিক্ষা 
🔥 কল্প 
🔥 ব্যাকরণ 
🔥 নিরুক্ত ( শব্দ তত্ত্ব )
🔥 ছন্দ 
🔥 জ্যোতিষ ( গণিত এবং গ্রহ বিজ্ঞান )

শাখা :  বেদের ব্যাখ্যা, বেদ সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য বৈদিক যুগে ১১২৭ টি শাখা ছিল । ঋগ্বেদের ২০ টা , যজুর্ব্বেদে ১০০ টা , সামবেদে ১০০০ টা, অথর্ব্ববেদে ৭ টা । 
দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে বর্তমানে মাত্র ২০ টি মতো শাখা আছে । 


👉* ব্রাহ্মণ গ্রন্থ : 
প্রত্যেকটি ব্রাহ্মণ চার বেদের কোনো না কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত এবং বেদের সংশ্লিষ্ট শাখার অংশ । ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে । 

🔥 ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ( ঋগ্বেদে সংযুক্ত )
🔥 কৌষীতকি বা শাঙ্খায়ন ব্রাহ্মণ ( ঋগ্বেদে সংযুক্ত )
🔥 শতপথ ব্রাহ্মণ ( শুক্লযজুর্ব্বেদে সংযুক্ত )
🔥 মহাতাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ( সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 ষড়বিংশ ব্রাহ্মণ ( সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 গোপথ ব্রাহ্মণ ( অথর্ব্ববেদে সংযুক্ত )
🔥 ছান্দোগ্য বা জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ (সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ( কৃষ্ণযজুর্ব্বেদে সংযুক্ত )
🔥গোপথ ব্রাহ্মণ ( অথর্ব্ববেদে সংযুক্ত )


👉* আরণ্যক : 
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের পরিশিষ্ট ভাগ আরণ্যক নামে প্রসিদ্ধ । 
সংসার পরিত্যাগ করিয়া ব্রহ্মচর্য অবস্থায় অরণ্যের মধ্যে অবস্থান করিয়া আর্য ঋষিগণ এই শাস্ত্র অধ্যায়ন করিতেন বলিয়া ইহা আরণ্যক নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে । এটা ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহের সারাংশ বলা যায় ব্রাহ্মণ গ্রন্থ গুলো থেকে নিংড়ানো রস । মহাভারতে লিখিত আছে - 
"অরণ্যকং চ বেদেভ্য ঔষধিভ্যহমৃতং 
  যথা হৃদনামুদধি শ্রেষ্ঠো গৌর্বরিষ্ঠা চতুষ্পাদম"

                                                   - ২৫৬ অধ্যায় (আদি পর্ব )
 অর্থাৎ ঔষধির মধ্যে অমৃত হৃদের মধ্যে সমুদ্র চতুষ্পদের মধ্যে গাভী যেরূপ শ্রেষ্ঠ, বেদের মধ্যে আরণ্যক তেমন শ্রেষ্ঠ । 

👉* সূত্র : 

🔥 গৃহ সূত্র 
🔥 ধর্ম সূত্র 
🔥 শ্রোতা সূত্র 
🔥 আশবালায়ন সূত্র 
🔥 গোভিল সূত্র 
🔥 প্রসাকর সূত্র 
🔥 কোশিতকি সূত্র 
🔥 কাত্যায়ন সূত্র 
🔥 বোধায়ন সূত্র 


👉* স্মৃতি :
যা মনে রাখা হয় তাহাই স্মৃতি । 
🔥 মনুস্মৃতি 
( বৈবস্বত মনু কর্তৃক রচিত । ইহাতে মোট ১২ টি অধ্যায় আছে )
🔥 যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি 
( ঋষি যাজ্ঞবাল্ক কর্তৃক রচিত । ইহাতে  ৩টি অধ্যায় আছে )


👉* উপনিষদ :
উপ পূর্ব্বক নি পূর্ব্বক বধ-গতি ও অবসাদনার্থ সদ ধাতুর প্রতি কিপ প্রত্যয় দ্বারা উপনিষদ শব্দটি সিদ্ধ হয়েছে । 
যে বিদ্যার দ্বারা জ্ঞানী গণের গর্ভ জন্ম ও জড়া মৃত্যু দোষ সমূহ নিশ্চয়রূপে অবসন্ন হয় সেই বিদ্যাই উপনিষদ । উপনিষদ ব্রহ্ম জ্ঞানের প্রধান আকর এবং ব্রহ্ম বিদ্যাই উপনিষদের একমাত্র প্রতিপাদ্য বিষয় । আর্য ঋষিগণ প্রাচীন কালে দর্শন ও ঈশ্বর তত্ত্ব সম্বন্ধে যে কতো দূর উচ্চ চিন্তা করতে সমর্থ হইয়াছিলেন উপনিষদ হইতে তাহার প্রকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় । 
   
🔥 ঈশোপনিষদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 কেনোপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক )
🔥 প্রশ্নোপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 মাণ্ডুক্য উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 মুণ্ডক উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 ঐতরেয় উপনিষদ ( ঋগ্বেদ ভিত্তিক )
🔥 তৈত্তরীয় উপনিষদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 ছান্দোগ্য উপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক )
🔥 বৃহদারণ্যক উপনিষপদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )

👉* দর্শন শাস্ত্র : 

🔥সাংখ্য দর্শন 
🔥 ন্যায় দর্শন 
🔥 বৈশেষিক দর্শন 
🔥 মীমাংসা দর্শন 
🔥 যোগ দর্শন 
🔥 বেদান্ত দর্শন 

👉* নীতি শাস্ত্র  : 

🔥 বিদূর নীতি 
🔥 চাণক্য নীতি 
🔥 শুক্র নীতি
🔥 ভর্তৃহরি নীতি 





Wednesday, June 10, 2020

ধর্ম কাকে বলে ও ধর্মের লক্ষণ গুলি কি কি ?




যাহার স্বরূপ ঈশ্বর আজ্ঞার যথাবৎ প্রতিপালন এবং পক্ষপাতরহিত হইয়া ন্যায় অনুসারে সকলের হিত সাধন করা, যাহা প্রত্যক্ষাদি প্রমাণ দ্বারা সুপরিক্ষিত এবং বেদোক্ত হওয়ায় সর্ব মানবের পক্ষে একমাত্র মান্য তাঁহাকে ধর্ম বলে । 

পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী বলছেন - "ধারয়তি লোকম" যা লোককে ধারণ করে তাহাকে ধর্ম বলা হয় । যাহার দ্বারা গ্রাম, নগর, দেশ, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয় কেবল ইহাই নয়, অপিতু সম্পূর্ণ বিশ্বের সকল প্রাণী বর্গের জন্য যাহা কল্যাণকারী, মঙ্গলকারী হইবে, যাহা সংরক্ষক, সংবর্দ্ধক হইবে তাহাকে ধর্ম বলে । 

গীতার আলোকে ধর্ম হচ্ছে -
সরলতা, দান, অহিংসা, সত্যবাদিতা, সমস্ত জীবে দয়া, মৃদুতা, লজ্জা, তেজ, ক্ষমা, শান্তি, লোভহীনতা, ধৈর্য, দক্ষতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান মঙ্গলজনক ইত্যাদি এই গুলা হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ এবং এই গুন গুলা যাদের মধ্যে বিদ্যমান তাঁরাই প্রকৃত ধার্মিক । 

মনুসংহিতা মতে , সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, শুদ্ধ বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য এবং ক্রোধ হীনতা এ দশটি ধর্মের লক্ষণ । অর্থাৎ ধর্ম মনুষ্য মাত্র সকলের জন্য । যার মধ্যে ধর্মের এই গুণ গুলা নাই সে মানুষ নয় । সে জন্য বলে "ধর্মহীন মানুষ পশুর সমান" । মানুষ ধর্মকে কখনোও পরিবর্তন করতে পারে না । মানুষ যেটাকে পরিবর্তন করতে পারে সেটা হল "সম্প্রদায়"। ধর্মের কাজ হচ্ছে মানুষে মানুষে প্রীতি স্থাপন করা , কিন্তু যা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে সেটা কখনোই ধর্ম নয় , সেটা হচ্ছে "মতবাদ" এবং "সম্প্রদায়"।