WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Showing posts with label পুরাণ. Show all posts
Showing posts with label পুরাণ. Show all posts

Wednesday, July 8, 2020

অষ্টাদশ পুরাণ ধূর্ত কপট দ্বারা রচিত

🔥 পুরান কাল্পনিক গ্রন্থ কপট ব্যক্তিদের দ্বারা রচিত  🔥
____________________________________________________
                                         


কিছু কপট ধূর্ত দালাল আছে যারা ১৮ টি পুরান ব্যাসদেব রচিত বলে চালাচ্ছে । তারা আরও বলেন যে - ব্যাসের বচন প্রমান  বলে গ্রহণ করা উচিৎ । ইতিহাস মহাভারত এবং ১৮ পুরানের সাহায্যে বেদার্থ পড়িবে ও পড়াবে । কেন না ইতিহাস ও পুরান বেদার্থের অনুকূল । পিতৃ কর্মে পুরান ( খিল অর্থাৎ ) হরি বংশ কথা শ্রবণ করবে । ইতিহাস ও পুরান পঞ্চম বেদ নামে প্রসিদ্ধ । পুরান-বিদ্যা বেদার্থজ্ঞাপক বলে বেদ । এই সমস্ত আরো বহু কথা বলে পুরান সমূহে কাল্পনিক মূর্ত্তিপূজা ও তীর্থের প্রামাণিকতা সিদ্ধ করতে চায় । কারণ পুরানে মূর্তি পূজা ও তীর্থের বিধান আছে ।

শঙ্কা সমাধান..........................................................................✍️

ব্যাসদেব ১৮ টি পুরানের রচয়িতা হলে পুরান গুলো একে অপরের বিরোধী হতো না আর এতো অলীক গল্পও থাকতো না । এই সকল পুরানের সকল কথাই মিথ্যা ও কাল্পনিক আজ আমি সে বিষয়েই আলোচনা করবো । সবার প্রথমেই বেদ থেকে একটা মন্ত্র উল্লেখ করবো যা থেকে জানা যাবে এক ঈশ্বরের বহু নাম আছে এবং তা ঈশ্বরের কর্ম ও গুণ অনুসারে জ্ঞানী বিদ্বানরা দিয়েছেন ।

"ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ"

------------------------------------------------ 🔥 ঋগ্বেদ. ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : "এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র , মিত্র , বরুণ , অগ্নি , দিব্য , সুপর্ণ , গরুৎমান , যম , মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন"। শুধু এগুলিই না , এই রকম আরো অনেক নাম আছে । যেমন - শিব , বিষ্ণু , মহাদেব , গণেশ , লক্ষী , ইন্দ্র , নারায়ণ  প্রভৃতি । ঈশ্বরের অনেক নামের মধ্যে থেকে  কয়েকটা নাম উল্লেখ করে জানাবো কোন নাম এবং কেন ঈশ্বরের জন্য সিদ্ধ হয়েছে ।

"শিব" - যিনি কল্যাণ স্বরূপ ও কল্যাণকারী এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "শিব"।

"বিষ্ণু" - যিনি চর এবং অচর রূপ জগতে ব্যাপক বলে পরমাত্মার নাম "বিষ্ণু"।

"মহাদেব" - যিনি মহান দেবগণেরও দেব , অর্থাৎ বিদ্বানদেরও বিদ্বান , সূর্য্যাদি পদার্থ সমূহের প্রকাশক , এই জন্য সেই পরমাত্মার নাম "মহাদেব"।

"ইন্দ্র" - যিনি নিখিল ঐশ্বর্য্যশালী , এজন্য পরমাত্মার নাম "ইন্দ্র"।

"নারায়ণ" -জল এবং জীবগণের নাম 'নারা' সেই অয়ন অর্থাৎ নিবাস স্থান যাহার । অতএব সর্ব জীবে ব্যাপক পরমাত্মার নাম "নারায়ণ"।

"ব্র্হ্মা" - যিনি সম্পূর্ণ জগৎ রচনা করে বিস্তৃত করেন, এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম "ব্রহ্মা"।

"গণেশ" বা "গণপতি" - যিনি প্রকৃত্যাদি জড় এবং সর্ব জীবাখ্য-পদার্থ-সমূহের পালন কর্তা , এই কারণে পরমেশ্বরের নাম "গণেশ" বা "গণপতি"।

এই ভাবে পরমেশ্বরের আরোও বহু নামের উল্লেখ পাওয়া যায় পবিত্র বেদ থেকে । এই নতুন গ্রন্থ গুলি যে পুরাণ নয় তা ক্রমশ প্রকাশ পাবে আমার পরের লেখা গুলি থেকে । আর এই নতুন গ্রন্থ গুলির রচয়িতা যে মহর্ষি বেদব্যাস নন তাও প্রমাণ করা হবে ।

 👉 আমরা আগে জানবো পুরাণ কি ?

জগতের উৎপত্তি বিষয় যে গ্রন্থে বর্ণনা করা আছে সেই গ্রন্থকে  পুরাণ বলা হয় । ঐতরেয় , শতপথ , সাম এবং গোপথ ব্রাহ্মণ গ্রন্থেরই "ইতিহাস" "পুরান" "কল্প" "গাথা" এবং "নারাশংসী"
এই পাঁচটি নাম । বেদার্থ বোধের জন্য এই গ্রন্থ গুলোর জ্ঞান থাকা আবশ্যক । পরে নিচের দিকে গিয়ে এই বিষয়গুলো আরো বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হবে ।

তাহলে পুরাণ গ্রন্থে যখন সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণিত আছে তখন দেখে নেবো বর্তমান প্রচলিত পুরাণ গ্রন্থে উৎপত্তি বিষয়ে কিভাবে বর্ণনা করা আছে ।
শুরুতেই বলেছি এক ঈশ্বরের একাধিক নাম আছে । আর ধূর্ত কপট গুলো পরমেশ্বরের সেই একাধিক নাম গুলি দিয়ে একেকটা নামের একেকটা কাল্পনিক চরিত্র নির্মাণ করেছে তাদের এই গ্রন্থ গুলিতে । আর তাদের আকার দিয়েছে কিছুটা  মানুষ কিছুটা পশু আবার কারোর দেহ মানুষও না আবার পশুও না এক ধরণের  বিকলাঙ্গ ।

যেমন দেখুন , নারায়ণকে বানিয়েছে মানুষের আকার দিয়ে কিন্তু তাঁর ৪ টি হাত , গণেশের দেহটাও মানুষের আকারে কিন্তু মাথাটা হস্তির । আবার ব্রহ্মার একটি দেহে ৪ টি মাথা যুক্ত করেছেন । দূর্গাকে মানুষের আকৃতি দিয়ে ১০ টা হাত করে দিয়েছে ।  কালীকে তো আবার অনেক হাতের সাথে উলঙ্গ অর্থাৎ বিবস্ত্র করে দিয়েছে এই লম্পট গুলো । এদের মধ্যে আবার কিছু আছে যারা নেশা করে , শুধু এদের পূজা হয় না কেউ কেউ আবার এদের লিঙ্গকেও পূজা করে । এখন আপনারা বলুন যে বাস্তবে এমন কিছু আদৌ সম্ভব ?

আর এই গ্রন্থের কাহিনীতে যদি সম্পর্কের উল্লেখ করা হয় তবে দেখা যাবে ভাই বোনকে বিবাহ করছে , পিতা কন্যাকে বিবাহ করছেন , আবার কারুর চরিত্রে বহু বিবাহ দেখানো হয়েছে , আবার কারুর একটা বিবাহ কিন্তু বহু নারীর সাথে সঙ্গম করছেন । এই সব কাহিনী লিখতে গ্রন্থের মধ্যে যে ভাষা গুলো প্রয়োগ করেছেন তা বাজারের নিষিদ্ধ বই গুলোতেও এতো খারাপ ভাষা ব্যবহার করা হয়নি । এই ভাষা গুলো কোনো সভ্য সমাজে উচ্চারণ করা যায় না ।

এই গ্রন্থ গুলির প্রতিটা তে আলাদা আলাদা সৃষ্টিকর্তা পাবেন । সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ যিনি ঈশ্বর তিঁনিই তো সৃষ্টি করেছেন এই মানুষ জগৎ প্রভৃতি ? শিবপুরাণ পড়লে জানা যাবে জগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও একমাত্র ঈশ্বর "শিব" । বিষ্ণুপুরাণ পড়লে জানা যাবে সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও একমাত্র ঈশ্বর হলেন "বিষ্ণু"। এই ভাবে ১৮ টি গ্রন্থে ( পুরানে ) ১৮ জন ঈশ্বরকে খুঁজে পাবেন । 😆😆

সনাতন ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদে ঈশ্বর হলেন নিরাকার —

স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম স্নাবিরং
শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধম্ কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোহর্থাম্ব্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।
..................................................✍️ যজুর্বেদ. ৪০/৮

বঙ্গানুবাদ : পরমাত্মা সর্বব্যাপক, সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্ররহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, রোগরহিত, জম্মরহিত, শুদ্ধ, নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি । তিনি তাহার শ্বাশত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন ।

পবিত্র বেদ থেকে আরও জানতে পারি যে ঈশ্বর এক -

ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ।।
.................................................✍️ অথর্ব্ববেদ. ১৩/৪/২

বঙ্গানুবাদ : পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না। যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন। এক ঈশ্বর চিন্তন জ্ঞানীর, বহু ঈশ্বরের ধারণা মুর্খের ।

আবার যজুর্বেদ ৩২/৩ মন্ত্রে বলছে "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" অর্থাৎ , তাঁর ( ঈশ্বরের ) কোনো প্রতিকৃতি বা মূর্তি নেই ।

👉 তাহলে এরা ঈশ্বরের দেহ পেলো কোথা থেকে ? 😆😆

উদাহরণ স্বরূপ দেবিভাগবতের থেকে নেওয়া একটি ঘটনার কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করছি ।
         
                                 

শ্রীপুরের অধিষ্ঠাত্রী "শ্রী" নাম্নী এক দেবীর উল্লেখ আছে তিঁনি সমগ্র জগৎ ব্ৰহ্মা বিষ্ণু মহাদেবকেও সৃষ্টি করেন । দেবীর যখন ইচ্ছা হইলো তখন তিঁনি তাঁহার হাত রগড়াইলেন , তাহাতে তাঁহার হাতে এক ফোস্কা পড়লো , সেই ফোস্কা থেকে "ব্ৰহ্মা" উৎপন্ন হল ।

দেবী ব্ৰহ্মা কে বললেন - "তুমি আমাকে বিবাহ কর"।
ব্ৰহ্মা শুনে বললেন - "তুমি যে আমার মা, আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারিনা"। তা শুনে দেবী ক্রোধিত হয়ে পুত্রকে ভস্ম করে দিলেন ।

তিঁনি পুনরায় আবার হাত রগড়াইয়া পূর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পুত্র উৎপন্ন করলেন এবং নাম রাখলেন "বিষ্ণু" । বিষ্ণুকেও সেইরূপ বলিলেন , বিষ্ণুও মানিলেন না , তাকেও তিঁনি ভস্ম করে দিলেন ।

দেবী পুনরায় তৃতীয় পুত্র উৎপন্ন করেন তাঁহার নাম "মহাদেব" রাখিলেন , এবং তাহাকেও অনুরূপভাবে বলিলেন - "তুমি আমাকে বিবাহ করো"।
তখন মহাদেব বললেন -"আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারি না, তুমি অন্য স্ত্রীদেহ ধারণ করো"।
তখন দেবী অন্য স্ত্রীদেহ ধারণ করলেন ।
তখন মহাদেব বললেন -"এই দুই স্থানে ভস্মের ন্যায় কি পড়ে আছে ?
তখন দেবী বললেন -"ইহারা তোমার দুই ভাই , ইহারা আমার আজ্ঞা পালন করেনি বলে আমি ইহাদের ভস্ম করে দিয়েছি ।
মহাদেব বললেন - "আমি একা কি করবো এদের জীবিত করো এবং আরো দুই জন স্ত্রীলোক উৎপন্ন করো । তিন জনের বিবাহ তিন জনের সাথে হবে" ।
দেবী তাহাই করলেন ।
এবং অনন্তর তিন জনের বিবাহ তিন জনের সহিত হল ।

😆 বাহঃ  ! 😆 বাহঃ  ! 😆 বাহঃ  ! 😆

মাতাকে বিবাহ করলো না কিন্তু ভগ্নিকে বিবাহ করলো ।
পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন রইলো ,
এগুলোকে কি আপনারা উচিৎ কার্য বলে মনে করেন ?🤔
নাকি আপনারা এমন কার্য কেউ করেন ?😆😆😆

পরে ইন্দ্রাদিকে উৎপন্ন করে ব্ৰহ্মা বিষ্ণু এবং ইন্দ্রকে তাঁহার পালকি বাহক ভৃত্য করলেন ।😆😆😆

অনুরূপ ভাবে শিবপুরাণে দেখুন - শিবকে পরমেশ্বর মানিয়া বিষ্ণু , ইন্দ্র , গণেশ এবং সূর্য্যাদিকে তাঁহার দাস করেছেন ।
বিষ্ণুপুরাণে দেখুন - বিষ্ণুকে পরমাত্মা শিব প্রভৃতিকে দাস করেছেন । গণেশখণ্ডে - গণেশকে ঈশ্বর এবং অবশিষ্ট সকলকে দাস করা হয়েছে ।

বলুনতো, এসব কথা যদি সমস্ত সম্প্রদায়ী লোকদের জন্য না হয় তবে কাদের জন্য ?

এই গ্রন্থ গুলি যদি এক জন ব্যক্তির রচনা হতো তবে কি এমন পরস্পর বিরুদ্ধ কথা থাকতো ? এবং বিদ্যান ব্যক্তির রচনা হলে এই সব কখনোই থাকতো না । এদের একটি কে সত্য বলে স্বীকার করলে অপরটি মিথ্যা হয় । আর দ্বিতীয়টিকে  সত্য বলে স্বীকার করলে তৃতীয়টি মিথ্যা । আবার তৃতীয়টিকে সত্য মানলে অন্য সব গুলো মিথ্যা হয় ।

শিবপুরাণ বিশ্বাসী শিব থেকে , বিষ্ণুপুরাণ বিশ্বাসী বিষ্ণু থেকে , দেবীপুরাণ বিশ্বাসী দেবী থেকে , গণেশখণ্ড বিশ্বাসীরা গণেশ থেকে , সূর্য্যপুরাণ বিশ্বাসীরা সূর্য্য থেকে , বায়ুপুরাণবাদী বায়ু থেকে সৃষ্টির উৎপত্তি ও প্রলয় বর্ণনা করে পুনরায় এক-এক যাহা জগতের কারণ রূপে লিখিত হয়েছে তাহার উৎপত্তি এক-এক হইতে লিখেছে ।

যদি তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় "যিনি জগতের উৎপত্তি-স্থিতি-প্রলয়কর্তা , তিঁনি উৎপন্ন হতে পারেন কি না ?
আর যিনি উৎপন্ন তিঁনি কখনো সৃষ্টির কারণ হতে পারে কি না ?  উত্তর দিতে পারবেন তারা ? 🤔🤔🤔

এদের সকলের শরীরের উৎপত্তিও ইহা হইতেই হইয়া থাকিবে । যাহারা নিজেরাই সৃষ্ট পদার্থ এবং পরিচ্ছন্ন তাঁহারা জগতের সৃষ্টিকর্তা কি ভাবে হতে পারে ? আর ( জগতের ) সৃষ্টি ও বিলক্ষণ-বিলক্ষণ প্রকারে মানা হয়েছে যা সর্বদা অসম্ভব ।

এইরূপ মনগড়া লম্বা চওড়া আষাঢ়ে গপ্পো রচিত হয়েছে
তাদের যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে দেবীভাগবতে "দেবীর শরীর আর শ্রীপুরের সৃষ্টিকর্তা কে ? দেবীর মাতা পিতা কারা ছিলেন ?  যদি বলেন যে দেবী অনাদি , যদি তাই হয় , তবে  সংযোজক বস্তু অনাদি হতে পারে কখনো ? 😆😆😆

বেদব্যাস এই সকল গ্রন্থের রচয়িতা নন ।

.......................................................................✍️ ১ম প্রমাণ

রাজা বিক্রমাদিত্যের ৫০০ বছর পরে ভোজ রাজা হলেন । রাজা ভোজের রাজ্যে কেউ কেউ ব্যাসদেবের নামে মার্কণ্ডেয় পুরান ও শিব পুরান রচনা করেছিল । সে বৃত্তান্ত জানতে পেরে রাজা ভোজ সেই পন্ডিতদের হস্তছেদন করে দণ্ড দান করেছিলেন । এবং তাদের বলেছিলেন যে - "যে কেউ কাব্য গ্রন্থাদি রচনা করবেন তিনি নিজের নামেই করবেন । কোনো ঋষি মুনি দের নামে করবেন না ।

তথ্য সূত্র : রাজা ভোজ প্রণীত "সঞ্জীবনী" নামক ইতিহাস ।

........................................................................✍️ ২য় প্রমাণ

শারীরিক সূত্র , যোগশাস্ত্র , ভাষ্য প্রভৃতি ব্যাসোক্ত গ্রন্থ সমূহ চর্চা করলে জানা যায় যে , ব্যাসদেব মহান , বিদ্বান , সত্যবাদী , ধার্মিক যোগী ছিলেন । তিনি এই রূপ মিথ্যা কখনোও লেখেনি । লিখেছেন কিছু ধূর্ত কপট এবং লম্পটরা । এর থেকে বোঝা যায় যে , যে সকল সম্প্রদায়ী লোকেরা পরস্পর বিরোধী ভাগবতাদি নবীন কপোল কল্পিত গ্রন্থ সমূহ রচনা করেছে ।

..........................................................................✍️ ৩য় প্রমাণ

বেদ শাস্ত্রের বিরুদ্ধে অসত্য কথা লেখা ব্যাসদেবের ন্যায় বিদ্বান পুরুষের কাজ নয় । তিঁনি বেদজ্ঞ বিদ্বান পুরুষ ছিলেন তাঁর প্রমাণ স্বরূপ - ব্যাসদেবের জন্ম নাম ছিল "কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন" । ব্যাসদেব বেদ অধ্যয়ন-অধ্যাপন দ্বারা বেদার্থ বিস্তার করেছিলেন বলে তাঁর নাম হয়েছিল "বেদব্যাস" ।

ঐতরেয় , শতপথ , সাম এবং গোপথ ব্রাহ্মণ গ্রন্থেরই "ইতিহাস" "পুরান" "কল্প" "গাথা" এবং "নারাশংসী"
এই পাঁচটি নাম ।
ইতিহাস     = যেমন জনক - যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদ ।
পুরান        = জগতের উৎপত্তি প্রভৃতি বর্ণনা
কল্প           = বৈদিক শব্দ সমূহের সামর্থ - বর্ণন এবং অর্থ
                    নিরুপন করা ।
গাথা          = কাহারও দৃষ্টান্ত দাষ্টান্তরূপ কথা প্রসঙ্গ বলা ।
নারাশংসী  = মনুষ্যদের প্রশংসনীয় অথবা অপ্রশংসনীয়
                    কর্মের কথন করা ।

এগুলো থেকেই বেদার্থের বোধ হয়ে থাকে ।
এবং যখন ব্যাসদেবের জন্ম হয়নি , সে সময়েও বেদার্থের অধ্যায়ন-অধ্যাপনা এবং শ্রবণ-শ্রাবন হতো ।

সুতরাং সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ব্রাহ্মণগ্রন্থ সমূহে সকল সৃষ্টির ঘটনা  আছে । এই সকল নতুন কাল্পনিক কোনো গ্রন্থে থাকতে পারে না । এই সকল গ্রন্থ পরস্পর বিরোধী । তাই এই সকল গ্রন্থ সনাতন ধর্ম বিরুদ্ধ গ্রন্থ । এবং যারা এই গ্রন্থ মেনে চলছেন  তারা ধর্ম বিরোধিতার ও নাস্তিকতার পরিচয় দিচ্ছেন সর্বদা ।


                       🙏  ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি  🙏

Friday, June 19, 2020

ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদ ও পুরাণ


ব্রহ্মবৈবর্ত নামে একটি পুরাণ রয়েছে। এই পুরাণটি রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। রাধা-কৃষ্ণের নানা প্রকার লীলার বর্ণনা করাই এই পুরাণের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণকে ভ্রষ্ট  ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম পৃষ্ঠপোষক রূপে দেখা যায়। ব্রহ্মবৈবর্তের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে একটি কাহিনী আছে।  কৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ একবার ইন্দ্রযজ্ঞের আয়োজন করছিলেন। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কৃষ্ণ সেই ইন্দ্রযজ্ঞের বিরোধীতা করতে থাকেন। এই বিরোধীতা করার সময়  কৃষ্ণের মুখ থেকে কিছু কথা বেরিয়ে আসে, যে কথাগুলো আসলে ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণদের ব্রাহ্মণ্যবাদী ইউটোপিয়ার প্রধান বক্তব্য। ব্রাহ্মণেরা তাদের রচিত নানান শাস্ত্রে নিজেদের স্বার্থে জাতপাত তৈরি করে সমাজের নানা স্তরের মানুষদের শোষণ করেছে, ফায়দা লুটেছে। তারা হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুসমাজের মগডালে বসে ছড়ি ঘুরিয়েছে এবং সুযোগ পেলেই নিজেদের দেবতা বলে ঘোষণা করেছে।  
যাইহোক,  কৃষ্ণ আসলে কি বলেছিলেন তা শোনা যাক। কৃষ্ণ বলেন-
.
“ বেদে বলা আছে ব্রাহ্মণেরা পৃথিবীর দেবতা। হে পিতা! দেবতার পূজা করার চাইতে ব্রাহ্মণের পূজা করা সুপ্রশস্ত।“ ২১/ ৫৪
.
জনার্দনের রূপ ধরে ব্রাহ্মণেরা নৈবদ্য গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণ সন্তুষ্ট হলে সকল দেবতা সন্তুষ্ট হয়। ২১/৫৫
.
যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণের অর্চনা করে তার কাছে দেবপূজা মূল্যহীন। ব্রাহ্মণদের পূজা করলেই সমস্ত দেবতাদের পূজা করা হয়। ২১/৫৬
.
দেবতাদের নৈবদ্য দেওয়ার পর যদি ব্রাহ্মণদেরও নৈবদ্য না দেওয়া হয়  তবে সেই নৈবদ্য ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং সেই পূজা নিষ্ফল হয়ে যায়। ২১/৫৭  
.
যে ব্রাহ্মণদের নৈবদ্য দান করে সে সীমাহীন ফল লাভ করে এবং দেবতারা তুষ্ট হয়ে তার গৃহে বাস করেন। ২১/৫৮
.
যদি কোনো মূঢ় ব্যক্তি ব্রাহ্মণদের নৈবদ্য দান না  করে কেবল দেবতাকে নৈবদ্য দান করে অথবা নিজে তা ভক্ষণ করে তাহলে বলা যায় সে দেবতাদের ধন চুরি করছে, যার ফলস্বরূপ সে নরকে গমন করবে। ২১/৫৯  
.
কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি যদি দেবতাদের নৈবদ্য না দিয়ে ব্রাহ্মণের তা প্রদান করেন, তাহলে ব্রাহ্মণেরা সেই নৈবদ্য ভক্ষণ করলেই দেবতারাও তুষ্ট হন এবং তারা স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন। ২১/৬১
.
তাই সবরকমভাবেই ব্রাহ্মণদের অর্চনা করা উচিত কারণ তাদের সেবা করার মাধ্যমেই ইহলোক এবং পরলোকে প্রশস্ত ফল লাভ করা যায়। ২১/৬২
.
জপ,তপ, পূজা, যজ্ঞ, দান, মহোৎসব এইসকল কর্মের সমাপ্তি হয় ব্রাহ্মণদের তুষ্টি এবং দক্ষিণার মাধ্যমে। ২১/৬৩
.
ব্রাহ্মণের শরীরে সকল দেবতা বাস করেন। ব্রাহ্মণের পায়ে সকল তীর্থ বিরাজ করে এবং তার পদধূলিতে সকল পুণ্য বিরাজ করে।  ২১/৬৪
.
যে জল দ্বারা ব্রাহ্মণের পা ধৌত করা হয়, তাতে সকল তীর্থস্থান বিরাজ করে। সেই জলের স্পর্শে সকল তীর্থে স্নানের ফল লাভ হয়। ২১/ ৬৫
.
হে বল্লভ, কেউ যদি ভক্তিভরে ব্রাহ্মণের সেই জল গ্রহণ করে, তবে তার সব রোগ দূর হয়ে যায়। সে নিঃসন্দেহে তার সাত জন্মে করা সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। ২১/৬৬
.
পঞ্চবিধ পাপ করার পরও যে ব্রাহ্মণের কাছে নত হয় , সে সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হয়ে যায়, যেমনি  তীর্থস্থানে স্নান করেও  সে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। ২১/৬৭
.
ব্রাহ্মণের স্পর্শেই পাপী পাপমুক্ত হয়ে যায় এবং ব্রাহ্মণের দর্শনেই সব পাপ দূর হয়ে যায়। এটাই বেদের সিদ্ধান্ত। ২১/৬৮
.
বিদ্বান এবং মূর্খ সকল ব্রাহ্মণেরা  বিষ্ণুর বিগ্রহ স্বরূপ। যেসকল ব্রাহ্মণেরা বিষ্ণুর সেবা করে, তারা তার প্রাণাধিকপ্রিয়। হরি ভক্ত ব্রাহ্মণদের প্রভাব দুর্লভ, এটা শ্রুতির মত। কোনো তীর্থস্থানেও যদি কোনো পাপ করা হয়, তবে ব্রাহ্মণের পদধূলিতে তা দূর হয়ে যায়। তাদের আলিঙ্গন, তাদের সুমধুর বাক্য, তাদের দর্শন, তাদের স্পর্শ মানুষকে সকল পাপ হতে মুক্ত করে। ২১/৬৯-৭২
.
সকল তীর্থ ভ্রমণ করে, তাতে স্নান করে যে পুণ্য অর্জিত হয় , তা বিষ্ণুভক্ত ব্রাহ্মণের দর্শনমাত্রেই অর্জিত হয়। ২১/৭৩
.
হে গোপেন্দ্র,এসব দ্রব্য ব্রাহ্মণদের যারা না দেয়, তারা ভবিষ্যতে ভস্মীভূত হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। ২১/৭৮”
.
এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ আর দেবতাদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই, বরং অনেক স্থানে দেখা যায়, ব্রাহ্মণের স্থান দেবতাদেরও ঊর্ধ্বে।  এই কথাগুলো শোনার পরও অনেকে হয়তো এইসব কথা এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনঃ  ব্রাহ্মণেরা যেহেতু বিদ্বান ছিল, সমাজের মস্তিষ্ক ছিল, তাই তাদের সম্মানার্থে তাদের দেবতার সমান করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি ধূলিসাৎ হয়ে যায় যখন কৃষ্ণ বললেন, ‘বিদ্বান এবং মূর্খ সকল ব্রাহ্মণেরা  বিষ্ণুর বিগ্রহ স্বরূপ’। তখন স্পষ্টভাবে উপলব্ধি হয়, এই ব্রাহ্মণ্যবাদ ভ্রষ্ট এবং কৃষ্ণ এই ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম পৃষ্ঠপোষক! মনে হয়। ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদের হাতে গড়া নানান কাল্পনিক চরিত্র মাত্র...
.

তথ্যসূত্রঃ
.
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড/২১ অধ্যায় ; ইংরেজি অনুবাদকঃ Shanti Lal Nagar; সম্পাদকঃ আচার্য রমেশ চতুর্বেদী; Parimal Publications Delhi
  আরো পড়ুনঃ    👉      পুরাণের নোংরামি