সনাতন ধর্মের বৈদিক গ্রন্থ গুলো কি কি ?
আজ আমি চেষ্টা করছি ক্ষুদ্র পরিসরে জানানোর ।
আমাদের সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি বেদের ( চার বেদ ) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সাদৃশ্যপূর্ণ এবং বেদের ব্যাখ্যা করার জন্য বিবেচিত গ্রন্থ সকলকে বৈদিক ধর্মগ্রন্থ বলা হয়
মনে রাখবেন ,
এখানে বেদ হচ্ছে প্রামাণ্য গ্রন্থ ।
যেকোনো গ্রন্থেরই কোনো বাণী বেদ বিরোধী হলে তা বর্জনীয়। সমগ্র বেদ / শ্রুতি শাস্ত্র / সংহিতা ৪ ভাগে সংকলিত
১ ) ঋগ্বেদ
২ ) যজুর্ব্বেদ
৩ ) সামবেদ
৪ ) অথর্ব্ববেদ
পরবর্তীতে আসে স্মৃতি শাস্ত্র সমূহ
👉* উপবেদ ৫ টি
👉* বেদাঙ্গ ৬ টি
👉* ব্রাহ্মণ ৬ টি
👉* আরণ্যক ৬ টি
👉* সূত্র ৯ টি
👉* স্মৃতি ২ টি
👉* দর্শন ৬ টি
👉* উপনিষদ ১০ টি
( যদিও ১০৮ টি, কিন্তু মূল ১০ টি থেকে ১২ টি ধরা হয় )
👉* ইতিহাস ( পুরান )
👉* নীতি ৪ টি
আসুন পর্যায়ক্রমিক ভাবে এসব গ্রন্থে আলোচিত
বিষয় বস্তু নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলি -
১ ) ঋগ্বেদ : প্রধান আলোচ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে- পরমাত্মা, আত্মা ও প্রকৃতি। এখানে বর্ণিত হয়েছে ঈশ্বরের হাজারো গুণাগুণ, বৈশিষ্ঠ্য । ইহলৌকিক ও পরলৌকিক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান । তাছাড়া আছে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, গ্রহবিজ্ঞান, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি । আবার বস্তুর (ক্ষেত্রবিশেষে ) ফিজিকাল, মেটাফিজিকাল এবং স্পিরিচ্যুআল ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করে ।
ঋগ্বেদে ১০ টি মন্ডল, ১০২৮ টি সুক্ত এবং ১০৫৮১ টি মন্ত্র রয়েছে ।
২ ) যজুর্ব্বেদ : মানুষের মনোজাগতিক বিভিন্ন দিক এবং আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে যজুর্বেদ । মানুষের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করে তাকে জীবনের পরম উদ্দেশ্য মোক্ষ লাভের জন্য করনীয় কার্যবিধি আলোচিত হয়েছে ।
যজুর্ব্বেদে ৪০ টি অধ্যায় এবং ১৯৭৫ টি মন্ত্র রয়েছে ।
৩ ) সামবেদ : প্রধানত জীবন-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি এবং মোক্ষ লাভের জন্য আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকর্মের কথা বলা আছে । সৃষ্টির বর্ণনা, ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণের বর্ণনা এবং আধ্যাতিক গুণাবলী অর্জনের কথা বলা হয়েছে এতে ।
সামবেদে ২ টি ভাগ - ক ) পূর্বাচিক , খ ) উত্তরাচিক
মোট ১৮৭৪ টি মন্ত্র রয়েছে ।
৪ ) অথর্ব্ববেদ : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্র, গণিত, জ্যোতিষ বিদ্যা, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব, চিকিৎসা বিদ্যা ( বিশেষ করে শল্য এবং ভেষজ চিকিৎসা ), কৃষি, কারিগরী, যুদ্ধ বিদ্যা, উড্ডয়ন যান বিদ্যা, রাজ্নীতি, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহ । ( ইতিহাস ব্যাতীত ) ।
অথর্ববেদকে ব্রহ্মবেদ-ও বলা হয় ( একেশ্বরবাদ ) ।
অথর্ব্ববেদের ২০ টি কান্ড, ১১১ টি অনুবাক, ৭৩১ টি সুক্ত, ৫৯৭৭ টি মন্ত্র রয়েছে ।
👉* উপবেদ :
🔥 আয়ুর্ব্বেদ ( জীবন এবং চিকিৎসা )
🔥 ধনুর্ব্বেদ ( সমরবিদ্যা অথবা যুদ্ধবিদ্যা, রণকৌশল, আধ্যাত্মিকতা, কর্ম, কর্তব্য, নাগরিক, কূটনীতি বিদ্যা )
🔥 গন্ধর্বব্বেদ ( সংগীত ও প্রাকৃতিক সুর )
🔥 শিল্প বিদ্যা ( স্থাপত্য বিষয়ক বিদ্যা )
🔥 অর্থ বিদ্যা ( অর্থনীতি, রাজনীতি )
👉* বেদাঙ্গ :
বেদ শুদ্ধ ভাবে বুঝা ও ব্যাখ্যা করার জন্য বেদাঙ্গ বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিৎ নয়তো অর্থ সঠিক ভাবে অনুদিত হবে না ।
বেদাঙ্গ সমূহ হল -
🔥 শিক্ষা
🔥 কল্প
🔥 ব্যাকরণ
🔥 নিরুক্ত ( শব্দ তত্ত্ব )
🔥 ছন্দ
🔥 জ্যোতিষ ( গণিত এবং গ্রহ বিজ্ঞান )
শাখা : বেদের ব্যাখ্যা, বেদ সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য বৈদিক যুগে ১১২৭ টি শাখা ছিল । ঋগ্বেদের ২০ টা , যজুর্ব্বেদে ১০০ টা , সামবেদে ১০০০ টা, অথর্ব্ববেদে ৭ টা ।
দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে বর্তমানে মাত্র ২০ টি মতো শাখা আছে ।
👉* ব্রাহ্মণ গ্রন্থ :
প্রত্যেকটি ব্রাহ্মণ চার বেদের কোনো না কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত এবং বেদের সংশ্লিষ্ট শাখার অংশ । ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে ।
🔥 ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ( ঋগ্বেদে সংযুক্ত )
🔥 কৌষীতকি বা শাঙ্খায়ন ব্রাহ্মণ ( ঋগ্বেদে সংযুক্ত )
🔥 শতপথ ব্রাহ্মণ ( শুক্লযজুর্ব্বেদে সংযুক্ত )
🔥 মহাতাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ( সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 ষড়বিংশ ব্রাহ্মণ ( সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 গোপথ ব্রাহ্মণ ( অথর্ব্ববেদে সংযুক্ত )
🔥 ছান্দোগ্য বা জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ (সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ( কৃষ্ণযজুর্ব্বেদে সংযুক্ত )
🔥গোপথ ব্রাহ্মণ ( অথর্ব্ববেদে সংযুক্ত )
👉* আরণ্যক :
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের পরিশিষ্ট ভাগ আরণ্যক নামে প্রসিদ্ধ ।
সংসার পরিত্যাগ করিয়া ব্রহ্মচর্য অবস্থায় অরণ্যের মধ্যে অবস্থান করিয়া আর্য ঋষিগণ এই শাস্ত্র অধ্যায়ন করিতেন বলিয়া ইহা আরণ্যক নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে । এটা ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহের সারাংশ বলা যায় ব্রাহ্মণ গ্রন্থ গুলো থেকে নিংড়ানো রস । মহাভারতে লিখিত আছে -
"অরণ্যকং চ বেদেভ্য ঔষধিভ্যহমৃতং
যথা হৃদনামুদধি শ্রেষ্ঠো গৌর্বরিষ্ঠা চতুষ্পাদম"
- ২৫৬ অধ্যায় (আদি পর্ব )
অর্থাৎ ঔষধির মধ্যে অমৃত হৃদের মধ্যে সমুদ্র চতুষ্পদের মধ্যে গাভী যেরূপ শ্রেষ্ঠ, বেদের মধ্যে আরণ্যক তেমন শ্রেষ্ঠ ।
👉* সূত্র :
🔥 গৃহ সূত্র
🔥 ধর্ম সূত্র
🔥 শ্রোতা সূত্র
🔥 আশবালায়ন সূত্র
🔥 গোভিল সূত্র
🔥 প্রসাকর সূত্র
🔥 কোশিতকি সূত্র
🔥 কাত্যায়ন সূত্র
🔥 বোধায়ন সূত্র
👉* স্মৃতি :
যা মনে রাখা হয় তাহাই স্মৃতি ।
🔥 মনুস্মৃতি
( বৈবস্বত মনু কর্তৃক রচিত । ইহাতে মোট ১২ টি অধ্যায় আছে )
🔥 যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি
( ঋষি যাজ্ঞবাল্ক কর্তৃক রচিত । ইহাতে ৩টি অধ্যায় আছে )
👉* উপনিষদ :
উপ পূর্ব্বক নি পূর্ব্বক বধ-গতি ও অবসাদনার্থ সদ ধাতুর প্রতি কিপ প্রত্যয় দ্বারা উপনিষদ শব্দটি সিদ্ধ হয়েছে ।
যে বিদ্যার দ্বারা জ্ঞানী গণের গর্ভ জন্ম ও জড়া মৃত্যু দোষ সমূহ নিশ্চয়রূপে অবসন্ন হয় সেই বিদ্যাই উপনিষদ । উপনিষদ ব্রহ্ম জ্ঞানের প্রধান আকর এবং ব্রহ্ম বিদ্যাই উপনিষদের একমাত্র প্রতিপাদ্য বিষয় । আর্য ঋষিগণ প্রাচীন কালে দর্শন ও ঈশ্বর তত্ত্ব সম্বন্ধে যে কতো দূর উচ্চ চিন্তা করতে সমর্থ হইয়াছিলেন উপনিষদ হইতে তাহার প্রকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় ।
🔥 ঈশোপনিষদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 কেনোপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক )
🔥 প্রশ্নোপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 মাণ্ডুক্য উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 মুণ্ডক উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 ঐতরেয় উপনিষদ ( ঋগ্বেদ ভিত্তিক )
🔥 তৈত্তরীয় উপনিষদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 ছান্দোগ্য উপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক )
🔥 বৃহদারণ্যক উপনিষপদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
👉* দর্শন শাস্ত্র :
🔥সাংখ্য দর্শন
🔥 ন্যায় দর্শন
🔥 বৈশেষিক দর্শন
🔥 মীমাংসা দর্শন
🔥 যোগ দর্শন
🔥 বেদান্ত দর্শন
👉* নীতি শাস্ত্র :
🔥 বিদূর নীতি
🔥 চাণক্য নীতি
🔥 শুক্র নীতি
🔥 ভর্তৃহরি নীতি
No comments:
Post a Comment