WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Saturday, June 20, 2020

বেদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়







প্রথম পর্ব :
-------------------------

স্তুতা ময়া বরদা বেদমাতা প্রচোদয়ন্তাং পাবমানী দ্বিজানাম ।
আয়ু প্রাণং প্রজাং পশুং কীর্তিং দ্রাবিণং ব্রহ্ম বর্চসম্ ।।
মহ্যং দত্ত্বা ব্রজত ব্রহ্মলোকম ।।

ভক্তের উক্তি :
মনের উৎসাহ দাত্রী , দ্বিজদের পবিত্রকারিণী , শ্রেষ্ঠ জ্ঞান দাত্রী বেদমাতাকে আমি অধ্যায়ন করিয়াছি ।

পরমেশ্বরের উক্তি : 
আয়ু , প্রান , প্রজা , পশু , কীর্তি , ব্রহ্মতেজ
আমাতে অর্পণ করিয়া তুমি মুক্তি প্রাপ্ত হও ।।

🔥 অথর্ববেদ - ১৯/৭১/১ মন্ত্র.....................................................✍️

"বেদ" শব্দটি 'বিদ্' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন । বিদ্' ধাতুর অর্থ - 'জানা' ।  সেজন্য বেদ শব্দের ধাতুগত অর্থ - জ্ঞান বা বিদ্যা । বিদ্যা দুই প্রকার পরা ও অপরা । জগৎকারণ পরব্রহ্ম বিষয়ক অলৌকিক জ্ঞান - পরাবিদ্যা । আর জাগতিক বিষয় সম্বন্ধীয় যাবতীয় লৌকিক জ্ঞান অপরা বিদ্যা । বেদে পরা ও অপরা এই দুই বিদ্যাই উপস্থিত । সেইজন্য বেদকে সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডার বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে বেদের বেদত্ব পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা প্রকাশের জন্য । পরাবিদ্যাই শ্রেষ্ঠ বিদ্যা ।
"বিদ্' ধাতুর চারপ্রকার অর্থ হয় :

"বেত্তি বেদ বিদ জ্ঞানে"

"বিন্তে বিদ বিচারণে"

"বিদ্যতে বিদ সত্তায়ং"

"লাভে বিন্দতি বিন্দতে" 

এই চার প্রকার অর্থ হচ্ছে :

"জানা"

"বিচার করা"

"অবস্থান করা"

"লাভ করা"

যা পাঠ করলে মানুষ সত্য বিদ্যা জানতে পারে , সত্যাসত্যের বিচার করতে পারে , প্রকৃত বিদ্বান হতে পারে এবং প্রকৃত শান্তি ও আনন্দ লাভ করা সম্ভব , তার নাম বেদ ।

👉 মহর্ষি ব্যাসদেব বেদকে চারভাগে করে ।
তাঁর নিজের শিষ্য পৈলকে "ঋগ্বেদ", বৈশম্পায়ন কে "যজুর্বেদ", জৈমিনিককে "সামবেদ" এবং সুমন্ত কে "অথর্ববেদ" প্রচারের জন্য নির্বাচন করেন । বেদ অপৌরুষেয় এবং নিত্য অর্থাৎ কোন পুরুষ বা মানুষের রচিত নয় । ঋগ্বেদে পুরুষ সূক্ত বলেন - বেদ পরমেশ্বরের রচিত নহে । শ্বাস প্রশ্বাসের । মত বেদমন্ত্র স্বতঃ নির্গত । এইজন্য বেদ নিত্য ও অপৌরুষেয় ।

👉 বেদের বিভিন্ন নাম শ্রুতি , ত্রয়ী , নিগম ইত্যাদি। 'শ্রু' ধাতুর অর্থ শ্রবণ করা , সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত যাতে মানুষ সমস্ত সত্যবিদ্যা শ্রবণ করতে পারে তাঁর নাম শ্রুতি । 
তাছাড়া বেদ পূর্বে গুরুশিষ্য পরম্পরাক্রমে যুগ যুগ ধরে শ্রুত হয়ে ঋষি সমাজে প্রচলিত ছিল বলে বেদের অপর নাম শ্রুতি । আর বেদমন্ত্র তিন শ্রেণীতে বিভক্ত - ঋক , যজু , সাম অর্থাৎ  পদ্য , গদ্য , গীতি । সেই জন্য বেদকে ত্রয়ী বলা হয় । আর নিগম শব্দের অর্থ নিশ্চিতরুপে গমন করানো । যে শাস্ত্র পাঠে সাধক কে নিশ্চিতরুপে পরমেশ্বরের নিকট গমন করায় বা নিয়ে যায় তাই নিগম বা বেদ ।



দ্বিতীয় পর্ব :
-------------------------

প্রতি বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত - মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ , মন্ত্রভাগের অপর নাম সংহিতা। এতে প্রধানত যাগ যজ্ঞাদি ক্রিয়ার বিধি নিষেধ , মন্ত্র ও অর্থবাদ প্রভৃতি বিষয়গুলি উল্লেখিত আছে আর সংহিতা ভাগে যে সব গূঢ় রহস্য প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত আছে , সেই সব অপ্রকাশিত অর্থ শ্রুতি নিজেই যে অংশে প্রকাশ করেছে , সেই অংশের নাম ব্রাহ্মণ । ব্রাহ্মণ ভাগে প্রধানত স্তোত্র , ইতিবৃত্ত , উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যা বিষয় উল্লেখ আছে । এই অংশ গুলি গদ্যে রচিত ।

👉 এই ব্রাহ্মণাংশের অংশবিশেষকে "আরণ্যক" বলে । কারন উহা বানপ্রস্থাশ্রমে অরণ্যবাসীদের পাঠ্য ছিল । বানপ্রস্থ অরণ্যবাসীদের পক্ষে যাগযজ্ঞ কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং উচ্চতর জ্ঞানলাভের জন্য তাদের হৃদয় ব্যাকুল হওয়ায় আত্মোপলবদ্ধির জন্য ধ্যান , জপ , প্রার্থনা , উপাসনা ছিল তাদের মুখ্য কাজ যাগ যজ্ঞ ছিল গার্হস্থ জীবনের প্রাধান কাজ । আরণ্যকও গদ্যে রচিত ।

👉 বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ অংশ হলো উপনিষদ । উপনিষদ ব্রহ্মবিদ্যাই বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করেছে । ব্রহ্মবিদ্যাই বেদের সারবস্তু , সেজন্য এর নাম বেদান্ত । অজ্ঞান নিবৃত্তি ও ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায় তাই বেদান্তের অপর নাম উপনিষৎ । উপনিষদের অর্থই ব্রহ্মবিদ্যা । সংহিতা ও ব্রাহ্মণ এই দুই উপনিষদের মধ্যে রয়েছে তাই তারা সংহিতোপনিষদ বা ব্রাহ্মণউপনিষদ নামেও উল্লেখিত হয়ে থাকে ।
বেদের এই চারটে ভাগ সংহিতা , ব্রাহ্মণ , আরণ্যক ও উপনিষদ এদের মধ্যে একটি ক্রমপর্যায় আছে । যেমন প্রথমে সংহিতা , তারপর ব্রাহ্মণ, তারপর আরণ্যক ও সর্বশেষ উপনিষৎ ।

👉 সমস্ত বেদকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় - কর্মকান্ড ও জ্ঞানকাণ্ড । এরমধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণে প্রধানত কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ।  আর আরণ্যক ও উপনিষদ জ্ঞানকাণ্ডেরর অন্তর্গত । এতে উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যার উল্লেখ আছে । কর্মকাণ্ড জীবকে অভ্যুদয় ধনরত্নাদি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং পারলৌকিক স্বর্গাদি ফল প্রদান করে । কিন্তু জ্ঞানকাণ্ড মানুষের চিত্তশুদ্ধি দ্বারা মুক্তি মোক্ষ দান করে ।কর্মকাণ্ড মানুষকে প্রবৃত্তি মার্গে আর জ্ঞানকাণ্ড মানুষকে নিবৃত্তি মার্গে চালনা করার প্রেরণা দিয়ে মানুষের জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে ।



তৃতীয় পর্ব :
-------------------------

বেদমন্ত্র গুলি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত পদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম ঋক গদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম যজু  এবং গানাত্মক মন্ত্রের নাম সাম । সেজন্য বেদের অপর এক নাম ত্রয়ী । ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহার্য এক এক শ্রেণীর মন্ত্রগুলিকে এক এক স্থানে বিভক্ত করে ঋক,যজু,সাম এই তিনটি বেদ গ্রন্থাকারে বিভক্ত করেছিলেন । আর যজ্ঞে ব্যবহার্য নয় অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি যে বেদের অন্তর্ভুক্ত করলেন তাকে অথর্ববেদ বলা হয় ।

পবিত্র বেদ অনাদি ও অনন্ত, এর জ্ঞানরাশি অনাদি অনন্ত ।
ঋগ্বেদের ১০/১৯০/৩ মন্ত্রে উল্লেখ আছে -
"অউম সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথা পূর্বমকল্পয়ৎ"
প্রত্যেক সৃষ্টির পূর্বে আর একটি সৃষ্টি ছিল ।
অতএব যেহেতু সৃষ্টি অনাদি , সুতরাং সৃষ্টির পূর্ববর্তী বেদও অনাদি ।

👉 বেদই সনাতনের ধর্ম , বেদই সনাতনের কর্ম , এক কথায় যিনি বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেন বর্তমানে তিনিই সনাতনী নামে অভিহিত হন । বেদ না মানলে তিনি সনাতন নহেন । বেদে সকল শ্রেণীর সকল হিন্দুর সর্বরকম উপাসনার সার সামগ্রী নিহিত আছে ।বৈদিক পরবর্তিকালে জগতে যত কিছু উপাসনা পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে সবই  বৈদিক উপাসনার অনুকৃত মাত্র । সেজন্য দেখিতে পাই বৈদিক ঋষিরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ তৃণ থেকে নীরাকার নির্গুণ পরব্রহ্মের পর্যন্ত উপাসনা করেগেছেন । বেদের মতে -

"সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"
"ঈশা বাস্যামিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ"

"জগতে চেতন অচেতন যত কিছু বস্তু আছে সমস্ত কিছুর মধ্যেই ব্রহ্ম বিদ্যমান । এই পৃথিবীতে যত জাতি যত ধর্ম সসম্প্রদায় উৎপত্তি হয়েছে , সব জাতির সকল ধর্মের সার সামগ্রী বৈদিক ধর্মের অন্তর্ভুক্ত

বেদ মন্ত্র গুলির মধ্যে একটা নিজস্ব দুর্বার শক্তি নিহিত । তা না হলে কয়েক হাজার বছর ধরে অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও এগুলি আমাদের কাছে পৌঁছোলো কিভাবে ?



                                        🙏 নমস্তে  🙏



No comments:

Post a Comment