আমাদের সনাতন বৈদিক ধর্মে ৩৩ কোটি দেবতা সম্পর্কে অনেকেই বিভ্রান্ত হন । হিন্দুরা অনেকেই জানেনা ৩৩ কোটি দেবতা কোন কোন গুলোকে বলা হয়, অনেকেই আবার দুর্গা , কালী, মনসা ,গণেশ ,কার্তিক ইত্যাদি পৌরাণিক চরিত্র কে দেবতা মনে করে। তাই এই ৩৩ কোটি দেবতা বিষয়েই আমার আজকের এই পোস্টটি লেখা ।
👉 দেবতার অর্থ হলো যার দিব্য গুন আছে এবং যার দিব্য গুনের দ্বারা এই জীব জগৎ চলছে তাকেই দেবতা বলে যেমন - সূর্য ।
👉 দেবতার অর্থ ঈশ্বর গ্রহণ করা ভুল কারণ পরমেশ্বর সকল দেবতা কে চালিত করে এবং সকল দেবতারও দেবতা বলে পরমেশ্বর এর এক নাম মহাদেব ,
👉 আর আমাদের মধ্যে যে কোটি শব্দ নিয়ে বিভান্ত আছে তার অর্থ এখন করিবো , সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ প্রকার , যজুর্বেদ ১৪/৩১ মন্ত্র - "ত্রয়স্ত্রিংশৎত্রিশতা" এবং শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫ তেও ৩৩ দেবের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে ।
👉 শুরুতেই বলে রাখি আমাদের ৩৩ দেবের মধ্যে শুধু একটি মাত্র চেতন দেবতা হল 'জীবাত্মা' বাদবাকি ৩২ টি দেবতাই হলো জড় বস্তু।
বৃহদারণ্যক উপনিষদে আছে..............................✍️
"অষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়ত্রিংশা চিতি"
=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/২ ||=
অর্থাৎ - অষ্ট বসু , একাদশ রুদ্র , দ্বাদশ আদিত্য এই কয় জন মিলিয়া একত্রিশ এবং ইন্দ্র ও প্রজাপতি মিলিয়া তেত্রিশ দেব ।
"ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ"
=|| যজুর্বেদ ১৪/৩১ ||=
অর্থ : প্রকৃতির শাসক , প্রজার পালক সর্ব্বব্যাপক , সর্ব্বাধিপতি পরমাত্মার তেত্রিশ ভৌতিক দেব শক্তির অনুশীল কর ।
অর্থাৎ...................✍️
৮ বসু
১১ রুদ্র
১২ আদিত্য
ইন্দ্র ও
প্রজাপতি
এই ৩৩ টি কে দেবতা বলা হয় ।
👉 ৮ বসু কাকে বলে ও কি কি ?
উত্তর:- নিখিল পদার্থ এই সবের মধ্যেই আছে
তাই এদের বসু বলা হয় ।
অগ্নিশ্চ পৃথিবীশ্চ বায়শ্চান্তিরিক্ষং চাদিত্যশ্চ দ্যৌশ্চ চন্দ্রমাশ্চ নক্ষত্রাণি চৈত্রে বসব
=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৩ ||=
অর্থ : অগ্নি, পৃথিবী, বায়ু, অন্তরিক্ষ, আদিত্য, দ্যুলোক ,চন্দ্র, নক্ষত্র সকল ইহারা অষ্ট বসু ।
অর্থাৎ ৮ টি বসু হইলো :
১ ) পৃথিবী
২ ) জল
৩ ) অগ্নি
৪ ) বায়ু
৫ ) আকাশ
৬ ) চন্দ্রমা
৭ ) সূর্য
৮ ) নক্ষত্র সমূহ
👉 ১১ রুদ্র কাকে বলে ও কি কি ?
উত্তর : "দশমে পুরুষো প্রাণা আত্মৈকাদশন্তে"
=|| বৃহদারন্যকোপনিষদঃ ৩/৯/৪ ||=
অর্থ : পঞ্চ প্রাণ এবং পঞ্চ উপ প্রাণ এই দশ এবং এক জীবাত্মা মিলে একাদশ রুদ্র ।
অর্থাৎ একাদশ রুদ্র গুলো হল :
১ ) প্রাণ
২ ) অপান
৩ ) ব্যান
৪ ) উদান
৫ ) সমান
৬) নাগ
৭ ) কূর্ম
৮ ) কৃকল
৯ ) দেবদত্ত
১০ ) ধনঞ্জয়
ও
১১ )জীবাত্মা
এই ১১টি দেহান্তকালে রোদন করে অর্থ্যাৎ এই ১১ টি সত্ত্বা যখন একটি মনুষ্যের দেহ থেকে বেরিয়ে যায় তখন সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ফলে সবাই কান্না অর্থ্যাৎ রোদন করে ওঠে বলে ইহা দিগকে রুদ্র বলে ।
👉 দ্বাদশ আদিত্য কাকে বলে ও কি কি ?
উত্তর : "দ্বাদশ বৈ মাস"
=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৫ ||=
অর্থ : বৎসরে বার মাস ১২ আদিত্য ।
অর্থাৎ : দ্বাদশ আদিত্য গুলো হল :
১ ) চৈত্র
২ ) বৈশাখ
৩ ) জৈষ্ঠ
৪ ) আষাঢ়
৫ ) শ্রাবন
৬ ) ভাদ্রপদ
৭ ) আশ্বিন
৮ ) কার্ত্তিক
৯ ) মার্গশীর্ষ
১০ ) পৌষ
১১ ) মাঘ
১২ ) ফাল্গুন
১২ টি আদিত্য : সংবৎসরের ১২ মাস সকলের আয়ু হরণ করে বলিয়া এই সকলকে আদিত্য বলে ।
👉 ইন্দ্র ও প্রজাপতি কি ?
★ স্তনযিত্নুরেবেন্দ্রো
=|| বৃহদারন্যকোওনিষদ ৩/৯/৬ ||=
অর্থাৎ বিদ্যুৎ হচ্ছে ইন্দ্র ।
★ যজ্ঞঃ প্রজাপতিরিতি
=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৬ ||=
অর্থ : যজ্ঞ ( অর্থাৎ শুভ কর্ম ) হচ্ছে প্রজাপতি
পরম ঐশ্বর্য্য হেতু বলিয়া বিদ্যুতের নাম ইন্দ্র এবং প্রজাপতি অর্থাৎ যজ্ঞ, ইহা দ্বারা বায়ু ও বৃষ্টির জলের শুদ্ধি হয়ে থাকে, এর দ্বারা উত্তম অন্নাদি উৎপন্ন হয়।
[ এই হল আমাদের ৩৩ কোটি (প্রকার) দেবতা ]
👉 এখন বলুন এর মধ্যে কি দুর্গা কালি মনসা গণেশ ইত্যাদি পৌরাণিক কাহিনির যে অবাস্তব চরিত্র গুলোকে দেবতা ভাবেন সেগুলোকে কি পেলেন এখানে ?
( এই ৩৩ টি দেবতার উপাসনা করার কথা বেদাদী অর্থাৎ বেদানুকূল শাস্ত্রে কোথাও নেই কারণ আমাদের শাস্ত্র অনুযায়ী শুধু মাত্র নিরাকার ,অজন্মা, সর্বব্যাপক ,অবিনাশী , নিত্য ,অমর সেই পরমেশ্বরের উপাসনা করতে হবে ,অন্য কারো নয় । আজও হিন্দুরা দেবতা সম্পর্কে কিছুই না জেনে অনেকেই ভ্রম জালে পতিত হচ্ছে এবং তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে জন্মগত বমুনেরা )
👉 অনেক পন্ডিতেরা এখন আবার বলিতে পারে যে শিব , বিষ্ণু ইত্যাদি এরাও তো দেবতা কেননা এদের নাম বেদে আছে ।
তাদের উত্তরে আমি বলিব - না , শিব , বিষ্ণু কোন দেবতা নয় । কারন শিব , বিষ্ণু হচ্ছে পরমাত্বার গুনবাচক নাম । যেমন - পরমাত্মা যখন মঙ্গলময় তখন তিঁনি শিব নামে পরিচিত । এবং যখন তাকে সর্বব্যাপী মনেকরি তখন তিনি বিষ্ণু 😃
👉 কোন কোন পন্ডিত আবার বলিবে তাহলে তো শিব ও বিষ্ণু পৌরানিক ও বিষ্ণুর চারহাত ও তিনি বৈকুন্ঠে থাকে আর শিব কৈলাশে থাকে হাতে তৃশুল থাকে মানে তারা দুজনেই আকার 😃
তাদের উত্তরে বলিব - না , কারন শিব ও বিষ্ণু নিরাকার তাদের কোন আকার নেই ( পৌরানিক যুগে ঈশ্বরের এই পবিত্র নামগুলি শিব বিষ্ণু ইত্যাদি নাম দিয়ে একেকটি দেবতা নামক চার হাত পাঁচহাত ওয়ালা এলিয়েন তৈরী করা হয়েছে ) কারন পরমাত্বা নিরাকার যজুর্বেদ ৪০/৮ মন্ত্র মতে তিনি নিরাকার শরীর রহিত জন্ম রহিত মৃত্যু রহিত । তাই বুঝতে হবে যে শিব বা বিষ্ণু একই জন এবং তিনি নিরাকার পরমাত্বা ।
♥️ সত্যকে জানুন এবং মিথ্যা পরিত্যাগ করুন ♥️
খুব সুন্দর লেখোছেন দাদা
ReplyDeleteধন্যবাদ দাদা...... নমস্তে 🙏
Deleteধন্যবাদ
Deleteধন্যবাদ দাদা।কিন্তু এটা ডাউনলোড হলে ভালো হতো
ReplyDeleteযেভাবে সরলীকরণ করলেন, মনে হচ্ছে স্কুল কলেজের বাংলা বা ইতিহাসের পাঠ্য বই।
ReplyDeleteপ্রাণ,আপাণ, ব্যাণ, সমান,,,,,,,,, ইত্যাদি কিভাবে এলো বা এদের জন্ম বৃত্তান্ত কি অথবা কিভাবে এদের জন্ম হয় তা পরিস্কার করে লিখুন।
আকার দেখতে হলে চোখের দরকার। জ্ঞান চক্ষুর উদয় হোক।