WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Tuesday, June 16, 2020

গায়েত্রী মন্ত্রের বিজ্ঞান ভাষ্য


                       

🔥 গায়েত্রী মন্ত্রের বিজ্ঞান ভাষ্য 🔥

ওঁ ভূ র্ভুবঃ স্ব
তৎসবিতুর্বরেণ্যং 
ভর্গো দেবস্য ধীমহি 
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ 

ঋগ্বেদ - ৩/৬২/১০ ; যজুর্ব্বেদ - ৬/৩৫ ; সামবেদ - উঃ ৬/৩/১০



আদি দৈবিক ভাষ্য : 

পদার্থ : (ভূঃ) ‘ভূঃ’ নামক ছন্দরশ্মি কিংবা অপ্রকাশিত কণা বা লোক, (ভুবঃ) ‘ভুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা আকাশ তত্ত্ব, (স্বঃ) ‘সুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা প্রকাশিত কণা , আকাশ কণা বা সূর্যাদি তারা আদিতে যুক্ত । (তত্) ওই অগোচর বা দূরস্থ সবিতা অর্থাৎ মন, ‘ওম্’ রশ্মি, সমস্ত ছন্দরশ্মি, বিদ্যুৎ সূর্যাদি আদি পদার্থকে (বরেণ্যম্ ভর্ঘঃ দেবস্য) সাধারণ-ভাবে আচ্ছাদিতকারী ব্যাপক [ভর্গঃ=অগ্নি বৈ ভর্গঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৮; আদিত্য বৈ ভর্গঃ জৈ০ উ০ ৪.১২.২.২; বীর্যং বৈ ভর্গহত্রর্ষ বিষ্ণুর্য়জ্ঞঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৭] আগ্নেয় তেজ, যে সম্পূর্ণ পদার্থকে ব্যাপ্ত করে অনেক সংযোগ সংকোচকারী বল দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত লোকের নির্মাণ যুক্ত প্রেরিত করতে সমর্থ, (ধীমহি) প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ পদার্থ ঐ আগ্নেয় তেজ, বল আদিকে ব্যাপক রূপে ধারণ করেন । (ধিয়ঃ য়ঃ নঃ প্রচোদয়াত্) যখন সে উপযুক্ত অগ্নিতেজ ঐ পদার্থকে ব্যাপ্ত করেন, তখন বিশ্বামিত্র ঋষি জ্ঞান ভিত্তিক মন বা ‘ওম্’ রশ্মি রূপ পদার্থ [ধীঃ=কর্মনাম নিঘ০ ২.১; প্রজ্ঞানাম নিঘ০ ৩.৯; বাক্ বৈ ধীঃ ঐ০ আ০ ১.১.৪] নানা প্রকারের বাক্ রশ্মির বিবিধ দীপ্তি বা ক্রিয়া দ্বারা যুক্ত করিয়ে উত্তম প্রকার প্রেরিত বা নিয়ন্ত্রিত করতে থাকে ।

ভাবার্থ : মন এবং ‘ওম্’ রশ্মি পরিব্যাপ্ত রশ্মির দ্বারা যুক্ত হয়ে ক্রমশঃ সমস্ত মরুত, ছন্দরশ্মির অনুকূলতা থেকে সক্রিয় করিয়ে সমস্ত কণা, পরিণাম এবং আকাশ তত্ত্বকে উচিত বল বা নিয়ন্ত্রণ দ্বারা যুক্ত করেন । ইহাতে সমস্ত লোক তথা অন্তরিক্ষে বিদ্যমান পদার্থ নিয়ন্ত্রিত শক্তি দ্বারা যুক্ত হয়ে নিজে-নিজে ক্রিয়ায় উপযুক্ত রূপে সম্পাদিত করতে সমর্থ হয় । ইহাতে বিদ্যুৎ বলও উত্তমরূপে নিয়ন্ত্রিত থাকে ।

সৃষ্টির প্রথমে দৈবী গায়ত্রী ছন্দ পরাওম্ প্রকট হয় । পরা ওম্ ২৪ অক্ষর রশ্মির গায়ত্রী ছন্দের নির্মান করে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ বলের নির্মান করেন ।
উক্ত বিদ্যুৎ তথাকথিত ব্যবহার্য বিদ্যুৎ নন । প্রতিটি ২৪ টি অক্ষরই সূক্ষ সূক্ষ কম্পনরূপী ছন্দ বল যাহা আকাশ আদিকে অবকাশ মুক্ত করে সৃষ্টি নির্মানের জন্য গতি , বল , স্থান , প্রাণ সব কিছুই দান করে থাকে ।

[ বেদ বিজ্ঞানী স্বামী অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজী কর্তৃক সম্পাদিত গায়েত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ]

Thursday, June 11, 2020

সনাতন ধর্মের বৈদিক গ্রন্থ গুলি কি কি ?

 



সনাতন ধর্মের বৈদিক গ্রন্থ গুলো কি কি ? 

আজ আমি চেষ্টা করছি ক্ষুদ্র পরিসরে জানানোর । 
আমাদের সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি বেদের ( চার বেদ ) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সাদৃশ্যপূর্ণ এবং বেদের ব্যাখ্যা করার জন্য বিবেচিত গ্রন্থ সকলকে বৈদিক ধর্মগ্রন্থ বলা হয় 
মনে রাখবেন , 
এখানে বেদ হচ্ছে প্রামাণ্য গ্রন্থ । 
যেকোনো গ্রন্থেরই কোনো বাণী বেদ বিরোধী হলে তা বর্জনীয়। সমগ্র বেদ / শ্রুতি শাস্ত্র / সংহিতা ৪ ভাগে সংকলিত 

১ ) ঋগ্বেদ
২ ) যজুর্ব্বেদ 
৩ ) সামবেদ 
৪ ) অথর্ব্ববেদ 

পরবর্তীতে আসে স্মৃতি শাস্ত্র সমূহ 

👉* উপবেদ ৫ টি 
👉* বেদাঙ্গ ৬ টি
👉* ব্রাহ্মণ ৬ টি 
👉* আরণ্যক ৬ টি 
👉* সূত্র ৯ টি 
👉* স্মৃতি ২ টি 
👉* দর্শন ৬ টি 
👉* উপনিষদ ১০ টি 
( যদিও ১০৮ টি, কিন্তু মূল ১০ টি থেকে ১২ টি ধরা হয় )
👉* ইতিহাস ( পুরান )
👉* নীতি ৪ টি 

আসুন পর্যায়ক্রমিক ভাবে এসব গ্রন্থে আলোচিত 
বিষয় বস্তু নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলি - 

১ ) ঋগ্বেদ : প্রধান আলোচ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে- পরমাত্মা, আত্মা ও প্রকৃতি। এখানে বর্ণিত হয়েছে ঈশ্বরের হাজারো গুণাগুণ, বৈশিষ্ঠ্য । ইহলৌকিক ও পরলৌকিক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান । তাছাড়া আছে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, গ্রহবিজ্ঞান, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি । আবার বস্তুর (ক্ষেত্রবিশেষে ) ফিজিকাল, মেটাফিজিকাল এবং স্পিরিচ্যুআল ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করে ।
ঋগ্বেদে ১০ টি মন্ডল, ১০২৮ টি সুক্ত এবং ১০৫৮১ টি মন্ত্র রয়েছে । 

২ ) যজুর্ব্বেদ : মানুষের মনোজাগতিক বিভিন্ন দিক এবং আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে যজুর্বেদ । মানুষের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করে তাকে জীবনের পরম উদ্দেশ্য মোক্ষ লাভের জন্য করনীয় কার্যবিধি আলোচিত হয়েছে । 
যজুর্ব্বেদে ৪০ টি অধ্যায় এবং ১৯৭৫ টি মন্ত্র রয়েছে । 

৩ ) সামবেদ : প্রধানত জীবন-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি এবং মোক্ষ লাভের জন্য আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকর্মের কথা বলা আছে । সৃষ্টির বর্ণনা, ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণের বর্ণনা এবং আধ্যাতিক গুণাবলী অর্জনের কথা বলা হয়েছে এতে । 
সামবেদে ২ টি ভাগ - ক ) পূর্বাচিক খ ) উত্তরাচিক 
মোট ১৮৭৪ টি মন্ত্র রয়েছে । 

৪ ) অথর্ব্ববেদ : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্র, গণিত, জ্যোতিষ বিদ্যা, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব, চিকিৎসা বিদ্যা ( বিশেষ করে শল্য এবং ভেষজ চিকিৎসা ), কৃষি, কারিগরী, যুদ্ধ বিদ্যা, উড্ডয়ন যান বিদ্যা, রাজ্নীতি, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহ । ( ইতিহাস ব্যাতীত ) ।
অথর্ববেদকে ব্রহ্মবেদ-ও বলা হয় ( একেশ্বরবাদ ) । 
অথর্ব্ববেদের ২০ টি কান্ড, ১১১ টি অনুবাক, ৭৩১ টি সুক্ত, ৫৯৭৭ টি মন্ত্র রয়েছে  । 


👉* উপবেদ :

🔥 আয়ুর্ব্বেদ ( জীবন এবং চিকিৎসা )
🔥 ধনুর্ব্বেদ ( সমরবিদ্যা অথবা যুদ্ধবিদ্যা, রণকৌশল, আধ্যাত্মিকতা, কর্ম, কর্তব্য, নাগরিক, কূটনীতি বিদ্যা )
🔥 গন্ধর্বব্বেদ ( সংগীত ও প্রাকৃতিক সুর )
🔥 শিল্প বিদ্যা ( স্থাপত্য বিষয়ক বিদ্যা )
🔥 অর্থ বিদ্যা ( অর্থনীতি, রাজনীতি  )

👉* বেদাঙ্গ : 
বেদ শুদ্ধ ভাবে বুঝা ও ব্যাখ্যা করার জন্য বেদাঙ্গ বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিৎ নয়তো অর্থ সঠিক ভাবে অনুদিত হবে না ।  
বেদাঙ্গ সমূহ হল -

🔥 শিক্ষা 
🔥 কল্প 
🔥 ব্যাকরণ 
🔥 নিরুক্ত ( শব্দ তত্ত্ব )
🔥 ছন্দ 
🔥 জ্যোতিষ ( গণিত এবং গ্রহ বিজ্ঞান )

শাখা :  বেদের ব্যাখ্যা, বেদ সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য বৈদিক যুগে ১১২৭ টি শাখা ছিল । ঋগ্বেদের ২০ টা , যজুর্ব্বেদে ১০০ টা , সামবেদে ১০০০ টা, অথর্ব্ববেদে ৭ টা । 
দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে বর্তমানে মাত্র ২০ টি মতো শাখা আছে । 


👉* ব্রাহ্মণ গ্রন্থ : 
প্রত্যেকটি ব্রাহ্মণ চার বেদের কোনো না কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত এবং বেদের সংশ্লিষ্ট শাখার অংশ । ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে । 

🔥 ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ( ঋগ্বেদে সংযুক্ত )
🔥 কৌষীতকি বা শাঙ্খায়ন ব্রাহ্মণ ( ঋগ্বেদে সংযুক্ত )
🔥 শতপথ ব্রাহ্মণ ( শুক্লযজুর্ব্বেদে সংযুক্ত )
🔥 মহাতাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ( সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 ষড়বিংশ ব্রাহ্মণ ( সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 গোপথ ব্রাহ্মণ ( অথর্ব্ববেদে সংযুক্ত )
🔥 ছান্দোগ্য বা জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ (সামবেদে সংযুক্ত )
🔥 তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ( কৃষ্ণযজুর্ব্বেদে সংযুক্ত )
🔥গোপথ ব্রাহ্মণ ( অথর্ব্ববেদে সংযুক্ত )


👉* আরণ্যক : 
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের পরিশিষ্ট ভাগ আরণ্যক নামে প্রসিদ্ধ । 
সংসার পরিত্যাগ করিয়া ব্রহ্মচর্য অবস্থায় অরণ্যের মধ্যে অবস্থান করিয়া আর্য ঋষিগণ এই শাস্ত্র অধ্যায়ন করিতেন বলিয়া ইহা আরণ্যক নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে । এটা ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহের সারাংশ বলা যায় ব্রাহ্মণ গ্রন্থ গুলো থেকে নিংড়ানো রস । মহাভারতে লিখিত আছে - 
"অরণ্যকং চ বেদেভ্য ঔষধিভ্যহমৃতং 
  যথা হৃদনামুদধি শ্রেষ্ঠো গৌর্বরিষ্ঠা চতুষ্পাদম"

                                                   - ২৫৬ অধ্যায় (আদি পর্ব )
 অর্থাৎ ঔষধির মধ্যে অমৃত হৃদের মধ্যে সমুদ্র চতুষ্পদের মধ্যে গাভী যেরূপ শ্রেষ্ঠ, বেদের মধ্যে আরণ্যক তেমন শ্রেষ্ঠ । 

👉* সূত্র : 

🔥 গৃহ সূত্র 
🔥 ধর্ম সূত্র 
🔥 শ্রোতা সূত্র 
🔥 আশবালায়ন সূত্র 
🔥 গোভিল সূত্র 
🔥 প্রসাকর সূত্র 
🔥 কোশিতকি সূত্র 
🔥 কাত্যায়ন সূত্র 
🔥 বোধায়ন সূত্র 


👉* স্মৃতি :
যা মনে রাখা হয় তাহাই স্মৃতি । 
🔥 মনুস্মৃতি 
( বৈবস্বত মনু কর্তৃক রচিত । ইহাতে মোট ১২ টি অধ্যায় আছে )
🔥 যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি 
( ঋষি যাজ্ঞবাল্ক কর্তৃক রচিত । ইহাতে  ৩টি অধ্যায় আছে )


👉* উপনিষদ :
উপ পূর্ব্বক নি পূর্ব্বক বধ-গতি ও অবসাদনার্থ সদ ধাতুর প্রতি কিপ প্রত্যয় দ্বারা উপনিষদ শব্দটি সিদ্ধ হয়েছে । 
যে বিদ্যার দ্বারা জ্ঞানী গণের গর্ভ জন্ম ও জড়া মৃত্যু দোষ সমূহ নিশ্চয়রূপে অবসন্ন হয় সেই বিদ্যাই উপনিষদ । উপনিষদ ব্রহ্ম জ্ঞানের প্রধান আকর এবং ব্রহ্ম বিদ্যাই উপনিষদের একমাত্র প্রতিপাদ্য বিষয় । আর্য ঋষিগণ প্রাচীন কালে দর্শন ও ঈশ্বর তত্ত্ব সম্বন্ধে যে কতো দূর উচ্চ চিন্তা করতে সমর্থ হইয়াছিলেন উপনিষদ হইতে তাহার প্রকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় । 
   
🔥 ঈশোপনিষদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 কেনোপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক )
🔥 প্রশ্নোপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 মাণ্ডুক্য উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 মুণ্ডক উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )
🔥 ঐতরেয় উপনিষদ ( ঋগ্বেদ ভিত্তিক )
🔥 তৈত্তরীয় উপনিষদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 ছান্দোগ্য উপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক )
🔥 বৃহদারণ্যক উপনিষপদ ( যজুর্ব্বেদ ভিত্তিক )
🔥 শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ( অথর্ব্ববেদ ভিত্তিক )

👉* দর্শন শাস্ত্র : 

🔥সাংখ্য দর্শন 
🔥 ন্যায় দর্শন 
🔥 বৈশেষিক দর্শন 
🔥 মীমাংসা দর্শন 
🔥 যোগ দর্শন 
🔥 বেদান্ত দর্শন 

👉* নীতি শাস্ত্র  : 

🔥 বিদূর নীতি 
🔥 চাণক্য নীতি 
🔥 শুক্র নীতি
🔥 ভর্তৃহরি নীতি 





"হরে কৃষ্ণ", "জয় রাধে" আদি কথা গুলি কি শাস্ত্র বর্ণিত ?

  

"হরে কৃষ্ণ", "জয় রাধে", "রাধে রাধে", "জয় গুরু" প্রভৃতি কথা গুলো প্রায় লোক বলে থাকেন , কোনো পরিচিত ব্যক্তি বা নতুন পরিচিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দেখার সাথে সাথে তাদের উদ্দেশ্যে এই কথা গুলো বলা হয়ে থাকে । কিন্তু আপনাদের কি কখনো মনে প্রশ্ন জাগে না যে এই কথা গুলো কোথা থেকে আসলো বা কোন শাস্ত্র বর্ণিত আছে এই কথা গুলো ? 

আসলে এ গুলো কোনো বৈদিক শাস্ত্রে নেই । আমরা মানুষের দেখাদেখি এই কথা গুলো বলে থাকি । আমাদের সনাতন শাস্ত্রে "নমস্কার" দেওয়ার কথা বলা আছে । 

অনেকে বলে যে শুধু মাত্র ভাগবানকেই নমস্কার দেওয়া যায় । অন্যদের অর্থাৎ কোনো মানুষকে নমস্কার দেওয়া যায় না । 
আসুন দেখে নেওয়া যাক শাস্ত্র কি বলছে -

“নমস্কার জ্যৈষ্ঠদেবকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেবকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, ধনী, গরীব, জ্ঞানী ও অল্প জ্ঞানী সকলকে"।

                                                             🔥 যজুর্ব্বেদ - ১৬/৩২    

পবিত্র বেদে সবাইকে নমস্কার দিতে বলেছে । 
এখন আপনি এই বিষয়ে কি বলবেন ?

যেখানে আমাদের সনাতন ধর্মের সংবিধান ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ বলছে সবাইকে নমস্কার দিতে । সেখানে আমি আর আপনি নিষেধ করার কে ?

এখন আপনি যদি বলেন, "আমি বেদ মানিনা"।  তাহলে আপনার জন্য একটা সুন্দর নাম অপেক্ষা করছে ।
চলুন দেখে নিই -

“যে ব্যক্তি বেদের নিন্দা অর্থাৎ অপমান করে, (বেদ) ত্যাগ ও (বেদ) বিরুদ্ধ আচরণ করে তাহাকে নাস্তিক বলে" ।

                                                             🔥 মনুসংহিতা - ২/১১

যেহেতু আপনি বেদ মানেন না, সেহেতু আপনি নাস্তিক । রাগ করবেন না । এ কথাটা আমার বলা নয়, মনুসংহিতা বলছে । আমাদের গীতাও শাস্ত্র অনুযায়ী কার্য করতে বলে ।

“যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করিয়া ইচ্ছামত কার্য করে, সে কখনও সিদ্ধিলাভ করিতে পারে না । তাহার শান্তি, সুখ বা মোক্ষ কিছুই লাভ হয় না" । 
                                                                    🔥 গীতা - ১৬/২৩

আপনি যদি এখন শাস্ত্রবিধি না মেনে, "হরে কৃষ্ণ, জয় গুরু, জয় রাধে, রাধে রাধে" এগুলো বলেন তাহলে আপনার কোনো লাভ হবে না ।

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে , যেহেতু এগুলো শাস্ত্রে নেই , 
তাহলে আমরা এগুলো বলি কেন ? 

উত্তর : আমরা অনুকরণ প্রিয় । একজনের দেখাদেখি অনেক কাজ করে থাকি । এটাও ঠিক এমনভাবে চলে এসেছে । সবাই শার্ট, প্যান্ট পরে বলে আমরা তাদের দেখে এগুলো পরিধান করি । এমন অনেক কিছুই রয়েছে ।

আবার প্রশ্ন জাগতে পারে , 
তাহলে "হরেকৃষ্ণ" জপ বা "একনাম কীর্ত্তন"কেন করা হয় ?
কোন শাস্ত্রে এগুলো করার কথা বলা আছে ? 

উত্তর : আসলে এগুলোর উত্তরও একই হবে দেখাদেখি । তবে কিছু বইতে আছে । সেগুলোকে আমরা শাস্ত্র বলতে পারি না । 
যদি বলেন , কলিসন্তরণ উপনিষদে বলা আছে –

তাহলে , জেনে নিন কলিসন্তরণ উপনিষদ বৈদিক উপনিষদ নয় । কারণ কোনো শ্রুতিগ্রন্থই হোক  বা স্মৃতিগ্রন্থ, বা যে কোনো মুনি ঋষির লেখা অন্য কোনো গ্রন্থ যদি বেদ বিরুদ্ধ হয় বা বেদের বিপরীতে লেখা হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় না । 

অর্থাৎ, যে গ্রন্থ বেদের সহিত কোনো মিল নাই সে গ্রন্থ কখনোই সনাতন ধর্মের গ্রহণ যোগ্য  নয় , অবশ্যই বর্জনীয় । 
কারণ বেদ হল সনাতন ধর্মের প্রধান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ । 

এই উপনিষদ বেদের সহিত কোথাও কোনো ভাবে মিল নেই । 
তবুও কিছু লোক এই কলিসন্তরণ উপনিষদ কে প্রমাণ হিসাবে দেখায় । কলিসন্তরন উপনিষদে 'হরে' 'কৃষ্ণ' আর 'রাম' এই তিনটি নাম এই ভাবে বর্ণিত আছে  -

             "হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে 
              হরে  কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে"

রাম নাম দিয়ে শুরু হয়েছে আর কৃষ্ণ নাম দিয়ে শেষ হয়েছে ।
পরবর্তীতে 'হরে' 'কৃষ্ণ' আর 'রাম' এই তিনটি নাম দ্বারা হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র রচিত হয় বৈষ্ণবদের । যা বর্তমানে এই তিন নাম কে এই ভাবে শোনা যায় সবার মুখে –

              "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে 
               হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে"

যা কলিসন্তরণ উপনিষদের সহিত কোথাও নাই😀 । কলিসন্তরণ উপনিষদে যেভাবে বলা আছে, বর্তমানে কেউ সেভাবে মানে না । নিজেরা একটু পন্ডিতি করে ঘুরিয়ে নিয়ে সেটাকে ১৬ শব্দের  "হরেকৃষ্ণ" মহামন্ত্র বানিয়ে নিয়েছে 😆 । 

ষোড়শ শতাব্দীর সময় থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । এই মন্ত্রের রচয়িতা হলেন রঘুনন্দন ভট্ট যিনি নবাব হোসেন শাহের দরবারে কবিত্ব করতেন । চৈতন্য মহাপ্রভু বৈদিক ধর্ম প্রচারের ফলে হুসেন শাহ তাকে বাংলায় প্রবেশে বাধা দেন, এরপর তিনি রঘুনন্দন কে আদেশ করেন বৈদিক ধর্মের বিপরীতে কিছু রচনা করার জন্য, তখন তিনি এই কলিসন্তরন উপনিষদ রচনা করেন ।

১৯৬৫ সাল থেকে মন্ত্রটি অভয় চারণারবিন্দ ভক্তি বেদান্ত এবং তার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভবনামৃত সংঘ দ্বারা ভারতের বাইরে পরিচিত হয় যা "হরে কৃষ্ণাস" নামে খ্যাত । তাই কলি সন্তরণ উপনিষদের সাথে বেদের কোন সম্পর্কই নাই । 

আবার অনেকে এটাও বলে যে, কলিযুগে নাম কির্তনই উদ্ধারের পথ । এই কথাটাও হাস্যকর । কারণ এই কথাটা বৈদিক শাস্ত্রে কোথাও নেই । এটা মানুষ ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে বলে থাকে ৷ আর যদি সেটা যুগধর্ম বলা হয়, তাহলে আসুন, 
যুগধর্ম নিয়ে শাস্ত্র কি বলে দেখে নিই -

“সত্যযুগে তপস্যাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম,
ত্রেতাযুগে জ্ঞানই (আত্মজ্ঞানই) শ্রেষ্ঠ,
দ্বাপরে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ।”

                                                          🔥 মনুসংহিতা - ১/৮৬

এখানে দেখুন মনুসংহিতায় কলিযুগে দানকে শ্রেষ্ঠ বলেছে । সুতরাং যারা নাম কির্তনকে কলিযুগের যুগধর্ম হিসেবে প্রচার করছে, তারা মিথ্যা বলছে । তাদের কাছে যথাযথ প্রমাণ নেই ।
আপনি এখন কি করবেন ? মানুষের কথা ধর্ম পালন করবেন নাকি শাস্ত্র অনুযায়ী ? এটা নির্ভর করছে আপনার উপর ।
সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।


 লিখছেন :  রনি সত্যার্থী 


Wednesday, June 10, 2020

ধর্ম কাকে বলে ও ধর্মের লক্ষণ গুলি কি কি ?




যাহার স্বরূপ ঈশ্বর আজ্ঞার যথাবৎ প্রতিপালন এবং পক্ষপাতরহিত হইয়া ন্যায় অনুসারে সকলের হিত সাধন করা, যাহা প্রত্যক্ষাদি প্রমাণ দ্বারা সুপরিক্ষিত এবং বেদোক্ত হওয়ায় সর্ব মানবের পক্ষে একমাত্র মান্য তাঁহাকে ধর্ম বলে । 

পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী বলছেন - "ধারয়তি লোকম" যা লোককে ধারণ করে তাহাকে ধর্ম বলা হয় । যাহার দ্বারা গ্রাম, নগর, দেশ, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয় কেবল ইহাই নয়, অপিতু সম্পূর্ণ বিশ্বের সকল প্রাণী বর্গের জন্য যাহা কল্যাণকারী, মঙ্গলকারী হইবে, যাহা সংরক্ষক, সংবর্দ্ধক হইবে তাহাকে ধর্ম বলে । 

গীতার আলোকে ধর্ম হচ্ছে -
সরলতা, দান, অহিংসা, সত্যবাদিতা, সমস্ত জীবে দয়া, মৃদুতা, লজ্জা, তেজ, ক্ষমা, শান্তি, লোভহীনতা, ধৈর্য, দক্ষতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান মঙ্গলজনক ইত্যাদি এই গুলা হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ এবং এই গুন গুলা যাদের মধ্যে বিদ্যমান তাঁরাই প্রকৃত ধার্মিক । 

মনুসংহিতা মতে , সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, শুদ্ধ বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য এবং ক্রোধ হীনতা এ দশটি ধর্মের লক্ষণ । অর্থাৎ ধর্ম মনুষ্য মাত্র সকলের জন্য । যার মধ্যে ধর্মের এই গুণ গুলা নাই সে মানুষ নয় । সে জন্য বলে "ধর্মহীন মানুষ পশুর সমান" । মানুষ ধর্মকে কখনোও পরিবর্তন করতে পারে না । মানুষ যেটাকে পরিবর্তন করতে পারে সেটা হল "সম্প্রদায়"। ধর্মের কাজ হচ্ছে মানুষে মানুষে প্রীতি স্থাপন করা , কিন্তু যা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে সেটা কখনোই ধর্ম নয় , সেটা হচ্ছে "মতবাদ" এবং "সম্প্রদায়"। 

একাদশী ব্রত পালন



একাদশী ব্রত

মানুষকে পাপ কর্মে উৎসাহ প্রদান করার জন্য এবং কল্যাণকর কর্ম করতে নিরুৎসাহিত করার জন্যই মন্দ বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরা একাদশী নামক প্রথার প্রচলন করেছিল 


একাদশী প্রথার উদ্ভব কারী গণ দাবী করেন  - 
মদ্যপান, গুরুপত্নী ধর্ষণ, স্ত্রীহত্যা, গোহত্যা পাপ, ধন অপহরণ, ভ্রুণহত্যা, আত্মীয়স্বজন বধ, পিতৃহত্যা, দ্যুতক্রীড়া ইত্যাদি যতই ঘৃণিত পাপ কর্ম করেন না কেন, একাদশী ব্রত পালন করলে সমস্থ পাপ বিনষ্ট হয়ে যায় । এই ব্রতপালনকারি দিব্য দেহ লাভ করে, স্বর্গ, বৈকুণ্ঠে গমন করে । এমনকি কেও সারা জীবন যতই পাপ করুক না কেন ; নিজের মনের অজান্তেও যদি একাদশী থাকে । তাহলেও স্বয়ং যমরাজ ভয় পেয়ে দণ্ডবৎ প্রণাম জানিয়ে, ব্রতপালনকারীর পূজা করেন ।

বিচার করে দেখুন - কোন পাপী কে তার পাপকর্মের শাস্তি না দেয়ার অর্থ কি? অর্থাৎ সেই পাপী কে আরো গুরুতর পাপ করারা জন্য উৎসাহ দেওয়া । এবং যারা পাপকাজ করে না তারাও নির্ভয়ে পাপকর্ম করবে । ধরুন! কোন দস্যু একজন পথচারী কে হত্যা করে তার সম্পদ লুট করল । তারপর সে তার পাপের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ; নানা স্থানে গিয়ে রাজার প্রসংসা করতে লাগল । রাজার আজ্ঞা পালন কারি প্রজার মত তার সেবা করা শুরু করল । রাজা যখন দস্যুর কু-কর্মের কথা জানবে, তখন একজন ন্যায়পরায়ণ রাজা হিসাবে তিনি কি সেই দস্যু খুনি কে ক্ষমা করে দিবেন ? তিনি যদি দস্যুর সেবায় খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে যে পথচারী কে হত্যা করা হল সেই পথচারী ও তার পরিবারে প্রতি রাজা অন্যায় করবেন । অন্য দিকে রাজার অন্যান্য জনসাধারণ মনে করবে পাপকার্য্য করে রাজার সেবা করলে রাজা খুশি হয়ে ক্ষমা করে দেন । তাহলে চল আমরা এই সুযোগ কাজে লাগায় । একিভাবে একাদশী ব্রত পালন করলে, যে ঈশ্বর সকল পাপ ক্ষমা করে দেন সেই ঈশ্বর কখনো ন্যায়কারী হতে পারে না । সেই ঈশ্বরের প্রতি তখন পক্ষপাতদুষ্ট দোষ লাগে । তাই সকল কর্মের যথোচিত ফল প্রদান করাই ঈশ্বরের কার্য্য, ক্ষমা করা নয় । এই সব পাপ বিনষ্ট কারি একাদশীর মত কু-প্রথা দুষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা সৃষ্টি করেছে মানুষ কে আরো পাপ কর্মে উৎসাহ দেয়ার জন্য, ধর্মের নামে সমাজে নানা অনাচার সৃষ্টি করার জন্য ।

আবার, একাদশী প্রথার উদ্ভব কারী গণ দাবী করেন - 
একাদশী পালন করলে যে পুণ্যে ফল লাভ হয়, অশ্বমেধ, রাজসূয় যজ্ঞ, ধন-সম্পদ দান করলেও নাকি সে পুণ্য হয় না । গজদান, ভূমিদান, স্বর্ণদান, অন্নদান, গোদান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্ম নেই যা একাদশী ব্রতের সমান নয় । এমনকি দশ হাজার বৎসর তপস্যা ফল কেবলমাত্র এক একাদশী ব্রত পালনে লাভ হয়ে যায় । এই ব্রত কথা শুধু মাত্র শ্রবন কীর্তন করলেই নাকি সহস্র গোদানের ফল হয়ে যায় । আহারে! পাপের খন্ডন করা আর পুণ্যে কামনো কতই না সহজ !

মানুষের শুধুমাত্র নিজের উন্নতিতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়, কিন্তু সকলের উন্নতিকে নিজের উন্নতি ভাবা উচিত । ভূমিহীন কে ভূমি দান করা, গোদান করা, দরিদ্র পিতা কে তার কন্যার বিবাহের জন্য স্বর্ণদান করা, অনাহারী কে অন্নদান করা অপেক্ষা আর কি বা পুণ্যকর্ম হতে পারে ? কিন্তু এই সব মহৎ কর্ম থেকে যেহেতু একাদশী থাকলে বেশী পুণ্য হয় তাহলে আর এগুলা করার দরকার টা কি ? শুধু একাদশী থাকলেই তো হয় । এমন ধারণা কি মানুষের মনে উদয় হবে না ?

এই ভাবেই ব্রত প্রচলন কারিগণ কল্যাণকর, মঙ্গলময়, সমাজের উন্নতি মূলক কাজ করা থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করেছে । সূক্ষ্ণ ভাবে তারা মানুষের মনে স্বার্থপর মনোভাব তৈরি করেছে । যারা এই একাদশী ব্রত প্রচলন করেছে, তাদের মধ্যে কেবল স্বার্থপরতাই আছে । একাদশী ব্রতকথা অনুসারে ধর্মকীর্তি নামক এক রাজা সারা জীবন পাপকর্মে লিপ্ত থেকেও, মনের অজান্তে একাদশী থেকে ছিলেন । আর তাতেই তার সব পাপ বিনষ্ট হয়ে যায় । এমনি কি যমরাজ পর্যন্ত তাকে প্রণাম করে পূজা করেছিলেন । তাহলে বৈষ্ণবরা স্বজ্ঞানে একটা একাদশী থাকলেই তো তাদের সব পাপ বিনষ্ট হয়ে যায়, দিব্য রথে চড়ে বৈকুণ্ঠে গমন করতে পারে । তবে বৈষ্ণব দের ২৫-২৬ টা একাদশী ব্রত আমদানি করার প্রয়োজন পড়ল কেন ?

যুগ যুগ ধরে বেদের আলোকে আমাদের পূর্ব্বকালীন প্রজ্ঞাবান ঋষিগণ মানব কল্যাণের জন্য যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছেন এবং আমাদের কে সেই শিক্ষা দিয়েছেন । আমাদের কে কর্ম করার শিক্ষা দিয়েছেন । কিন্তু সেই মূল ধারার সনাতন ধর্ম থেকে বাহির হয়ে; অন্য একটা মতবাদ সৃষ্টি করে একাদশীপ্রথার উদ্ভব কারি গণ, বলে যজ্ঞ অপেক্ষা একাদশী প্রথা আরো উচ্চপর্যায়ের, উচ্চ ফল প্রদায়ক অর্থাৎ এরা বেদের বিরুদ্ধে গিয়ে, সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের ঋষিগণ কেও অপমান করছে । কিন্তু আশ্চর্যজনক হচ্ছে এই মতবাদ গুলা কে ওরা সনাতন ধর্মের নামে আমাদের খাওয়াচ্ছে আর আমরা নির্বোধের মত সেগুলা খাচ্ছি ।


লিখছেন :   শিমুল চৌধুরী 



নিরাকার নির্গুণ এবং সাকার সগুণ খণ্ডন


  

অধিকাংশ লোক নিরাকারকে নির্গুণ এবং সাকারকে সগুণ বলে । তারা বলে যখন ঈশ্বর জন্ম গ্রহণ করেন না, তখন তিঁনি নির্গুণ আর যখন সাকার রূপ ধারণ করে অবতার হন, তখন তিঁনি সগুণ । 

খণ্ডন.................... ✍️

এটা তাদের অজ্ঞতা এবং মিথ্যা কল্পনা মাত্র । নির্গুণ মানে নিরাকার না এবং সগুণ মানে সাকার বুঝায় না । নির্গুণ মানে নিরাকার নয় তার প্রমাণ দেখুন বেদ, উপনিষদি শাস্ত্রে সেই নিরাকার পরমাত্মা কেই প্রাণস্বরুপ, সর্বব্যাপক, সর্ব্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্ববিদ্যার ধারণকর্তা অনাদি বলা হয়েছে । যদি নির্গুণ মানে নিরাকার হয়, তাহলে নিরাকার ব্রহ্মের কেন এইসব গুণের স্তুতি করা হয়েছে ?

আবার সগুণ মানে সাকার নয় ; বা সাকার রুপ ধারণ করে অবতার হন, তাই তিনি সগুণ সেটাও না; তার প্রমাণ দেখুন "বেদে" বলা হয়েছে পরমাত্মা সাকার রুপ নাই এবং শরীর ধারণ করেন না তাই তাকে শরীররহিত, জন্মরহিত, ছিদ্ররহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, মূর্তিশূন্য বা অমূর্ত্ত বলা হয়েছে ।

❏ স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম স্নাবিরং
শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধম্ কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোহর্থাম্ব্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।

                                                     🔥 যজুর্ব্বেদ - ৪০/৮ মন্ত্র  

বঙ্গানুবাদ : পরমাত্মা সর্বব্যাপক, সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্র
রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, রোগরোহিত, জম্মরহিত,শুদ্ধ,
নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি । তিনি
তাহার শ্বাশত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন ।

❏ য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ পতি র্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ ।।

                                                   🔥 ঋগ্বেদ - ৬/৪৫/১৬ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর ।

❏ যত্তদদ্রেশ্যমগ্রাহ্মমগোত্রমবর্ণমচক্ষূঃশ্রোত্রং তদপাণিপাদম্ ।
নিত্যং বিভূং সর্বগতং সূসুক্ষ্মং তদব্যয়ং যদ্ভুতয়োনিং পরিপশ্যন্তি ধীরাঃ ।।

                                       🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ১/১/৬ শ্লোক

বঙ্গানুবাদ : যিনি অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, অগোত্র, অবর্ণ এবং অচক্ষুঃ ও অশ্রোত্র, যিনি হস্তপাদশূন্য, নিত্য, বিভু, সর্বব্যাপী এবং অতিসূক্ষ্ম, সেই অব্যয় এবং সর্বভূতের কারনকে ধীরগণ সর্বতঃ দেখতে পান ।

❏ দিব্যো হ্যমুর্তঃ পূরূষঃ স বাহ্যাভ্যন্তরো হ্যজঃ ।
অপ্রাণো হ্যমনাঃ শূভো হ্যক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ ।।

                                            🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ২/১/২ শ্লোক 

বঙ্গানুবাদ : সেই দিব্য মূর্তিশূণ্য পুরুষঃ বাহ্যে এবং অন্তরে অবস্থিতি করেন । তিনি জন্মশূন্য-প্রানশূন্য-মনশূন্য এবং বিশুদ্ধ, তিনি পরম অক্ষর হতেও উর্ধে । ( নীলোৎপল সিনহা )
তিনি দিব্য, তিনি অমূর্ত্ত, চিন্ময় পুরুষ, বাহিরে তিনি অন্তরে তিনি, তিনি জন্মহীন, প্রাণের অতীত, মনের অতীত, জ্যোতির্ময়, অক্ষরেরও পারে পরমতম তিনি । ( শ্রীঅরবিন্দ )

পশু-পাখি, মানুষ প্রভৃতি জীব কর্ণের দ্বারা শব্দ গ্রহণ করে, চক্ষু দ্বারা দৃশ্যমান পদার্থ দেখে থাকে, ইন্দ্রিয় দ্বারা তারা রুপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শাদি বিষয় গ্রহণ করে কিন্তু ঈশ্বরের কোন প্রকার ইন্দ্রিয় নাই, তিনি নিত্য-অবিনাশি । শ্রুতি তাকে "সর্বজ্ঞ" ও "সর্ব্বশক্তিমান" বলে নির্দেশ করেছে । যিনি জ্ঞান ও ক্রিয়ার কর্ত্তা- তিনি জীবের ন্যায় কর্ণ, চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয় দ্বারাই বিষয় গ্রহণ করে থাকেন এবং তিনি মানুষের অনুরুপ ; কোন অজ্ঞানী কোন লোক যাতে এইরুপ মনে না করে, তার জন্য বলা হয়েছে....

যিনি মনদ্বারা চিন্তা করেন না, পন্ডিতগণ বলেন, যাঁর সত্তায় মন চিন্তাক্ষম হয়; যিনি চক্ষুদ্বারা দর্শন করেন না, যাঁর সত্তায় চক্ষুর বিষয়সমূহ লোকে দর্শন করে ; যিনি কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করেন না, যাঁর সত্তায় এই কর্ণ শ্রবণ করে ; যিনি প্রাণবায়ুদ্বারা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস করেন না, যাঁর সত্তায় প্রাণ নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চালনে সক্ষম হয় , তাঁকেই তুমি ব্রহ্ম বলে জানবে ; (আর) অন্য যা কিছু লোকে উপাসনা করে, তা ব্রহ্ম নয় ।

                                              🔥 কোনোপনিষৎ -১/৬-৯ শ্লোক 

সেই নিরাকার, সর্ব্বমূর্তি শূণ্য ব্রহ্ম হতেই বিশ্ব প্রকাশিত হয়েছে আবার, প্রলয়ে বিশ্ব সেই ব্রহ্মে বিলীন হবে ।

❏ তদেতৎ সত্যং যথা সূদীপ্তাৎ পাবকাদ্বিস্ফূলিঙ্গাঃ সহস্রশঃ প্রভবন্তে সরুপাঃ।
তথাহ্ক্ষরাদ্বিবিধাঃ সোম্য ভাবাঃ প্রজায়ন্তে তত্র চৈবাপি যন্তি ।।

                                             🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ২/১/১ শ্লোক 

বঙ্গানুবাদ : এটি সত্য, যেরুপ সুদীপ্ত পাবক হতে সেই পাবকেরই স্বরুপ বিস্ফুলিঙ্গসমূহ সহস্রশ নির্গত হয়, হে সৌম্য, সেইরুপ অক্ষর ব্রহ্ম থেকে বিবিধ জীব উৎপন্ন হয় এবং তাদের পুনরায় বিলীন হয় ।

❏ সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ
যেনাহ্ক্রমন্ত্যৃষয়ো হ্যাপ্তকামা যত্র তৎ সত্যস্য পরমং নিধানম্ ।।

                                            🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ৩/১/৬ শ্লোক

বঙ্গানুবাদ : সত্যই জয়লাভ করে, অসত্য জয়লাভ করে না । যে পথদ্বারা আপ্তকাম ঋষিগণ সেই সত্যের পরম ধামে গমন করেন, সেই দেবযান পথও সত্যপ্রভাবেই বিতত রয়েছে ।

------------------------------------------------------------------------------

তথ্যসূত্র : বেদ , উপনিষদ , মূল লেখা "সত্যার্থ প্রকাশ"


বেদের বিষ্ণু আর যোগীরাজ শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন ব্যখ্যা

 


বেদের বিষ্ণু আর যোগীরাজ শ্রী কৃষ্ণ ভিন্ন ব্যাখ্যা 
অনেকে বলেন ঋগ্বেদ সংহিতায় যদি বিষ্ণু কথা থাকে তবে তবে কেন  কৃষ্ণ কথা থাকবে না ? 
বিষ্ণু কথা থাকা মানেই তো কৃষ্ণ কথা থাকা , 
বিষ্ণু ও কৃষ্ণ অভিন্ন । 

"কিরীটিধারী এবং গদা ও চক্রহস্ত তোমার সেই পূর্ব রূপই আমি 
দেখতে ইচ্ছা করি । হে সহস্রবাহো, হে বিশ্বমূর্তে, তুমি তুমি চতুৰ্ভূজ মূর্তি ধারণ করো"  
------------------------------------------------- গীতা - ১১ / ৪৬ শ্লোক 

এই শ্লোক দ্বারা স্পষ্ট যে অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে বিষ্ণু রূপ ধরণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে । এটা থেকে বোঝা যায় যে শ্রী বিষ্ণু ও শ্রী কৃষ্ণ স্বরূপত অভিন্ন । তাই ঋগ্বেদে বিষ্ণু কথা থাকা মানেই কৃষ্ণ কথা থাকা । তাই ঋগ্বেদ সংহিতায় শ্রী কৃষ্ণ নেই বলাটা মূর্খতা, অজ্ঞতা প্রকাশ পায় ।    
    
শঙ্কা সমাধান --------✍️ 

ঋগ্বেদে শ্রীকৃষ্ণ নেই সেটা বলাটা মূর্খতার প্রকাশ, না জ্ঞানের প্রকাশ তা যুক্তি, প্রমাণ দ্বারা পরিষ্কার হবে। পবিত্র বেদে বলা হয়েছে---

💡 য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ পতি র্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ ।।

------------------------------------------------ ঋগ্বেদ - ৬/৪৫/১৬ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর ।

💡 ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে ।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে ।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে ।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ ।।
----------------------------------------------অথর্ব্ববেদ -১৩/৪/২ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না । যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন । এক ঈশ্বর চিন্তন জ্ঞানীর, বহু ঈশ্বরের ধারণা মুর্খের ।

💡ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু ,
রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান ।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ ।।

----------------------------------------------- ঋগ্বেদ - ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্র 

বঙ্গানুবাদ : এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন ।

💡 তদেবাগ্নিস্তদাদিত্য স্তদ্বায়ু স্তদু চন্দ্রমাঃ ।
তদেব শুক্রং তদব্রহ্মতা আপঃ স প্রজাপতিঃ ।।

-------------------------------------------------- যজুর্ব্বেদ -৩২/১ মন্ত্র 

বঙ্গানুবাদ : সেই পরমাত্মাই অগ্নি, আদিত্য, বায়ু, চন্দ্রমা, শুক্র, ব্রহ্ম, আপ ও প্রজাপতি ।

অর্থাৎ , পরমাত্মা এক এবং অদ্বিতীয় কিন্তু বেদে এক ঈশ্বরের অনেক গুণবাচক নাম উল্লেখ্য করা হয়েছে । বেদে বর্ণিত ব্রহ্মা, রুদ্র, শিব, মহাদেব এরুপ অনেক নামের মতই ঈশ্বরের একটা গুণবাচক নাম হচ্ছে "বিষ্ণু"। দুষ্ট কে দন্ড দেন বলে তিনি রুদ্র, মঙ্গলময় এবং সকলের কল্যাণকারী বলে তিনি শিব, সূর্য্যাদি পদার্থ সমূহের প্রকাশক বলে তিনি মহাদেব এরুপ ভাবে সর্বত্র ব্যাপক বলে ঈশ্বরের আর এক নাম "বিষ্ণু"। বিষ্ণু অর্থ সর্ব ব্যাপক । কিন্তু শঙ্ক, চক্র, গদা, পদ্ম ধারি চতুর্ভুজ মূর্তি ; সমুদ্র ভাসমান সহস্র নাগ দারা আচ্ছাদিত বিশেষ কোন বিছানায় বিষ্ণু ঘুমিয়ে আছেন আর তার স্ত্রী লক্ষ্মী পা টিপছে এরুপ কোন বিষ্ণুর কথা বেদের কোথাও বলা হয়নি বা উল্লেখ নাই ।

অতএব এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বেদের সর্বত্র ব্যাপক বিষ্ণু আর অন্যদিকে তথাকথিত পৌরাণিক বিষ্ণু এক নয় । তাই কিরীটধারী এবং গদা ও চক্রহস্ত চতুর্ভূজ মূর্তি রুপি পৌরাণিক বিষ্ণু ও কৃষ্ণ অভিন্ন হলেও শ্রীকৃষ্ণ কখনো বেদের ঈশ্বর হতে পারে না । বেদের বিষ্ণু আর কৃষ্ণ এক নয় । যেহেতু ঋগ্বেদের "বিষ্ণু" আর পৌরাণিক "বিষ্ণু" এক নয় । তাই বেদের বিষ্ণু কথা আর কৃষ্ণ কথা ও এক নয় । বেদে বিষ্ণু-কথা থাকা মানেই তো কৃষ্ণ-কথা থাকা এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা আর অবাস্তব কল্পনা । তাছাড়া চতুর্ভুজ মূর্তির বিষ্ণু তো দূরের কথা বেদের ঈশ্বরের কোন মূর্তির বর্ণনা নাই ।

💡ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্যশঃ ।
হিরণ্য গর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেযা যস্মান্ন জাতঃ ইত্যেষঃ ।।

--------------------------------------------------যজুর্ব্বেদ - ৩২/৩ মন্ত্র 

বঙ্গানুবাদ : মহতী কীর্তিতেই যাঁহার নামের স্মরণ হয়, যাঁহার গর্ভে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী স্থান পাইয়াছে বলিয়া প্রত্যক্ষ, আমাকে তোমা হইতে বিমুখ করিও না- এইরুপ ভাবে যাঁহার প্রার্থনা করিতে হয় এবং জন্মগ্রহণাদি করেন নাই এজন্য যাঁহার উপাসনা বিধেয় সেই পরমাত্মার কোন প্রতিকৃতি বা মূর্তি নাই । ঈশ্বরের কোন পরিমাপ হয় না ।

উপনিষদেও মূর্তিশূণ্য বা অমূর্ত্ত বলা হয়েছে.........

💡 দিব্যো হ্যমুর্তঃ পূরূষঃ স বাহ্যাভ্যন্তরো হ্যজঃ ।
অপ্রাণো হ্যমনাঃ শূভো হ্যক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ ।।

----------------------------------------মূণ্ডকোপনিষৎ - ২/১/২ শ্লোক 

বঙ্গানুবাদ : সেই দিব্য মূর্তিশূণ্য পুরুষঃ বাহ্যে এবং অন্তরে অবস্থিতি করেন । তিনি জন্মশূন্য-প্রানশূন্য-মনশূন্য এবং বিশুদ্ধ, তিনি পরম অক্ষর হতেও উর্ধে । ( নীলোৎপল সিনহা )
তিনি দিব্য, তিনি অমূর্ত্ত, চিন্ময় পুরুষ, বাহিরে তিনি অন্তরে তিনি, তিনি জন্মহীন, প্রাণের অতীত, মনের অতীত, জ্যোতির্ময়, অক্ষরেরও পারে পরমতম তিনি । ( শ্রী অরবিন্দ )
কেও আমার সাথে দ্বিমত করতে পারেন বা যদি দ্বিমত করেন ; তবে তিনি উপযুক্ত প্রমাণ সহ আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাবেন ।

☞ বিষ্ণু শঙ্ক, চক্র, গদা, পদ্ম ধারি এটা বেদের কোথায় আছে ? কত নং মন্ত্রে আছে ?

☞ বেদের বিষ্ণু অর্থ সর্বব্যাপক কিন্তু তাকে দারোয়ান রেখে পাহারা দিয়ে থাকতে হয় এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ বিষ্ণু মহাসমুদ্রে ভাসমান, অসংখ্য নাগ বিশিষ্ট কোন বিছানায় শুনে আছেন এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ বিষ্ণু শুয়ে আছেন তার স্ত্রী তার পা টিপছে এটা বেদের কোথা আছে ?

☞ বিষ্ণুর স্ত্রী আছে এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ বিষ্ণু রুপ ধারণ করেছেন বা করেন এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ কোন এক কথিত ভিৃগু মুনি এসে বিষ্ণুর বুকে লাথি মেরেছে, এটা বেদের কোথায় আছে ? ভিৃগু বিষ্ণুকে লাথি তো মারলো এমন লাথি মেরেছে তাতে তার পায়ের চিহ্ন বিষ্ণুর বুকে ছাপ পড়ে গেছে এটা বেদের কোথায় আছে ???

এখন আর একটা প্রশ্ন আসতে পারে -

তাহলে কি গীতার মন্ত্রটা মিথ্যা ? 

উত্তর : বৈদিক ধর্মের উৎস এবং ভিত্তি হচ্ছে "বেদ"। আমাদের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ "বেদ"। তাই বেদের সাথে অন্য গ্রন্থের বিরোধ হলে, বেদ কখনো অপ্রমাণীয়, অগ্রহণ যোগ্য হতে পারে না, যেহেতু বেদ স্বয়ংই স্বতঃপ্রমাণ স্বরুপ । বেদের প্রমাণ বেদ নিজে, যদি অন্য কোন গ্রন্থের কথা বেদ বিরুদ্ধ হয়, তবে সেটা গ্রহণ যোগ্য নয় । স্বতঃপ্রমাণ অথবা পরতঃপ্রমাণ গ্রন্থ ছাড়া, অপর গ্রন্থ গ্রহণ করা কখনো উচিৎ নয় ।

( বেদ যখন নিজে নিজেকে প্রমান করে তাকে স্বতঃপ্রমাণ বলে, আর অন্য শাস্ত্র যখন তাকে প্রমাণ করে তাকে পরতঃপ্রমাণ বলে )