WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Wednesday, June 10, 2020

নিরাকার নির্গুণ এবং সাকার সগুণ খণ্ডন


  

অধিকাংশ লোক নিরাকারকে নির্গুণ এবং সাকারকে সগুণ বলে । তারা বলে যখন ঈশ্বর জন্ম গ্রহণ করেন না, তখন তিঁনি নির্গুণ আর যখন সাকার রূপ ধারণ করে অবতার হন, তখন তিঁনি সগুণ । 

খণ্ডন.................... ✍️

এটা তাদের অজ্ঞতা এবং মিথ্যা কল্পনা মাত্র । নির্গুণ মানে নিরাকার না এবং সগুণ মানে সাকার বুঝায় না । নির্গুণ মানে নিরাকার নয় তার প্রমাণ দেখুন বেদ, উপনিষদি শাস্ত্রে সেই নিরাকার পরমাত্মা কেই প্রাণস্বরুপ, সর্বব্যাপক, সর্ব্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্ববিদ্যার ধারণকর্তা অনাদি বলা হয়েছে । যদি নির্গুণ মানে নিরাকার হয়, তাহলে নিরাকার ব্রহ্মের কেন এইসব গুণের স্তুতি করা হয়েছে ?

আবার সগুণ মানে সাকার নয় ; বা সাকার রুপ ধারণ করে অবতার হন, তাই তিনি সগুণ সেটাও না; তার প্রমাণ দেখুন "বেদে" বলা হয়েছে পরমাত্মা সাকার রুপ নাই এবং শরীর ধারণ করেন না তাই তাকে শরীররহিত, জন্মরহিত, ছিদ্ররহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, মূর্তিশূন্য বা অমূর্ত্ত বলা হয়েছে ।

❏ স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম স্নাবিরং
শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধম্ কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোহর্থাম্ব্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।

                                                     🔥 যজুর্ব্বেদ - ৪০/৮ মন্ত্র  

বঙ্গানুবাদ : পরমাত্মা সর্বব্যাপক, সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্র
রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, রোগরোহিত, জম্মরহিত,শুদ্ধ,
নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি । তিনি
তাহার শ্বাশত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন ।

❏ য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ পতি র্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ ।।

                                                   🔥 ঋগ্বেদ - ৬/৪৫/১৬ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর ।

❏ যত্তদদ্রেশ্যমগ্রাহ্মমগোত্রমবর্ণমচক্ষূঃশ্রোত্রং তদপাণিপাদম্ ।
নিত্যং বিভূং সর্বগতং সূসুক্ষ্মং তদব্যয়ং যদ্ভুতয়োনিং পরিপশ্যন্তি ধীরাঃ ।।

                                       🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ১/১/৬ শ্লোক

বঙ্গানুবাদ : যিনি অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, অগোত্র, অবর্ণ এবং অচক্ষুঃ ও অশ্রোত্র, যিনি হস্তপাদশূন্য, নিত্য, বিভু, সর্বব্যাপী এবং অতিসূক্ষ্ম, সেই অব্যয় এবং সর্বভূতের কারনকে ধীরগণ সর্বতঃ দেখতে পান ।

❏ দিব্যো হ্যমুর্তঃ পূরূষঃ স বাহ্যাভ্যন্তরো হ্যজঃ ।
অপ্রাণো হ্যমনাঃ শূভো হ্যক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ ।।

                                            🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ২/১/২ শ্লোক 

বঙ্গানুবাদ : সেই দিব্য মূর্তিশূণ্য পুরুষঃ বাহ্যে এবং অন্তরে অবস্থিতি করেন । তিনি জন্মশূন্য-প্রানশূন্য-মনশূন্য এবং বিশুদ্ধ, তিনি পরম অক্ষর হতেও উর্ধে । ( নীলোৎপল সিনহা )
তিনি দিব্য, তিনি অমূর্ত্ত, চিন্ময় পুরুষ, বাহিরে তিনি অন্তরে তিনি, তিনি জন্মহীন, প্রাণের অতীত, মনের অতীত, জ্যোতির্ময়, অক্ষরেরও পারে পরমতম তিনি । ( শ্রীঅরবিন্দ )

পশু-পাখি, মানুষ প্রভৃতি জীব কর্ণের দ্বারা শব্দ গ্রহণ করে, চক্ষু দ্বারা দৃশ্যমান পদার্থ দেখে থাকে, ইন্দ্রিয় দ্বারা তারা রুপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শাদি বিষয় গ্রহণ করে কিন্তু ঈশ্বরের কোন প্রকার ইন্দ্রিয় নাই, তিনি নিত্য-অবিনাশি । শ্রুতি তাকে "সর্বজ্ঞ" ও "সর্ব্বশক্তিমান" বলে নির্দেশ করেছে । যিনি জ্ঞান ও ক্রিয়ার কর্ত্তা- তিনি জীবের ন্যায় কর্ণ, চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয় দ্বারাই বিষয় গ্রহণ করে থাকেন এবং তিনি মানুষের অনুরুপ ; কোন অজ্ঞানী কোন লোক যাতে এইরুপ মনে না করে, তার জন্য বলা হয়েছে....

যিনি মনদ্বারা চিন্তা করেন না, পন্ডিতগণ বলেন, যাঁর সত্তায় মন চিন্তাক্ষম হয়; যিনি চক্ষুদ্বারা দর্শন করেন না, যাঁর সত্তায় চক্ষুর বিষয়সমূহ লোকে দর্শন করে ; যিনি কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করেন না, যাঁর সত্তায় এই কর্ণ শ্রবণ করে ; যিনি প্রাণবায়ুদ্বারা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস করেন না, যাঁর সত্তায় প্রাণ নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চালনে সক্ষম হয় , তাঁকেই তুমি ব্রহ্ম বলে জানবে ; (আর) অন্য যা কিছু লোকে উপাসনা করে, তা ব্রহ্ম নয় ।

                                              🔥 কোনোপনিষৎ -১/৬-৯ শ্লোক 

সেই নিরাকার, সর্ব্বমূর্তি শূণ্য ব্রহ্ম হতেই বিশ্ব প্রকাশিত হয়েছে আবার, প্রলয়ে বিশ্ব সেই ব্রহ্মে বিলীন হবে ।

❏ তদেতৎ সত্যং যথা সূদীপ্তাৎ পাবকাদ্বিস্ফূলিঙ্গাঃ সহস্রশঃ প্রভবন্তে সরুপাঃ।
তথাহ্ক্ষরাদ্বিবিধাঃ সোম্য ভাবাঃ প্রজায়ন্তে তত্র চৈবাপি যন্তি ।।

                                             🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ২/১/১ শ্লোক 

বঙ্গানুবাদ : এটি সত্য, যেরুপ সুদীপ্ত পাবক হতে সেই পাবকেরই স্বরুপ বিস্ফুলিঙ্গসমূহ সহস্রশ নির্গত হয়, হে সৌম্য, সেইরুপ অক্ষর ব্রহ্ম থেকে বিবিধ জীব উৎপন্ন হয় এবং তাদের পুনরায় বিলীন হয় ।

❏ সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ
যেনাহ্ক্রমন্ত্যৃষয়ো হ্যাপ্তকামা যত্র তৎ সত্যস্য পরমং নিধানম্ ।।

                                            🔥 মূণ্ডকোপনিষৎ - ৩/১/৬ শ্লোক

বঙ্গানুবাদ : সত্যই জয়লাভ করে, অসত্য জয়লাভ করে না । যে পথদ্বারা আপ্তকাম ঋষিগণ সেই সত্যের পরম ধামে গমন করেন, সেই দেবযান পথও সত্যপ্রভাবেই বিতত রয়েছে ।

------------------------------------------------------------------------------

তথ্যসূত্র : বেদ , উপনিষদ , মূল লেখা "সত্যার্থ প্রকাশ"


No comments:

Post a Comment