WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Wednesday, June 10, 2020

বেদের বিষ্ণু আর যোগীরাজ শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন ব্যখ্যা

 


বেদের বিষ্ণু আর যোগীরাজ শ্রী কৃষ্ণ ভিন্ন ব্যাখ্যা 
অনেকে বলেন ঋগ্বেদ সংহিতায় যদি বিষ্ণু কথা থাকে তবে তবে কেন  কৃষ্ণ কথা থাকবে না ? 
বিষ্ণু কথা থাকা মানেই তো কৃষ্ণ কথা থাকা , 
বিষ্ণু ও কৃষ্ণ অভিন্ন । 

"কিরীটিধারী এবং গদা ও চক্রহস্ত তোমার সেই পূর্ব রূপই আমি 
দেখতে ইচ্ছা করি । হে সহস্রবাহো, হে বিশ্বমূর্তে, তুমি তুমি চতুৰ্ভূজ মূর্তি ধারণ করো"  
------------------------------------------------- গীতা - ১১ / ৪৬ শ্লোক 

এই শ্লোক দ্বারা স্পষ্ট যে অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে বিষ্ণু রূপ ধরণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে । এটা থেকে বোঝা যায় যে শ্রী বিষ্ণু ও শ্রী কৃষ্ণ স্বরূপত অভিন্ন । তাই ঋগ্বেদে বিষ্ণু কথা থাকা মানেই কৃষ্ণ কথা থাকা । তাই ঋগ্বেদ সংহিতায় শ্রী কৃষ্ণ নেই বলাটা মূর্খতা, অজ্ঞতা প্রকাশ পায় ।    
    
শঙ্কা সমাধান --------✍️ 

ঋগ্বেদে শ্রীকৃষ্ণ নেই সেটা বলাটা মূর্খতার প্রকাশ, না জ্ঞানের প্রকাশ তা যুক্তি, প্রমাণ দ্বারা পরিষ্কার হবে। পবিত্র বেদে বলা হয়েছে---

💡 য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ পতি র্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ ।।

------------------------------------------------ ঋগ্বেদ - ৬/৪৫/১৬ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর ।

💡 ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে ।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে ।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে ।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ ।।
----------------------------------------------অথর্ব্ববেদ -১৩/৪/২ মন্ত্র

বঙ্গানুবাদ : পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অভিহিত হয় না । যিনি তাঁহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন । এক ঈশ্বর চিন্তন জ্ঞানীর, বহু ঈশ্বরের ধারণা মুর্খের ।

💡ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু ,
রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান ।
একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ ।।

----------------------------------------------- ঋগ্বেদ - ১/১৬৪/৪৬ মন্ত্র 

বঙ্গানুবাদ : এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন ।

💡 তদেবাগ্নিস্তদাদিত্য স্তদ্বায়ু স্তদু চন্দ্রমাঃ ।
তদেব শুক্রং তদব্রহ্মতা আপঃ স প্রজাপতিঃ ।।

-------------------------------------------------- যজুর্ব্বেদ -৩২/১ মন্ত্র 

বঙ্গানুবাদ : সেই পরমাত্মাই অগ্নি, আদিত্য, বায়ু, চন্দ্রমা, শুক্র, ব্রহ্ম, আপ ও প্রজাপতি ।

অর্থাৎ , পরমাত্মা এক এবং অদ্বিতীয় কিন্তু বেদে এক ঈশ্বরের অনেক গুণবাচক নাম উল্লেখ্য করা হয়েছে । বেদে বর্ণিত ব্রহ্মা, রুদ্র, শিব, মহাদেব এরুপ অনেক নামের মতই ঈশ্বরের একটা গুণবাচক নাম হচ্ছে "বিষ্ণু"। দুষ্ট কে দন্ড দেন বলে তিনি রুদ্র, মঙ্গলময় এবং সকলের কল্যাণকারী বলে তিনি শিব, সূর্য্যাদি পদার্থ সমূহের প্রকাশক বলে তিনি মহাদেব এরুপ ভাবে সর্বত্র ব্যাপক বলে ঈশ্বরের আর এক নাম "বিষ্ণু"। বিষ্ণু অর্থ সর্ব ব্যাপক । কিন্তু শঙ্ক, চক্র, গদা, পদ্ম ধারি চতুর্ভুজ মূর্তি ; সমুদ্র ভাসমান সহস্র নাগ দারা আচ্ছাদিত বিশেষ কোন বিছানায় বিষ্ণু ঘুমিয়ে আছেন আর তার স্ত্রী লক্ষ্মী পা টিপছে এরুপ কোন বিষ্ণুর কথা বেদের কোথাও বলা হয়নি বা উল্লেখ নাই ।

অতএব এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বেদের সর্বত্র ব্যাপক বিষ্ণু আর অন্যদিকে তথাকথিত পৌরাণিক বিষ্ণু এক নয় । তাই কিরীটধারী এবং গদা ও চক্রহস্ত চতুর্ভূজ মূর্তি রুপি পৌরাণিক বিষ্ণু ও কৃষ্ণ অভিন্ন হলেও শ্রীকৃষ্ণ কখনো বেদের ঈশ্বর হতে পারে না । বেদের বিষ্ণু আর কৃষ্ণ এক নয় । যেহেতু ঋগ্বেদের "বিষ্ণু" আর পৌরাণিক "বিষ্ণু" এক নয় । তাই বেদের বিষ্ণু কথা আর কৃষ্ণ কথা ও এক নয় । বেদে বিষ্ণু-কথা থাকা মানেই তো কৃষ্ণ-কথা থাকা এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা আর অবাস্তব কল্পনা । তাছাড়া চতুর্ভুজ মূর্তির বিষ্ণু তো দূরের কথা বেদের ঈশ্বরের কোন মূর্তির বর্ণনা নাই ।

💡ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্যশঃ ।
হিরণ্য গর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেযা যস্মান্ন জাতঃ ইত্যেষঃ ।।

--------------------------------------------------যজুর্ব্বেদ - ৩২/৩ মন্ত্র 

বঙ্গানুবাদ : মহতী কীর্তিতেই যাঁহার নামের স্মরণ হয়, যাঁহার গর্ভে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী স্থান পাইয়াছে বলিয়া প্রত্যক্ষ, আমাকে তোমা হইতে বিমুখ করিও না- এইরুপ ভাবে যাঁহার প্রার্থনা করিতে হয় এবং জন্মগ্রহণাদি করেন নাই এজন্য যাঁহার উপাসনা বিধেয় সেই পরমাত্মার কোন প্রতিকৃতি বা মূর্তি নাই । ঈশ্বরের কোন পরিমাপ হয় না ।

উপনিষদেও মূর্তিশূণ্য বা অমূর্ত্ত বলা হয়েছে.........

💡 দিব্যো হ্যমুর্তঃ পূরূষঃ স বাহ্যাভ্যন্তরো হ্যজঃ ।
অপ্রাণো হ্যমনাঃ শূভো হ্যক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ ।।

----------------------------------------মূণ্ডকোপনিষৎ - ২/১/২ শ্লোক 

বঙ্গানুবাদ : সেই দিব্য মূর্তিশূণ্য পুরুষঃ বাহ্যে এবং অন্তরে অবস্থিতি করেন । তিনি জন্মশূন্য-প্রানশূন্য-মনশূন্য এবং বিশুদ্ধ, তিনি পরম অক্ষর হতেও উর্ধে । ( নীলোৎপল সিনহা )
তিনি দিব্য, তিনি অমূর্ত্ত, চিন্ময় পুরুষ, বাহিরে তিনি অন্তরে তিনি, তিনি জন্মহীন, প্রাণের অতীত, মনের অতীত, জ্যোতির্ময়, অক্ষরেরও পারে পরমতম তিনি । ( শ্রী অরবিন্দ )
কেও আমার সাথে দ্বিমত করতে পারেন বা যদি দ্বিমত করেন ; তবে তিনি উপযুক্ত প্রমাণ সহ আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাবেন ।

☞ বিষ্ণু শঙ্ক, চক্র, গদা, পদ্ম ধারি এটা বেদের কোথায় আছে ? কত নং মন্ত্রে আছে ?

☞ বেদের বিষ্ণু অর্থ সর্বব্যাপক কিন্তু তাকে দারোয়ান রেখে পাহারা দিয়ে থাকতে হয় এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ বিষ্ণু মহাসমুদ্রে ভাসমান, অসংখ্য নাগ বিশিষ্ট কোন বিছানায় শুনে আছেন এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ বিষ্ণু শুয়ে আছেন তার স্ত্রী তার পা টিপছে এটা বেদের কোথা আছে ?

☞ বিষ্ণুর স্ত্রী আছে এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ বিষ্ণু রুপ ধারণ করেছেন বা করেন এটা বেদের কোথায় আছে ?

☞ কোন এক কথিত ভিৃগু মুনি এসে বিষ্ণুর বুকে লাথি মেরেছে, এটা বেদের কোথায় আছে ? ভিৃগু বিষ্ণুকে লাথি তো মারলো এমন লাথি মেরেছে তাতে তার পায়ের চিহ্ন বিষ্ণুর বুকে ছাপ পড়ে গেছে এটা বেদের কোথায় আছে ???

এখন আর একটা প্রশ্ন আসতে পারে -

তাহলে কি গীতার মন্ত্রটা মিথ্যা ? 

উত্তর : বৈদিক ধর্মের উৎস এবং ভিত্তি হচ্ছে "বেদ"। আমাদের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ "বেদ"। তাই বেদের সাথে অন্য গ্রন্থের বিরোধ হলে, বেদ কখনো অপ্রমাণীয়, অগ্রহণ যোগ্য হতে পারে না, যেহেতু বেদ স্বয়ংই স্বতঃপ্রমাণ স্বরুপ । বেদের প্রমাণ বেদ নিজে, যদি অন্য কোন গ্রন্থের কথা বেদ বিরুদ্ধ হয়, তবে সেটা গ্রহণ যোগ্য নয় । স্বতঃপ্রমাণ অথবা পরতঃপ্রমাণ গ্রন্থ ছাড়া, অপর গ্রন্থ গ্রহণ করা কখনো উচিৎ নয় ।

( বেদ যখন নিজে নিজেকে প্রমান করে তাকে স্বতঃপ্রমাণ বলে, আর অন্য শাস্ত্র যখন তাকে প্রমাণ করে তাকে পরতঃপ্রমাণ বলে )

No comments:

Post a Comment