WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Thursday, June 11, 2020

"হরে কৃষ্ণ", "জয় রাধে" আদি কথা গুলি কি শাস্ত্র বর্ণিত ?

  

"হরে কৃষ্ণ", "জয় রাধে", "রাধে রাধে", "জয় গুরু" প্রভৃতি কথা গুলো প্রায় লোক বলে থাকেন , কোনো পরিচিত ব্যক্তি বা নতুন পরিচিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দেখার সাথে সাথে তাদের উদ্দেশ্যে এই কথা গুলো বলা হয়ে থাকে । কিন্তু আপনাদের কি কখনো মনে প্রশ্ন জাগে না যে এই কথা গুলো কোথা থেকে আসলো বা কোন শাস্ত্র বর্ণিত আছে এই কথা গুলো ? 

আসলে এ গুলো কোনো বৈদিক শাস্ত্রে নেই । আমরা মানুষের দেখাদেখি এই কথা গুলো বলে থাকি । আমাদের সনাতন শাস্ত্রে "নমস্কার" দেওয়ার কথা বলা আছে । 

অনেকে বলে যে শুধু মাত্র ভাগবানকেই নমস্কার দেওয়া যায় । অন্যদের অর্থাৎ কোনো মানুষকে নমস্কার দেওয়া যায় না । 
আসুন দেখে নেওয়া যাক শাস্ত্র কি বলছে -

“নমস্কার জ্যৈষ্ঠদেবকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেবকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, ধনী, গরীব, জ্ঞানী ও অল্প জ্ঞানী সকলকে"।

                                                             🔥 যজুর্ব্বেদ - ১৬/৩২    

পবিত্র বেদে সবাইকে নমস্কার দিতে বলেছে । 
এখন আপনি এই বিষয়ে কি বলবেন ?

যেখানে আমাদের সনাতন ধর্মের সংবিধান ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ বলছে সবাইকে নমস্কার দিতে । সেখানে আমি আর আপনি নিষেধ করার কে ?

এখন আপনি যদি বলেন, "আমি বেদ মানিনা"।  তাহলে আপনার জন্য একটা সুন্দর নাম অপেক্ষা করছে ।
চলুন দেখে নিই -

“যে ব্যক্তি বেদের নিন্দা অর্থাৎ অপমান করে, (বেদ) ত্যাগ ও (বেদ) বিরুদ্ধ আচরণ করে তাহাকে নাস্তিক বলে" ।

                                                             🔥 মনুসংহিতা - ২/১১

যেহেতু আপনি বেদ মানেন না, সেহেতু আপনি নাস্তিক । রাগ করবেন না । এ কথাটা আমার বলা নয়, মনুসংহিতা বলছে । আমাদের গীতাও শাস্ত্র অনুযায়ী কার্য করতে বলে ।

“যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করিয়া ইচ্ছামত কার্য করে, সে কখনও সিদ্ধিলাভ করিতে পারে না । তাহার শান্তি, সুখ বা মোক্ষ কিছুই লাভ হয় না" । 
                                                                    🔥 গীতা - ১৬/২৩

আপনি যদি এখন শাস্ত্রবিধি না মেনে, "হরে কৃষ্ণ, জয় গুরু, জয় রাধে, রাধে রাধে" এগুলো বলেন তাহলে আপনার কোনো লাভ হবে না ।

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে , যেহেতু এগুলো শাস্ত্রে নেই , 
তাহলে আমরা এগুলো বলি কেন ? 

উত্তর : আমরা অনুকরণ প্রিয় । একজনের দেখাদেখি অনেক কাজ করে থাকি । এটাও ঠিক এমনভাবে চলে এসেছে । সবাই শার্ট, প্যান্ট পরে বলে আমরা তাদের দেখে এগুলো পরিধান করি । এমন অনেক কিছুই রয়েছে ।

আবার প্রশ্ন জাগতে পারে , 
তাহলে "হরেকৃষ্ণ" জপ বা "একনাম কীর্ত্তন"কেন করা হয় ?
কোন শাস্ত্রে এগুলো করার কথা বলা আছে ? 

উত্তর : আসলে এগুলোর উত্তরও একই হবে দেখাদেখি । তবে কিছু বইতে আছে । সেগুলোকে আমরা শাস্ত্র বলতে পারি না । 
যদি বলেন , কলিসন্তরণ উপনিষদে বলা আছে –

তাহলে , জেনে নিন কলিসন্তরণ উপনিষদ বৈদিক উপনিষদ নয় । কারণ কোনো শ্রুতিগ্রন্থই হোক  বা স্মৃতিগ্রন্থ, বা যে কোনো মুনি ঋষির লেখা অন্য কোনো গ্রন্থ যদি বেদ বিরুদ্ধ হয় বা বেদের বিপরীতে লেখা হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় না । 

অর্থাৎ, যে গ্রন্থ বেদের সহিত কোনো মিল নাই সে গ্রন্থ কখনোই সনাতন ধর্মের গ্রহণ যোগ্য  নয় , অবশ্যই বর্জনীয় । 
কারণ বেদ হল সনাতন ধর্মের প্রধান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ । 

এই উপনিষদ বেদের সহিত কোথাও কোনো ভাবে মিল নেই । 
তবুও কিছু লোক এই কলিসন্তরণ উপনিষদ কে প্রমাণ হিসাবে দেখায় । কলিসন্তরন উপনিষদে 'হরে' 'কৃষ্ণ' আর 'রাম' এই তিনটি নাম এই ভাবে বর্ণিত আছে  -

             "হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে 
              হরে  কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে"

রাম নাম দিয়ে শুরু হয়েছে আর কৃষ্ণ নাম দিয়ে শেষ হয়েছে ।
পরবর্তীতে 'হরে' 'কৃষ্ণ' আর 'রাম' এই তিনটি নাম দ্বারা হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র রচিত হয় বৈষ্ণবদের । যা বর্তমানে এই তিন নাম কে এই ভাবে শোনা যায় সবার মুখে –

              "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে 
               হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে"

যা কলিসন্তরণ উপনিষদের সহিত কোথাও নাই😀 । কলিসন্তরণ উপনিষদে যেভাবে বলা আছে, বর্তমানে কেউ সেভাবে মানে না । নিজেরা একটু পন্ডিতি করে ঘুরিয়ে নিয়ে সেটাকে ১৬ শব্দের  "হরেকৃষ্ণ" মহামন্ত্র বানিয়ে নিয়েছে 😆 । 

ষোড়শ শতাব্দীর সময় থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । এই মন্ত্রের রচয়িতা হলেন রঘুনন্দন ভট্ট যিনি নবাব হোসেন শাহের দরবারে কবিত্ব করতেন । চৈতন্য মহাপ্রভু বৈদিক ধর্ম প্রচারের ফলে হুসেন শাহ তাকে বাংলায় প্রবেশে বাধা দেন, এরপর তিনি রঘুনন্দন কে আদেশ করেন বৈদিক ধর্মের বিপরীতে কিছু রচনা করার জন্য, তখন তিনি এই কলিসন্তরন উপনিষদ রচনা করেন ।

১৯৬৫ সাল থেকে মন্ত্রটি অভয় চারণারবিন্দ ভক্তি বেদান্ত এবং তার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভবনামৃত সংঘ দ্বারা ভারতের বাইরে পরিচিত হয় যা "হরে কৃষ্ণাস" নামে খ্যাত । তাই কলি সন্তরণ উপনিষদের সাথে বেদের কোন সম্পর্কই নাই । 

আবার অনেকে এটাও বলে যে, কলিযুগে নাম কির্তনই উদ্ধারের পথ । এই কথাটাও হাস্যকর । কারণ এই কথাটা বৈদিক শাস্ত্রে কোথাও নেই । এটা মানুষ ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে বলে থাকে ৷ আর যদি সেটা যুগধর্ম বলা হয়, তাহলে আসুন, 
যুগধর্ম নিয়ে শাস্ত্র কি বলে দেখে নিই -

“সত্যযুগে তপস্যাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম,
ত্রেতাযুগে জ্ঞানই (আত্মজ্ঞানই) শ্রেষ্ঠ,
দ্বাপরে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ।”

                                                          🔥 মনুসংহিতা - ১/৮৬

এখানে দেখুন মনুসংহিতায় কলিযুগে দানকে শ্রেষ্ঠ বলেছে । সুতরাং যারা নাম কির্তনকে কলিযুগের যুগধর্ম হিসেবে প্রচার করছে, তারা মিথ্যা বলছে । তাদের কাছে যথাযথ প্রমাণ নেই ।
আপনি এখন কি করবেন ? মানুষের কথা ধর্ম পালন করবেন নাকি শাস্ত্র অনুযায়ী ? এটা নির্ভর করছে আপনার উপর ।
সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।


 লিখছেন :  রনি সত্যার্থী 


1 comment:

  1. অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমষ্কার🙏🙏

    ReplyDelete