WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Thursday, June 25, 2020

জাকির নায়েকের যুক্তি অনুযায়ী মুহম্মদ কল্কি অবতার

জাকির নায়েক নবীকে হিন্দুদের অবতার বানানোর চেষ্টা করলেন
মানে তিনি হিন্দুদের অবতারবাদে বিশ্বাস করলেন, মানে তিনি কূর্ম অবতার, বুদ্ধ অবতার, বরাহ অবতার প্রভৃতিকে মেনে নিলেন, কারণ এগুলো অবতারের পরেই না কল্কি অবতারের আগমন। অবতারবাদকে মেনে নিলেন বিধায়
তিনি ভাগবত গীতায় বিশ্বাস করলেন। ভাগবতগীতায় বিশ্বাস করলেন বিধায় তিনি জন্মান্তরবাদকেও মেনে নিলেন, কারণ ভাগবত গীতায়:-- “অবতারবাদ” এবং “জন্মান্তরবাদ” সমান গুরুত্ব পেয়েছে। জাকির নায়েক তাহলে জন্মান্তরবাদেও বিশ্বাস করে
ফেললেন! ইসলাম বিরোধী এইসব কাজ করে ইসলামের সম্মান
কি তিনি বৃদ্ধি করলেন? আর তাকে নিয়েই ওনার ভক্তদের কি উল্লাস!!
প্রশ্ন হচ্ছে:----
ক) সনাতন ধর্মে কোনো অবতার মত প্রকাশের
স্বাধীনতা হরণ করেছেন?
খ) নাস্তিককে কতল করার নির্দেষ সনাতন ধর্মের
কোনো অবতার
দিয়েছেন?
গ) সনাতন ধর্ম ত্যাগ করলে হত্যার বিধান কোনো
অবতার দিয়েছেন?
সর্বোপরি, সনাতন ধর্ম অনুযায়ী দশটি প্রধান অবতার
হচ্ছে স্বয়ং ভগবানের অবতার। তার মানে দশ
অবতারের শেষ অবতার কল্কি অবতাররুপে স্বয়ং
ভগবান অবতরণ
করবেন পৃথিবীতে। কোন সাহসে জাকির নায়েক
মুহম্মদকে কল্কি অবতার বানিয়ে দিলেন? কারণ অন্য
অবতারের মত কল্কি অবতারও স্বয়ং ভগবান, তিনি
কোনো বার্তা বাহক নন।
তাহলে জাকির নায়েকের
যুক্তি অনুযায়ী মুহম্মদ কল্কি অবতার
হলে মুহম্মদই স্বয়ং স্রষ্টা হয়ে যাচ্ছে!!! জাকির
নায়েকের এই
স্পর্ধাকে মুসলিমরা কেমনে ক্ষমা করে দিল?

Saturday, June 20, 2020

বেদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়







প্রথম পর্ব :
-------------------------

স্তুতা ময়া বরদা বেদমাতা প্রচোদয়ন্তাং পাবমানী দ্বিজানাম ।
আয়ু প্রাণং প্রজাং পশুং কীর্তিং দ্রাবিণং ব্রহ্ম বর্চসম্ ।।
মহ্যং দত্ত্বা ব্রজত ব্রহ্মলোকম ।।

ভক্তের উক্তি :
মনের উৎসাহ দাত্রী , দ্বিজদের পবিত্রকারিণী , শ্রেষ্ঠ জ্ঞান দাত্রী বেদমাতাকে আমি অধ্যায়ন করিয়াছি ।

পরমেশ্বরের উক্তি : 
আয়ু , প্রান , প্রজা , পশু , কীর্তি , ব্রহ্মতেজ
আমাতে অর্পণ করিয়া তুমি মুক্তি প্রাপ্ত হও ।।

🔥 অথর্ববেদ - ১৯/৭১/১ মন্ত্র.....................................................✍️

"বেদ" শব্দটি 'বিদ্' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন । বিদ্' ধাতুর অর্থ - 'জানা' ।  সেজন্য বেদ শব্দের ধাতুগত অর্থ - জ্ঞান বা বিদ্যা । বিদ্যা দুই প্রকার পরা ও অপরা । জগৎকারণ পরব্রহ্ম বিষয়ক অলৌকিক জ্ঞান - পরাবিদ্যা । আর জাগতিক বিষয় সম্বন্ধীয় যাবতীয় লৌকিক জ্ঞান অপরা বিদ্যা । বেদে পরা ও অপরা এই দুই বিদ্যাই উপস্থিত । সেইজন্য বেদকে সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডার বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে বেদের বেদত্ব পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা প্রকাশের জন্য । পরাবিদ্যাই শ্রেষ্ঠ বিদ্যা ।
"বিদ্' ধাতুর চারপ্রকার অর্থ হয় :

"বেত্তি বেদ বিদ জ্ঞানে"

"বিন্তে বিদ বিচারণে"

"বিদ্যতে বিদ সত্তায়ং"

"লাভে বিন্দতি বিন্দতে" 

এই চার প্রকার অর্থ হচ্ছে :

"জানা"

"বিচার করা"

"অবস্থান করা"

"লাভ করা"

যা পাঠ করলে মানুষ সত্য বিদ্যা জানতে পারে , সত্যাসত্যের বিচার করতে পারে , প্রকৃত বিদ্বান হতে পারে এবং প্রকৃত শান্তি ও আনন্দ লাভ করা সম্ভব , তার নাম বেদ ।

👉 মহর্ষি ব্যাসদেব বেদকে চারভাগে করে ।
তাঁর নিজের শিষ্য পৈলকে "ঋগ্বেদ", বৈশম্পায়ন কে "যজুর্বেদ", জৈমিনিককে "সামবেদ" এবং সুমন্ত কে "অথর্ববেদ" প্রচারের জন্য নির্বাচন করেন । বেদ অপৌরুষেয় এবং নিত্য অর্থাৎ কোন পুরুষ বা মানুষের রচিত নয় । ঋগ্বেদে পুরুষ সূক্ত বলেন - বেদ পরমেশ্বরের রচিত নহে । শ্বাস প্রশ্বাসের । মত বেদমন্ত্র স্বতঃ নির্গত । এইজন্য বেদ নিত্য ও অপৌরুষেয় ।

👉 বেদের বিভিন্ন নাম শ্রুতি , ত্রয়ী , নিগম ইত্যাদি। 'শ্রু' ধাতুর অর্থ শ্রবণ করা , সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত যাতে মানুষ সমস্ত সত্যবিদ্যা শ্রবণ করতে পারে তাঁর নাম শ্রুতি । 
তাছাড়া বেদ পূর্বে গুরুশিষ্য পরম্পরাক্রমে যুগ যুগ ধরে শ্রুত হয়ে ঋষি সমাজে প্রচলিত ছিল বলে বেদের অপর নাম শ্রুতি । আর বেদমন্ত্র তিন শ্রেণীতে বিভক্ত - ঋক , যজু , সাম অর্থাৎ  পদ্য , গদ্য , গীতি । সেই জন্য বেদকে ত্রয়ী বলা হয় । আর নিগম শব্দের অর্থ নিশ্চিতরুপে গমন করানো । যে শাস্ত্র পাঠে সাধক কে নিশ্চিতরুপে পরমেশ্বরের নিকট গমন করায় বা নিয়ে যায় তাই নিগম বা বেদ ।



দ্বিতীয় পর্ব :
-------------------------

প্রতি বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত - মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ , মন্ত্রভাগের অপর নাম সংহিতা। এতে প্রধানত যাগ যজ্ঞাদি ক্রিয়ার বিধি নিষেধ , মন্ত্র ও অর্থবাদ প্রভৃতি বিষয়গুলি উল্লেখিত আছে আর সংহিতা ভাগে যে সব গূঢ় রহস্য প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত আছে , সেই সব অপ্রকাশিত অর্থ শ্রুতি নিজেই যে অংশে প্রকাশ করেছে , সেই অংশের নাম ব্রাহ্মণ । ব্রাহ্মণ ভাগে প্রধানত স্তোত্র , ইতিবৃত্ত , উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যা বিষয় উল্লেখ আছে । এই অংশ গুলি গদ্যে রচিত ।

👉 এই ব্রাহ্মণাংশের অংশবিশেষকে "আরণ্যক" বলে । কারন উহা বানপ্রস্থাশ্রমে অরণ্যবাসীদের পাঠ্য ছিল । বানপ্রস্থ অরণ্যবাসীদের পক্ষে যাগযজ্ঞ কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং উচ্চতর জ্ঞানলাভের জন্য তাদের হৃদয় ব্যাকুল হওয়ায় আত্মোপলবদ্ধির জন্য ধ্যান , জপ , প্রার্থনা , উপাসনা ছিল তাদের মুখ্য কাজ যাগ যজ্ঞ ছিল গার্হস্থ জীবনের প্রাধান কাজ । আরণ্যকও গদ্যে রচিত ।

👉 বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ অংশ হলো উপনিষদ । উপনিষদ ব্রহ্মবিদ্যাই বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করেছে । ব্রহ্মবিদ্যাই বেদের সারবস্তু , সেজন্য এর নাম বেদান্ত । অজ্ঞান নিবৃত্তি ও ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায় তাই বেদান্তের অপর নাম উপনিষৎ । উপনিষদের অর্থই ব্রহ্মবিদ্যা । সংহিতা ও ব্রাহ্মণ এই দুই উপনিষদের মধ্যে রয়েছে তাই তারা সংহিতোপনিষদ বা ব্রাহ্মণউপনিষদ নামেও উল্লেখিত হয়ে থাকে ।
বেদের এই চারটে ভাগ সংহিতা , ব্রাহ্মণ , আরণ্যক ও উপনিষদ এদের মধ্যে একটি ক্রমপর্যায় আছে । যেমন প্রথমে সংহিতা , তারপর ব্রাহ্মণ, তারপর আরণ্যক ও সর্বশেষ উপনিষৎ ।

👉 সমস্ত বেদকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় - কর্মকান্ড ও জ্ঞানকাণ্ড । এরমধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণে প্রধানত কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ।  আর আরণ্যক ও উপনিষদ জ্ঞানকাণ্ডেরর অন্তর্গত । এতে উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যার উল্লেখ আছে । কর্মকাণ্ড জীবকে অভ্যুদয় ধনরত্নাদি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং পারলৌকিক স্বর্গাদি ফল প্রদান করে । কিন্তু জ্ঞানকাণ্ড মানুষের চিত্তশুদ্ধি দ্বারা মুক্তি মোক্ষ দান করে ।কর্মকাণ্ড মানুষকে প্রবৃত্তি মার্গে আর জ্ঞানকাণ্ড মানুষকে নিবৃত্তি মার্গে চালনা করার প্রেরণা দিয়ে মানুষের জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে ।



তৃতীয় পর্ব :
-------------------------

বেদমন্ত্র গুলি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত পদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম ঋক গদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম যজু  এবং গানাত্মক মন্ত্রের নাম সাম । সেজন্য বেদের অপর এক নাম ত্রয়ী । ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহার্য এক এক শ্রেণীর মন্ত্রগুলিকে এক এক স্থানে বিভক্ত করে ঋক,যজু,সাম এই তিনটি বেদ গ্রন্থাকারে বিভক্ত করেছিলেন । আর যজ্ঞে ব্যবহার্য নয় অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি যে বেদের অন্তর্ভুক্ত করলেন তাকে অথর্ববেদ বলা হয় ।

পবিত্র বেদ অনাদি ও অনন্ত, এর জ্ঞানরাশি অনাদি অনন্ত ।
ঋগ্বেদের ১০/১৯০/৩ মন্ত্রে উল্লেখ আছে -
"অউম সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথা পূর্বমকল্পয়ৎ"
প্রত্যেক সৃষ্টির পূর্বে আর একটি সৃষ্টি ছিল ।
অতএব যেহেতু সৃষ্টি অনাদি , সুতরাং সৃষ্টির পূর্ববর্তী বেদও অনাদি ।

👉 বেদই সনাতনের ধর্ম , বেদই সনাতনের কর্ম , এক কথায় যিনি বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেন বর্তমানে তিনিই সনাতনী নামে অভিহিত হন । বেদ না মানলে তিনি সনাতন নহেন । বেদে সকল শ্রেণীর সকল হিন্দুর সর্বরকম উপাসনার সার সামগ্রী নিহিত আছে ।বৈদিক পরবর্তিকালে জগতে যত কিছু উপাসনা পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে সবই  বৈদিক উপাসনার অনুকৃত মাত্র । সেজন্য দেখিতে পাই বৈদিক ঋষিরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ তৃণ থেকে নীরাকার নির্গুণ পরব্রহ্মের পর্যন্ত উপাসনা করেগেছেন । বেদের মতে -

"সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"
"ঈশা বাস্যামিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ"

"জগতে চেতন অচেতন যত কিছু বস্তু আছে সমস্ত কিছুর মধ্যেই ব্রহ্ম বিদ্যমান । এই পৃথিবীতে যত জাতি যত ধর্ম সসম্প্রদায় উৎপত্তি হয়েছে , সব জাতির সকল ধর্মের সার সামগ্রী বৈদিক ধর্মের অন্তর্ভুক্ত

বেদ মন্ত্র গুলির মধ্যে একটা নিজস্ব দুর্বার শক্তি নিহিত । তা না হলে কয়েক হাজার বছর ধরে অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও এগুলি আমাদের কাছে পৌঁছোলো কিভাবে ?



                                        🙏 নমস্তে  🙏



Friday, June 19, 2020

ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদ ও পুরাণ


ব্রহ্মবৈবর্ত নামে একটি পুরাণ রয়েছে। এই পুরাণটি রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। রাধা-কৃষ্ণের নানা প্রকার লীলার বর্ণনা করাই এই পুরাণের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণকে ভ্রষ্ট  ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম পৃষ্ঠপোষক রূপে দেখা যায়। ব্রহ্মবৈবর্তের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে একটি কাহিনী আছে।  কৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ একবার ইন্দ্রযজ্ঞের আয়োজন করছিলেন। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কৃষ্ণ সেই ইন্দ্রযজ্ঞের বিরোধীতা করতে থাকেন। এই বিরোধীতা করার সময়  কৃষ্ণের মুখ থেকে কিছু কথা বেরিয়ে আসে, যে কথাগুলো আসলে ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণদের ব্রাহ্মণ্যবাদী ইউটোপিয়ার প্রধান বক্তব্য। ব্রাহ্মণেরা তাদের রচিত নানান শাস্ত্রে নিজেদের স্বার্থে জাতপাত তৈরি করে সমাজের নানা স্তরের মানুষদের শোষণ করেছে, ফায়দা লুটেছে। তারা হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুসমাজের মগডালে বসে ছড়ি ঘুরিয়েছে এবং সুযোগ পেলেই নিজেদের দেবতা বলে ঘোষণা করেছে।  
যাইহোক,  কৃষ্ণ আসলে কি বলেছিলেন তা শোনা যাক। কৃষ্ণ বলেন-
.
“ বেদে বলা আছে ব্রাহ্মণেরা পৃথিবীর দেবতা। হে পিতা! দেবতার পূজা করার চাইতে ব্রাহ্মণের পূজা করা সুপ্রশস্ত।“ ২১/ ৫৪
.
জনার্দনের রূপ ধরে ব্রাহ্মণেরা নৈবদ্য গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণ সন্তুষ্ট হলে সকল দেবতা সন্তুষ্ট হয়। ২১/৫৫
.
যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণের অর্চনা করে তার কাছে দেবপূজা মূল্যহীন। ব্রাহ্মণদের পূজা করলেই সমস্ত দেবতাদের পূজা করা হয়। ২১/৫৬
.
দেবতাদের নৈবদ্য দেওয়ার পর যদি ব্রাহ্মণদেরও নৈবদ্য না দেওয়া হয়  তবে সেই নৈবদ্য ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং সেই পূজা নিষ্ফল হয়ে যায়। ২১/৫৭  
.
যে ব্রাহ্মণদের নৈবদ্য দান করে সে সীমাহীন ফল লাভ করে এবং দেবতারা তুষ্ট হয়ে তার গৃহে বাস করেন। ২১/৫৮
.
যদি কোনো মূঢ় ব্যক্তি ব্রাহ্মণদের নৈবদ্য দান না  করে কেবল দেবতাকে নৈবদ্য দান করে অথবা নিজে তা ভক্ষণ করে তাহলে বলা যায় সে দেবতাদের ধন চুরি করছে, যার ফলস্বরূপ সে নরকে গমন করবে। ২১/৫৯  
.
কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি যদি দেবতাদের নৈবদ্য না দিয়ে ব্রাহ্মণের তা প্রদান করেন, তাহলে ব্রাহ্মণেরা সেই নৈবদ্য ভক্ষণ করলেই দেবতারাও তুষ্ট হন এবং তারা স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন। ২১/৬১
.
তাই সবরকমভাবেই ব্রাহ্মণদের অর্চনা করা উচিত কারণ তাদের সেবা করার মাধ্যমেই ইহলোক এবং পরলোকে প্রশস্ত ফল লাভ করা যায়। ২১/৬২
.
জপ,তপ, পূজা, যজ্ঞ, দান, মহোৎসব এইসকল কর্মের সমাপ্তি হয় ব্রাহ্মণদের তুষ্টি এবং দক্ষিণার মাধ্যমে। ২১/৬৩
.
ব্রাহ্মণের শরীরে সকল দেবতা বাস করেন। ব্রাহ্মণের পায়ে সকল তীর্থ বিরাজ করে এবং তার পদধূলিতে সকল পুণ্য বিরাজ করে।  ২১/৬৪
.
যে জল দ্বারা ব্রাহ্মণের পা ধৌত করা হয়, তাতে সকল তীর্থস্থান বিরাজ করে। সেই জলের স্পর্শে সকল তীর্থে স্নানের ফল লাভ হয়। ২১/ ৬৫
.
হে বল্লভ, কেউ যদি ভক্তিভরে ব্রাহ্মণের সেই জল গ্রহণ করে, তবে তার সব রোগ দূর হয়ে যায়। সে নিঃসন্দেহে তার সাত জন্মে করা সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। ২১/৬৬
.
পঞ্চবিধ পাপ করার পরও যে ব্রাহ্মণের কাছে নত হয় , সে সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হয়ে যায়, যেমনি  তীর্থস্থানে স্নান করেও  সে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। ২১/৬৭
.
ব্রাহ্মণের স্পর্শেই পাপী পাপমুক্ত হয়ে যায় এবং ব্রাহ্মণের দর্শনেই সব পাপ দূর হয়ে যায়। এটাই বেদের সিদ্ধান্ত। ২১/৬৮
.
বিদ্বান এবং মূর্খ সকল ব্রাহ্মণেরা  বিষ্ণুর বিগ্রহ স্বরূপ। যেসকল ব্রাহ্মণেরা বিষ্ণুর সেবা করে, তারা তার প্রাণাধিকপ্রিয়। হরি ভক্ত ব্রাহ্মণদের প্রভাব দুর্লভ, এটা শ্রুতির মত। কোনো তীর্থস্থানেও যদি কোনো পাপ করা হয়, তবে ব্রাহ্মণের পদধূলিতে তা দূর হয়ে যায়। তাদের আলিঙ্গন, তাদের সুমধুর বাক্য, তাদের দর্শন, তাদের স্পর্শ মানুষকে সকল পাপ হতে মুক্ত করে। ২১/৬৯-৭২
.
সকল তীর্থ ভ্রমণ করে, তাতে স্নান করে যে পুণ্য অর্জিত হয় , তা বিষ্ণুভক্ত ব্রাহ্মণের দর্শনমাত্রেই অর্জিত হয়। ২১/৭৩
.
হে গোপেন্দ্র,এসব দ্রব্য ব্রাহ্মণদের যারা না দেয়, তারা ভবিষ্যতে ভস্মীভূত হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। ২১/৭৮”
.
এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, ব্রাহ্মণ আর দেবতাদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই, বরং অনেক স্থানে দেখা যায়, ব্রাহ্মণের স্থান দেবতাদেরও ঊর্ধ্বে।  এই কথাগুলো শোনার পরও অনেকে হয়তো এইসব কথা এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনঃ  ব্রাহ্মণেরা যেহেতু বিদ্বান ছিল, সমাজের মস্তিষ্ক ছিল, তাই তাদের সম্মানার্থে তাদের দেবতার সমান করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি ধূলিসাৎ হয়ে যায় যখন কৃষ্ণ বললেন, ‘বিদ্বান এবং মূর্খ সকল ব্রাহ্মণেরা  বিষ্ণুর বিগ্রহ স্বরূপ’। তখন স্পষ্টভাবে উপলব্ধি হয়, এই ব্রাহ্মণ্যবাদ ভ্রষ্ট এবং কৃষ্ণ এই ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম পৃষ্ঠপোষক! মনে হয়। ভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদের হাতে গড়া নানান কাল্পনিক চরিত্র মাত্র...
.

তথ্যসূত্রঃ
.
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড/২১ অধ্যায় ; ইংরেজি অনুবাদকঃ Shanti Lal Nagar; সম্পাদকঃ আচার্য রমেশ চতুর্বেদী; Parimal Publications Delhi
  আরো পড়ুনঃ    👉      পুরাণের নোংরামি

হরফ প্রকাশনী বেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন



কিছু লোকের কাছে হরফ প্রকাশনীর বেদ ও নারায়ণ পুস্তকালয় প্রকাশনীর বেদসমগ্র  কেন এতো প্রিয় ? 

উত্তর : কারন এই বেদের অনুবাদ দিয়ে তাদের অপপ্রচার চালাইতে খুবই শুবিধা হয় ।

 প্রথমে হরফ প্রকাশনীর ভুল গুলো দেখে নিই 

 হরফ প্রকাশনীর প্রকাশক একজন মুসলিম নাম "আব্দুল আল আযিয"। আশ্চর্য হলেন বুঝি ?😃 নিচে হরফ বেদ থেকে ছবি দিয়েছি মিলিয়ে দেখুন 👇



এটা কোন গুরুকুল দ্বারা স্বিকৃত নয় । বেদ অনুবাদ অবশ্যই গুরুকুল দ্বারা স্বীকৃত হওয়া চাই- কিন্তু হরফ বেদ কোন গুরুকুল স্বীকৃত নয় 

এটার শুরুতেই মানে ঋগ্বেদের প্রথম খন্ডের ভূমিকাতেই - ১৬,  ১৭ এবং ১৮ নং পেইজে কোরআনের ব্যাখ্যা রয়েছে ।😃 
কি ! শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন ? 
নিচে ছবি দিয়েছি মিলিয়ে দেখুন 
👇



 এটা ব্যাকরন ও নিরুক্ত বিরুদ্ধ অনুবাদ ।  কারন বেদের সংস্কৃত শব্দের অনুবাদ করতে হলে নিরুক্ত ও ব্যাকরন শাস্ত্র দ্বারা সেগুলো অনুবাদ করতে হয় কিন্তু এই হরফ প্রকাশনী বেদে নিরুক্ত ব্যাকরনের কোন ছাপ নেই সম্পূর্ণ বেদ বিরুদ্ধ অনুবাদ এটা ।

এটার বহূ মূল মন্ত্রতেও ভ্যাজাল আছে মানে 
( ১ নম্বর মন্ত্র ৩ নম্বরে,  আর ৩ নম্বর  মন্ত্র ১ নম্বরে এমন বহূ আছে )

এটাতে তৈত্তরীয় সংহিতাকে বেদ বানিয়ে যজুর্বেদ এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে "কৃষ্ণ যজুর্বেদ" নামে ।
👇


এটাতে অথর্ব বেদের রেফারেন্সকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন - ১/১/১/১  যেখানে মূল বেদের রেফারেন্স ৩ ভাগের যেমন - ১/১/১ 

যেখানে অথর্ববেদে বহূ সুক্ত গড়মিল আছে খুজে পাওয়া যায়না ।

যেখানে বেদের এমন অনুবাদ করা হয়েছে যার আগা মাথা কেউ বুঝতে পারেনা ।
👇



যেখানে অবতারবাদ ইত্যাদি অবৈদীক বিষয়কে সাপোর্ট করা হয়েছে 

যেখানে বেদ বিরুদ্ধ মাংসাহারকে সাপোর্ট করা হয়েছে ।


এমন আরো বহূ বা হাজারো ভূল ত্রুটি আছে হরফ প্রকাশনীর বেদে
👇



এবার বলবো নারায়ণ পুস্তকালয়ের বেদসমগ্র নিয়ে 


বেদসমগ্র এটা হরফ প্রকাশনীর বেদের বাংলা অংশ নিয়ে গঠিত মানে এটাতে হরফ প্রকাশনীর বাংলা অংশই আছে সংস্কৃত নেই । 
( মানে হরফ প্রকাশনীর বেদ আর এটা একই শুধু সংস্কৃত থাকা না থাকার ডিফারেন্স )

 এটাতে ঋগ্বেদের ১০ নং মন্ডলটিই নেই 
( যেখানে ঋগ্বেদ ১০ টি মন্ডল নিয়েই গঠিত )

 এটাতে বহূ সুক্ত গায়েব , মানে নেই । 

বেদ সমগ্রের জন্য হরফ প্রকাশনীর দেওয়া বক্তব্যের ৪ এবং ৬ থেকে ১১ নং বক্তব্য দ্রষ্টব্য - কারন এগুলো এই ।
👇


এই ভূল অনুবাদ গুলি দিয়া অধিকাংশ মুসলিমেরা সাধারন সনাতনী ভাই বোন দেরকে ব্রেনওয়াশ করে থাকে

আশাকরি সকল সনাতনী ভাই ও বোনেরা এই হরফ প্রকাশনী ও বেদসমগ্র ত্যাগ করিয়া চলবেন,  কারন এগুলোর অনুবাদে বহূ ভূল রহিয়াছে । এগুলো পড়ে আপনারা বিভ্রান্ত হইতে পারেন তাই এগুলোকে ত্যাগ করুন

পবিত্র বেদের এখনো শুদ্ধ বাংলা অনুবাদ বের হয়নি তবে হিন্দী ও ইংরাজীতে খুব সুন্দর সুন্দর অনুবাদ বের হয়েছে পারলে সেগুলোর  Pdf Download করে পড়তে পারেন

আশাকরি বাংলাতেও অতি সত্বর বের হবে কারন বেদের বাংলা অনুবাদের কাজ চলছে  হয়তো ২-৩ বছরের মধ্যে সকল বঙ্গভাষী সনাতনী ভাই ও বোনেরা শুদ্ধ বাংলায় বেদ পড়তে পারবেন

 🙏 নমস্তে 🙏

যারা বেদ পড়তে আগ্রহী তারা এখান থেকে ইংরাজী ভাষ্য বেদ এর PDF Download করে পড়তে পারেন 

👇👇👇👇👇

ঋগ্বেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

যজুর্বেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

সামবেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

অথর্ববেদ ইংরাজী ভাষ্য পড়ুন 

এছাড়াও বেদের ৪০০ মন্ত্রের শুদ্ধ বাংলা অনুবাদ পড়তে পারেন নিচে দেওয়া বইটির PDF Link download করে পড়তে পারেন 

👇👇👇👇👇

বেদসার বাংলা ভাষ্য পড়ুন 

Thursday, June 18, 2020

বেদে লক্ষ্মীর বর্ণনা

লক্ষ্মী- (লক্ষ দর্শনাঙ্কনয়োঃ)
এই ধাতু থেকে লক্ষ্মী শব্দ সিদ্ধ হয়।

য়ো লক্ষয়তি পশ্যতঙ্কতে চিহ্নয়তি চরাচরং জগৎ অথবা
বেদৈরাপ্তৈর্য়োগিভিশ্চ য়ো লক্ষ্যতে স লক্ষ্মীঃ সর্বপ্রিয়েশ্বরঃ'
.
অথাৎ যিনি সমস্ত চরাচর জগৎকে দেখেন, তা চিহ্নিত অর্থাৎ দর্শনীয় করিয়া নির্মাণ করেন অর্থাৎ যিনি শরীরে নেত্র ও নাসিকা, বৃক্ষের পত্র, পুষ্প, ফল, মূল, পৃথিবী ও জল(অগ্নি) আদি কৃষ্ণ রক্ত ও শ্বেত মৃত্তিকা পাষাণ চন্দ্র ও সূর্য্যাদি চিহ্ন রচনা করেন, তথা সকলকে দেখেন, তিনি সকল শোভার শোভা এবং যিনি বেদাদি শাস্ত্র বা ধার্মিক বিদ্বান যোগীদিগের লক্ষ্য অর্থাৎ দর্শনীয়, এই কারণে সেই পরমেশ্বরের নাম লক্ষ্মী।
.
বেদ আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, বেদ "বিদ্ ধাতু" থেকে এসেছে। 'বিদ্' ধাতুর চারটি অর্থ বর্তায়, যথাঃ-
.
১। বিদ্ জ্ঞানে
২। বিদ্ বিচরনে
৩। বিদ্ সত্যায়ম
৪। বিদ্ লাভে
.
নিম্নে আমি এই চারটি অর্থেই লক্ষ্মীর সাথে বেদ এর পারস্পরিক নিবিড় সম্পর্ক দেখানোর চেষ্টা করবো। সুধীগণ, আশাকরি বুঝে ও উপলব্দি করে পড়ার চেষ্টা করবেন।
.
প্রশ্ন হল লক্ষ্মী কোথায় থাকেন?

  • বেদ বলছে জ্ঞানীগনের বাণীতে লক্ষ্মী বিদ্যমান। কারণ-
১. জ্ঞানই হল বেদ এবং বেদই হল লক্ষ্মী! যেখানেই জ্ঞানীগণের জ্ঞান বিদ্যমান, সেখানেই লক্ষ্মী বিদ্যমান।
২. তিনি জ্ঞানীগণের সহিত বিচরন করেন। অর্থাৎ জ্ঞানীগণের জ্ঞান তথা বেদ যেখানেই বিচরণ করেন লক্ষ্মী সেখানেই বিচরণ করেন।
৩. তিনি ধীর বিদ্বান যেখানে মন দ্বারা সত্য বাণী বলেন সেখানেই থাকেন।
৪. এর ফলে লাভ হয় প্রকৃত মিত্রতা। থাকেনা কোন ভেদাভেদ, এটাই হল সত্যিকারে মিত্রতার সূত্র, সংগঠনের সূত্র, সংগঠিত থাকার সূত্র।
.
এখন লক্ষ্মী সম্পর্কীয় বেদ মন্ত্রের সহিত, বেদ যে ধাতু থেকে এসেছে সেই "বিদ্ ধাতুর" যে চারটি অর্থ ও মন্ত্রের সহিত পারস্পরিক যে সম্পর্ক রয়েছে তা আমি উপস্থাপন করেছি, এর সাথে আপনারা নিজেরাই লক্ষ্মীর পারস্পরিক সম্পর্ক উপলব্দি করে দেখুন। নিম্নে মন্ত্রটি দেওয়া হলঃ-
.
"সক্তুমিব তিতউনা পুনন্তো যত্র ধীরা মনসা বাচমক্রত।
অত্রা সখায়ঃ সখ্যানি জানতে ভদ্রৈষাং লক্ষ্মীর্নিহিতাধি বাচি।।
ঋগবেদ ১০।৭১।২.
.
সরলার্থঃ চালনী দ্বারা পরিস্কৃত সুক্তের সমান যেখানে ধীর বিদ্বান মন দ্বারা পবিত্র বাণী বলে সেখানে পরস্পর মিলে জ্ঞানের চর্চাকারী বিদ্বান # প্রকৃত মিত্রতাকে অনুভব করে। এদের বাণিতে কল্যাণময়ী লক্ষ্মী নিহিত হয়।" .

অর্থাৎ লক্ষ্মী আলাদা কোন দেবী নয়। বরংচ স্বয়ং পরমেশ্বরেরই একটা গুণবাচক নাম। আপনাকে যিনি বলেছে যে, আর্যরা লক্ষ্মীর উপাসনা করে না সে হয়তো সত্যিটা জানে না। অথবা জানলেও মিথ্যাচার করছে অর্থাৎ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আর্যদের নামে মিথ্যা প্রচার করছে।৷
.
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন, যদি বুঝে উঠতে পারেন তাহলে আমার ক্ষুদ্র এই নিবেদন সার্থক হবে বলে মনেকরি।
নমষ্কার

.

পবিত্র বেদ অনুসারে ঈশ্বর কে ?

ঈশ্বর কে ? 
_______________

🔥 "ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি বিশ্বজগতের স্রষ্টা"

👉ঋগ্বেদ - ৩|৬৩|১০ মন্ত্র.........................................................✍️


🔥 "ঈশ্বর হলেন তিনি যাহাতে সর্ব জগত আশ্রয় করে আছে"

👉ঋগ্বেদ - ৩২|৮ মন্ত্র................................................................✍️


🔥 ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি সকলের মোক্ষ দাতা

👉ঋগ্বেদ - ১|৭২|১ মন্ত্র...........................................................✍️

🔥 ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি এক এবং অদ্বিতীয়

👉 অথর্ব্ববেদ - ১৩|৪|২ মন্ত্র....................................................✍️


🔥 ঈশ্বর হলেন তিনিই যাহার নিয়মে বিশ্বসংসার চলে

👉 ঋগ্বেদ - ১|২২|১৯ মন্ত্র........................................................✍️

🔥 ঈশ্বর তিনিই যিনি পবিত্র বেদের উৎপাদক

 👉 যজুর্ব্বেদ - ৩৩|৩১ মন্ত্র.......................................................✍️

"ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু, রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান
 একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ"

👉ঋগ্বেদ - ১|১৬৪|৪৬ মন্ত্র......................................................✍️

অনুবাদ : এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন ।

"ন দ্বিতীয়া ন তৃতীয় শ্চতুর্থ না পু্চ্যতে
 ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠ ন সপ্তমো না পুচ্যতে
 নাষ্টমো ন নবমো দশমো না পুচ্যতে
 য এতং দেবমেক বৃতং দেব"

👉অথর্ব্ববেদ - ১৩|৪|২ মন্ত্র....................................................✍️

অনুবাদ : পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম ষষ্ট সপ্তম অষ্টম নবম বা দশম ঈশ্বর বলিয়া অবিহিত নহে ।

"য এক তমু ষ্টুহি কৃষ্ঠীনাং বিচর্যণি। পতি যজ্ঞে বিষক্রতু"

👉ঋগ্বেদ - ৬|৪৫|১৬ মন্ত্র........................................................✍️

অনুবাদ : যিনি এক অদ্বিতীয়া, যিনি মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাহার উপাসনা কর ।

"ওঁ খং ব্রহ্ম"

👉যজুর্ব্বেদ - ৪০|১৭ মন্ত্র........................................................✍️

ওঁ -ই ঈশ্বর । 


                                             🙏 নমস্কার 🙏

৩৩ কোটি দেবতার সন্ধানে


       


আমাদের সনাতন বৈদিক ধর্মে ৩৩ কোটি দেবতা সম্পর্কে অনেকেই বিভ্রান্ত হন । হিন্দুরা অনেকেই জানেনা ৩৩ কোটি দেবতা কোন কোন গুলোকে বলা হয়, অনেকেই আবার দুর্গা , কালী, মনসা ,গণেশ ,কার্তিক ইত্যাদি পৌরাণিক চরিত্র কে দেবতা মনে করে। তাই এই ৩৩ কোটি দেবতা বিষয়েই আমার আজকের এই পোস্টটি লেখা ।

👉 দেবতার অর্থ হলো যার দিব্য গুন আছে এবং যার দিব্য গুনের দ্বারা এই জীব জগৎ চলছে তাকেই দেবতা বলে যেমন - সূর্য ।
👉 দেবতার অর্থ ঈশ্বর গ্রহণ করা ভুল কারণ পরমেশ্বর সকল দেবতা কে চালিত করে এবং সকল দেবতারও দেবতা বলে পরমেশ্বর এর এক নাম মহাদেব ,

👉 আর আমাদের মধ্যে যে কোটি শব্দ নিয়ে বিভান্ত আছে তার অর্থ এখন করিবো , সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ প্রকার , যজুর্বেদ ১৪/৩১ মন্ত্র - "ত্রয়স্ত্রিংশৎত্রিশতা" এবং শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫ তেও ৩৩ দেবের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে ।

👉 শুরুতেই বলে রাখি আমাদের ৩৩ দেবের মধ্যে শুধু একটি মাত্র চেতন দেবতা হল 'জীবাত্মা' বাদবাকি ৩২ টি দেবতাই হলো জড় বস্তু।


 বৃহদারণ্যক উপনিষদে‬ আছে..............................✍️

"অষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়ত্রিংশা চিতি"

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/২ ||=

অর্থাৎ - অষ্ট বসু , একাদশ রুদ্র , দ্বাদশ আদিত্য এই কয় জন মিলিয়া একত্রিশ এবং ইন্দ্র ও প্রজাপতি মিলিয়া তেত্রিশ দেব ।


"ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ"

=|| যজুর্বেদ ১৪/৩১ ||=

অর্থ : প্রকৃতির শাসক , প্রজার পালক সর্ব্বব্যাপক , সর্ব্বাধিপতি পরমাত্মার তেত্রিশ ভৌতিক দেব শক্তির অনুশীল কর ।

অর্থাৎ...................✍️

৮ বসু 

১১ রুদ্র 

১২ আদিত্য 

ইন্দ্র  ও

প্রজাপতি 

এই ৩৩ টি কে দেবতা বলা হয় ।

👉 ৮ বসু কাকে বলে ও কি কি ?

 উত্তর:- নিখিল পদার্থ এই সবের মধ্যেই আছে
তাই এদের বসু বলা হয় ।

অগ্নিশ্চ পৃথিবীশ্চ বায়শ্চান্তিরিক্ষং চাদিত্যশ্চ দ্যৌশ্চ চন্দ্রমাশ্চ নক্ষত্রাণি চৈত্রে বসব

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৩ ||=

অর্থ : অগ্নি, পৃথিবী, বায়ু, অন্তরিক্ষ, আদিত্য, দ্যুলোক ,চন্দ্র, নক্ষত্র সকল ইহারা অষ্ট বসু ।

অর্থাৎ ৮ টি বসু হইলো :

১ ) পৃথিবী 
২ ) জল 
৩ ) অগ্নি 
৪ ) বায়ু 
৫ ) আকাশ 
৬ ) চন্দ্রমা 
৭ ) সূর্য 
৮ ) নক্ষত্র সমূহ

👉 ১১ রুদ্র কাকে বলে ও কি কি ?

উত্তর : "দশমে পুরুষো প্রাণা আত্মৈকাদশন্তে"

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদঃ ৩/৯/৪ ||=

অর্থ : পঞ্চ প্রাণ এবং পঞ্চ উপ প্রাণ এই দশ এবং এক জীবাত্মা মিলে একাদশ রুদ্র ।

অর্থাৎ একাদশ রুদ্র গুলো হল :

১ ) প্রাণ 
২ ) অপান 
৩ ) ব্যান 
৪ ) উদান 
৫ ) সমান 

৬) নাগ 
৭ ) কূর্ম 
৮ ) কৃকল 
৯ ) দেবদত্ত 
১০ ) ধনঞ্জয়
 
১১ )জীবাত্মা 

এই ১১টি দেহান্তকালে রোদন করে অর্থ্যাৎ এই ১১ টি সত্ত্বা যখন একটি মনুষ্যের দেহ থেকে বেরিয়ে যায় তখন সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ফলে সবাই কান্না অর্থ্যাৎ রোদন করে ওঠে বলে ইহা দিগকে রুদ্র বলে  ।

👉 দ্বাদশ আদিত্য কাকে বলে ও কি কি ?

উত্তর : "দ্বাদশ বৈ মাস"

 =|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৫ ||=

অর্থ : বৎসরে বার মাস ১২ আদিত্য ।

অর্থাৎ : দ্বাদশ আদিত্য গুলো হল :

১ ) চৈত্র 
২ ) বৈশাখ 
৩ ) জৈষ্ঠ 
৪ ) আষাঢ় 
৫ ) শ্রাবন 
৬ ) ভাদ্রপদ 
৭ ) আশ্বিন 
৮ ) কার্ত্তিক 
৯ ) মার্গশীর্ষ 
১০ ) পৌষ 
১১ ) মাঘ 
১২ ) ফাল্গুন  

১২ টি আদিত্য : সংবৎসরের ১২ মাস সকলের আয়ু হরণ করে বলিয়া এই সকলকে আদিত্য বলে ।

👉 ইন্দ্র ও প্রজাপতি কি ? 

★ স্তনযিত্নুরেবেন্দ্রো

 =|| বৃহদারন্যকোওনিষদ ৩/৯/৬ ||=

অর্থাৎ বিদ্যুৎ হচ্ছে ইন্দ্র  ।

★ যজ্ঞঃ প্রজাপতিরিতি

=|| বৃহদারন্যকোপনিষদ ৩/৯/৬ ||=

অর্থ : যজ্ঞ ( অর্থাৎ শুভ কর্ম ) হচ্ছে প্রজাপতি 

পরম ঐশ্বর্য্য হেতু বলিয়া বিদ্যুতের নাম ইন্দ্র এবং প্রজাপতি অর্থাৎ যজ্ঞ, ইহা দ্বারা বায়ু ও বৃষ্টির জলের শুদ্ধি হয়ে থাকে, এর দ্বারা উত্তম অন্নাদি উৎপন্ন হয়।

[ এই হল আমাদের ৩৩ কোটি (প্রকার) দেবতা ]

👉 এখন বলুন এর মধ্যে কি দুর্গা কালি মনসা গণেশ ইত্যাদি পৌরাণিক কাহিনির যে অবাস্তব চরিত্র গুলোকে দেবতা ভাবেন সেগুলোকে কি পেলেন এখানে ?

( এই ৩৩ টি দেবতার উপাসনা করার কথা বেদাদী অর্থাৎ বেদানুকূল শাস্ত্রে কোথাও নেই কারণ আমাদের শাস্ত্র অনুযায়ী শুধু মাত্র নিরাকার ,অজন্মা, সর্বব্যাপক ,অবিনাশী , নিত্য ,অমর সেই পরমেশ্বরের উপাসনা করতে হবে ,অন্য কারো নয় । আজও হিন্দুরা দেবতা সম্পর্কে কিছুই না জেনে অনেকেই ভ্রম জালে পতিত হচ্ছে এবং তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে জন্মগত বমুনেরা )


👉 অনেক পন্ডিতেরা এখন আবার বলিতে পারে যে শিব , বিষ্ণু ইত্যাদি এরাও তো দেবতা কেননা এদের নাম বেদে আছে ।

তাদের উত্তরে আমি বলিব - না , শিব , বিষ্ণু  কোন দেবতা নয় ।  কারন শিব , বিষ্ণু হচ্ছে পরমাত্বার গুনবাচক নাম । যেমন - পরমাত্মা যখন মঙ্গলময় তখন তিঁনি শিব নামে পরিচিত । এবং যখন তাকে সর্বব্যাপী মনেকরি তখন তিনি বিষ্ণু 😃

👉 কোন কোন পন্ডিত আবার বলিবে তাহলে তো শিব ও বিষ্ণু পৌরানিক ও বিষ্ণুর চারহাত ও তিনি বৈকুন্ঠে থাকে আর শিব কৈলাশে থাকে হাতে তৃশুল থাকে মানে তারা দুজনেই আকার 😃

তাদের উত্তরে বলিব - না , কারন শিব ও বিষ্ণু নিরাকার তাদের কোন আকার নেই ( পৌরানিক যুগে ঈশ্বরের এই পবিত্র নামগুলি শিব বিষ্ণু ইত্যাদি নাম দিয়ে একেকটি দেবতা নামক চার হাত পাঁচহাত ওয়ালা এলিয়েন তৈরী করা হয়েছে )  কারন পরমাত্বা নিরাকার  যজুর্বেদ ৪০/৮ মন্ত্র মতে তিনি নিরাকার শরীর রহিত জন্ম রহিত মৃত্যু রহিত । তাই বুঝতে হবে যে শিব বা বিষ্ণু একই জন এবং তিনি নিরাকার পরমাত্বা ।

♥️ সত্যকে জানুন এবং মিথ্যা পরিত্যাগ করুন ♥️

Tuesday, June 16, 2020

ঋগ্বেদের ৬।৪৭।১৮


                                         ঋগ্বেদের ৬।৪৭।১৮ মন্ত্রটি নিয়ে প্রচার করা হয় যে এখানে ঈশ্বরকে বিভিন্ন রূপ ধারণের উল্লেখ রয়েছে। চলুক দেখে নেওয়া যাক এই মন্ত্রটির যথার্থ বিশ্লেষণ ও প্রকৃত অর্থ।
শঙ্কা–
রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হ্যস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷।
[ঋগ্বেদ – ৬।৪৭।১৮]
অর্থাৎ সমস্ত দেবগণের প্রতিনিধিভূত এ ইন্দ্র বিবিধ মূর্তি ধারণ করেন এবং সেই রূপ পরিগ্রহ করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন। তিনি মায়া দ্বারা বিবিধ রূপ ধারণ করেন এবং সেই রূপ পরিগ্রহ করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন। কারণ তার রথে সহস্র অশ্ব যােজিত আছে।

সমাধান– উক্ত শঙ্কাটি আমরা কয়েকটি পয়েন্ট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবো।
১. যথারীতি এই মন্ত্রে ঈশ্বরের রূপ দাবীকারীরা রমেশচন্দ্র দত্ত অনুবাদিত ঋগ্বেদের অনুবাদ ব্যবহার করেছে, যার প্রকাশক হলো হরফ প্রকাশনী। যারা এই মন্ত্রের রমেশ চন্দ্রের অনুবাদ নিজেদের বই পত্রে ঈশ্বরের সাকার রূপের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে, তারাই আবার গোহত্যা বা অশ্লীলতা নিয়ে কথা উঠলে হরফ প্রকাশনীকে তুলোধুনো করে এবং রমেশচন্দ্রের অনুবাদ যে ঠিক নয় তা এক বাক্যেই স্বীকার করে বসে!
২. এই মন্ত্রে কোথাও "প্রতিমা" বা "মূর্তি" শব্দটি উল্লেখ নাই। কিন্তু অনুবাদে মূর্তি শব্দটি দেওয়া দেখে এটির প্রচারকারীরা কোনো প্রশ্নই তোলে না। অথচ যজুর্বেদের ৩২।৩ মন্ত্রে সরাসরি "প্রতিমা" শব্দটি দেখতে পায় এবং সকল প্রসিদ্ধ ভাষ্যকারও যখন সেই "প্রতিমা" শব্দের অর্থ "প্রতিমা"-ই করে তখন এদের কান্না শুরু হয়ে যায়। তখন এরা এখানে প্রতিমা অর্থ উপমা দাবী করে বসে!

৩. যারা এই মন্ত্রে ঈশ্বরের সাকার রূপ দাবী করে, তারা বোধহয় ভালো করে তাদের ব্যবহৃত বা প্রদত্ত মন্ত্রটির অনুবাদও পড়ে না। কারণ এই মন্ত্রে ইন্দ্রকে বলা হচ্ছে সকল দেবতার প্রতিনিধি। অর্থাৎ তাদের মান্যতা অনুসারে এই স্থলে ইন্দ্র শব্দের অর্থ ঈশ্বর হলে ঈশ্বর হবেন দেবতাদের প্রতিনিধি! কিন্তু সমস্ত পৌরাণিক মান্যতা অনুসারেই "ঈশ্বর" দেবতাদের প্রতিনিধি নন, বরং "দেবতা"-ই ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তাই এখানে "ইন্দ্র" অর্থ "ঈশ্বর" ধরলে তাদেরই মান্যতার বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে!
৪. তাদের প্রদত্ত অনুবাদ অনুসারে যদি ঈশ্বরকে যজমানের সামনে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে উপস্থিত হওয়াকে ঠিক মানা হয়, তবে তা স্বয়ং বেদে বর্ণিত ঈশ্বরের গুণের পরিপন্থী হয়। কারণ যজুর্বেদ [৪০।১] বলছে ঈশ্বর সর্বব্যাপী। তাই তিনি আলাদা করে যজমানের সামনে উপস্থিত হলে তাঁর সর্বব্যাপত্ব নষ্ট হয়ে যায়। আবার উপনিষদের ব্রহ্মবেত্তা ঋষি বলছেন ঈশ্বর অরূপম্ [কঠ - ১।৩।৩৫]। তাই এখানে ঈশ্বর রূপ ধারণ করে যজমানের সামনে এলে ব্রহ্মবেত্তা ঋষির বাক্যও মিথ্যা হয়ে যায়!
৫. উক্ত অনুবাদ অনুসারে ঈশ্বর যজমানের সামনে রূপ ধারণ করে আসেন। এখন যদি একাধিক যজমান একত্রে ঈশ্বরের স্তুতি করেন, তবে উক্ত অনুবাদ অনুসারে সকল যজমানের সামনেই ঈশ্বরের রূপ ধারণ করা আসা উচিত। অর্থাৎ এর ফলে ঈশ্বর একাধিক হয়ে যাবেন। কিন্তু অথর্ববেদ বলছে ঈশ্বর দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ নন, বরং তিনি এক ও অদ্বিতীয় [অথর্ব - ১৩।৪।২]।

৬. উপরের মন্ত্রের অনুবাদে দেওয়া ইন্দ্র মায়ার দ্বারা বহু রূপ ধারণ করেন। কিন্তু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে ইন্দ্র মায়া দ্বারা যজমানের সামনে উপস্থিত না হয়ে গৌতম মুনির রূপ ধারণ করে কি করেছেন, তা আর বিস্তারিত বললাম না। তাই এখানে "মায়া" শব্দের নিরুক্ত-নিঘণ্টুগত অর্থ করতে হবে। নিঘণ্টু [৩।৯] অনুসারে "মায়া ইতি প্রজ্ঞানাম"। অর্থাৎ মায়া হচ্ছে প্রজ্ঞার নাম। অর্থাৎ এখানে মায়া অর্থ অলৌকিক কোনো শক্তি নয়, বরং মায়া অর্থ "প্রজ্ঞা"।
৭. তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এখানে "ইন্দ্র" অর্থ কী হবে? আর ঋগ্বেদ ১।১৬৪।৪৬ মন্ত্র অনুসারে তো ইন্দ্র অর্থ পরমাত্মাই। তাহলে এখানে ইন্দ্র শব্দটি পরমাত্মা অর্থে ব্যবহৃত হবে না কেন? এর উত্তর হচ্ছে, বৈদিক শব্দ গুলোর বহু অর্থ হয়ে থাকে। কোন অর্থ কোথায় গ্রহণ করা হবে তা প্রকরণ অনুসারে বিবেচনা করা হয়। যেমন মনে করুন, সৈন্ধব শব্দটি দ্বারা ঘোড়া ও লবণ উভয় নির্দেশ করে। যদি কেউ কারও কাছে খেতে বসে বলে, "আমাকে সৈন্ধব দাও", তবে কিন্তু তাকে সেখানে লবণ এনে দিতে হবে, ঘোড়া নয়। আবার যদি বেড়াতে যাওয়ার সময় বলে, "আমাকে সৈন্ধব দাও", তবে কিন্তু তাকে লবণ নয়, ঘোড়া এনে দিতে হবে।
তেমনি ভাবে এখানে ইন্দ্র শব্দের বিভিন্ন অর্থের মধ্যে পরমাত্মা অর্থ গ্রহণ না করে কোন অর্থ গ্রহণ করা উচিত?
এর উত্তর হচ্ছে এখানে "ইন্দ্র" অর্থ "জীবাত্মা" গ্রহণ করা উচিত।
আপনারা হয়ত আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করতে পারেন, ইন্দ্র জীবাত্মা অর্থে গ্রহণ করার পক্ষে শাস্ত্রীয় প্রমাণ কী?
এর শাস্ত্রীয় প্রমাণ বৈয়াকরণিক পাণিনি রচিত অষ্টাধ্যায়ী ও তার বৃত্তি থেকে দেওয়া হলো–
"ইন্দ্রিয়মিন্দ্রলিঙ্গ­মিন্দ্রদৃষ্টমিন্দ্রসৃষ্টমিন্দ্রজুষ্টমিন্দ্রদত্তমিতি বা।"
[অষ্টাধ্যায়ী – ৫।২।৯৩]
অর্থাৎ— (ইন্দ্রয়ম্) ইন্দ্রয়ম্ এই শব্দ নিপাতন করা যায়, (ইন্দ্রলি....দত্তমিতি) ইন্দ্র লিঙ্গাদি অর্থে (বা) বিকল্প দ্বারা।
ষষ্ঠী সমর্থ ইন্দ্র শব্দ দ্বারা লিঙ্গ অর্থে ঘচ্ প্রত্যয়ের নিপাতন হয়।
উদাহরণ– "ইন্দ্রস্য লিঙ্গ ইন্দ্রিয়ম্" এখানে ইন্দ্র নাম জীবাত্মা, তথা লিঙ্গ নাম চিহ্নের। জীবাত্মা যে চিহ্ন তাকে ইন্দ্রিয় বলে।
জয়াদিত্য অষ্টাধ্যায়ীর কাশিকা বৃত্তিতে এই সূত্রের বৃত্তিতে ইন্দ্র অর্থ আত্মা (জীবাত্মা), এই ভাবকে স্পষ্টভাবেই বলেছেন, "ইন্দ্র আত্মা, স চক্ষুরাদিনা করণেনানুমীয়তে"।
৮. এবার তাহলে উক্ত মন্ত্রের যথার্থ অনুবাদ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ঋগ্বেদ ভাষ্য অনুসরণ করে অনুবাদ থেকে দেখে নেওয়া যাক।




রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হ্যস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷।
[ঋগ্বেদ – ৬।৪৭।১৮]
পদার্থ– (ইন্দ্রঃ) জীবাত্মা (মায়াভিঃ) প্রজ্ঞা দ্বারা (প্রতিচক্ষণায়) প্রত্যক্ষ কথনের জন্য (রূপংরূপম্) রূপে রূপে (প্রতিরূপঃ) প্রতিরূপ অর্থাৎ স্বরূপে বর্তমান (বভুব) থাকে এবং (পুরুরূপঃ) অনেক শরীর ধারণ করে বিবিধ রূপ (ঈয়তে) পেয়ে যায়৷ (তৎ) সেই জীবাত্মা (অস্য) এই শরীরের (রূপম্) রূপ হয় এবং (অস্য) এই জীবাত্মা (হি) নিশ্চিত ভাবে (দশ) দশ সংখ্যা বিশিষ্ট এবং (শতা) শত সংখ্যা বিশিষ্ট (হরয়ঃ) অশ্বের ন্যায় ইন্দ্রিয়, অন্তঃকরণ এবং প্রাণ (যুক্তাঃ) যুক্ত শরীরকে ধারণ করে।
[বি. দ্র. অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই মন্ত্রে কি ইন্দ্র অর্থ কখনই পরমাত্মা গ্রহণ করা যাবে না? এর উত্তর হচ্ছে– যাবে, সর্বব্যাপক পরমাত্মা অর্থে৷ তবে সেখানে খেয়াল রাখতে হবে যাতে উপর্যুক্ত ৪,৫,৬ নং পয়েন্টে বর্ণিত ঈশ্বরের গুণাবলি খণ্ডিত না হয়। আর আমার উপরের লেখাটিতে মূলত রমেশচন্দ্রের অনুবাদের ভুল ও তা প্রচারকারীদের অযথার্থতা তুলে ধরা হয়েছে।]

ঈশ্বরের স্তুতি প্রার্থনা ও উপাসনা কি ?





সপর্য়্য গাচ্ছ ক্রমকায়ম ব্রণমন্নাবির শুদ্ধমপাপবিদ্ধম।

কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বযস্তূরযাথা তথ্যতোর্থান

বদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।

                                                                                  যজুঃ অঃ ৪০ মঃ


ঈশ্বরের গুন কীর্ত্তন, শ্রবন এবং জ্ঞান কে স্তুতি করা বলে। ঐ পরমাত্বা সকল বস্তুতে ব্যাপক, শীঘ্রকারী, অনন্ত বলবান শুদ্ধ,সর্বজ্ঞ,সকলের অন্তর্য্যামী,সর্ব্বোপরি বিরাজমান, সনাতন এবং স্বয়ংসিদ্ধ, তিনি স্বয়ং জীবাদি সনাতন অনাদি প্রজাদিগকে আপনার সনাতন বিদ্যা দ্বারা বেদ প্রকাশ করতঃ অর্থবোধ করাইতেছেন ইত্যাদিকে সগুনস্তুতি বলে।


ফলপ্রাপ্তি : স্তুতি হতে ঈশ্বরের প্রীতি এবং তাহার গুন কর্ম ও স্বভাব দ্বারা নিজের গুন কর্ম ও স্বভাবের সংশোধন হয়।



ঈশ্বরের সম্বন্ধ বশতঃ আপনার সামর্থ্যের অতিরিক্ত যে সমস্ত বিজ্ঞানাদি প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহার জন্য ঈশ্বরের নিকট যাঞা করাকে প্রার্থনা করা বলে।



 ফলপ্রাপ্তি : প্রার্থনা হতে নিরভিমানিতা,উৎসাহ এবং সাহায্য লাভ হয়


ঈশ্বরের গুনকর্ম্ম ও স্বভাব কর্ম্ম যেরুপ পবিত্র, আপনারও তদ্রুপ করা, ঈশ্বরকে সর্ব্বব্যাপক এবং আপনাকে ব্যাপ্য জানিয়া এবং ঈশ্বরেরে আমরা সমীপস্থ এবং ঈশ্বর আমাদিগের সমীপস্থ এইরুপ নিশ্চয় করতঃ যোগাভ্যাস দ্বারা তাঁহার সাক্ষাৎ করণকে উপাসনা বলে।


ফলপ্রাপ্তি : জ্ঞানের উন্নতি এবং উপাসনা হতে পরব্রম্ভ্রে ঐক্য ও তাঁহার সাক্ষাৎকার।