WELCOME TO MY BLOG "সনাতন বৈদিক ধর্ম" AND SEE SOMETHING NEW

Friday, June 5, 2020

রামকৃষ্ণ ( গদাধর ) পর্ব - ১



আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না। ঈশ্বর এক, দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম। যেমন পুকুরে জল আছে, একঘাটের লোক বলছে জল, আর একঘাটের লোক বলছে ওয়াটার, আর একঘাটের লোক বলছে পানি, হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, কিন্তু বস্তু এক। মত-পথ। এক-একটি ধর্মের মত এক-একটি পথ, ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায়। যেমন নদী নানাদিক থেকে এসে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।।।

রামকৃষ্ণ দেব এই অধমকে ক্ষমা করবেন, আমি আপনার কথার সাথে একমত হতে পারলাম না। কারণ কারো ধর্ম যদি হয় অংশীবাদীদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করা, অন্য সম্প্রদায়ের নারী দের যৌন দাসী হিসাবে ব্যবহার করা; অন্য সম্প্রদায়ের আবাসভূমি এবং উপাসনালয় ধ্বংস করা। তবে সেই ধর্ম কে ঠিক, যাথার্থ্য মনে করার জন্য; আপনার মত কাণ্ডজ্ঞানহীন দিব্যজ্ঞান আমার নাই। আর কেও যদি বলে আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল তবে আমি তাকে বলব সে ধর্ম কি? সেটাই জানে না। মনুসংহিতা মতে, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, শুদ্ধ বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য এবং ক্রোধহীনতা এ দশটি ধর্মের লক্ষণ। গীতার আলোকে ধর্ম হচ্ছে --- সরলতা, দান, অহিংসা, সত্যবাদিতা, সমস্ত জীবে দয়া, মৃদুতা, লজ্জা, তেজ, ক্ষমা, শান্তি, লোভহীনতা, ধৈর্য, দক্ষতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান মঙ্গলজনক ইত্যাদি এই গুলা হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ এবং এই গুন গুলা যাদের মধ্যে বিদ্যমান তাঁরাই প্রকৃত ধার্মিক। পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী বলেছেন-- "ধারয়তি লোকম্" যা লোককে ধারণ করে তাহাকে ধর্ম বলা হয়। যাহার দ্বারা গ্রাম, নগর, দেশ, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয় কেবল ইহাই নয়, অপিতু সম্পূর্ণ বিশ্বের সকল প্রাণী বর্গের জন্য যাহা কল্যাণকারী, মঙ্গলকারী হইবে, যাহা সংরক্ষক, সংবর্দ্ধক হইবে তাহাকে ধর্ম বলে। এখানে, আমার ধর্ম অপরের ধর্ম বলে কি কিছু আছে???
ধর্ম মনুষ্য মাত্র সকলের জন্য। যার মধ্যে ধর্মের এই গুণ গুলা নাই সে মানুষ নয়। সে জন্য বলে "ধর্ম হীন মানুষ পশুর সমান"। ধর্ম কখনো কেও পরিবর্তন করতে পারে না, মানুষ পরিবর্তন করে সম্প্রদায়। ধর্মের কাজ হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষের ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা, কিন্তু যা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেটা ধর্ম নয় সেটা হচ্ছে মতবাদ এবং সম্প্রদায়।

আপনি বলেছেনঃ আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না। তাহলে তো আল্লাহ নিজে বলেছেনঃ আল্লাহ্ নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযোগ্য হবে না।(৩:১৯, ৩:৮৫) তবে আপনি কেন আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল- এ মত ভাল না বলে ভাঁওতাবাজি করছেন? এটাকে আপনি বা আপনার অন্ধ ভক্তরা কি বলবে?
আরো বলেছেনঃ ঈশ্বর এক, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে শিব। যদি তাই হয় তবে আল্লাহ নিজে বলেছেনঃ আল্লাহ্ সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য, অংশীদার না করার জন্য।(৪:৩৬) যদি কেউ আল্লার সাথে অংশীদারি করে তবে সে জাহান্নামে যাবে।(৫:৭২) তবে আপনি কেন আল্লাহ্ সাথে শরীক করছেন? অংশীস্থাপন করছেন?

রামকৃষ্ণদেব আপনি যথার্থ বলেছেন "ঈশ্বর এক, দুই নাই" পবিত্র বেদ আমাদের কে সেটাই বলে- এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।(ঋগ্বেদ. ১/১৬৪/৪৬।) কিন্তু বেদ এবং আমাদের ঋষি প্রদত্ত কোন বৈদিক গ্রন্থে আল্লাহ, গড নাম কোথাও নাই।
আবার বলেছেনঃ তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। দেখুন! সূর্য কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকতে পারে যেমন রবি, সবিতা, দিবাকর, আদিত্য, প্রভাকর ইত্যাদি কারণ এগুলো সূর্যের বিভিন্ন নাম। কিন্তু কোন বিজ্ঞ লোক সূর্য কে কখনো জল, বারি, অশ্ব, ঘোটক নামে ডাকবে না; কারণ জল, বারি, অশ্ব আর সূর্য একই বস্তু নয়। একি ভাবে বেদে ঈশ্বরের অনেক নাম আছে কিন্তু আল্লাহ, গড নাম কোথাও নাই, কোথাও বলা হয়নি ঈশ্বরের আর এক নাম আল্লাহ, গড। তাই যিনি যথার্থ জ্ঞানী তিনি কখনো পরমাত্মাকে আল্লাহ, গড, নামে কখনো ডাকবেন না। কারণ আবার বলছি পরমাত্মার অনেক নামের মধ্যে আল্লাহ, গড নাম কোথাও নাই।

আপনি আমার মত অধম কে বুঝানোর জন্য, উদাহারণ দিয়ে বলেছেন “হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, কিন্তু বস্তু এক”। হ্যাঁ! জল, পানি, ওয়াটার এর বৈশিষ্ট্য এক, কোন পার্থক্য নাই তাই একই বস্তু; কিন্তু আল্লাহ, গড, ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য তো এক নয়! পার্থক্য বিদ্যমান। তাহলে আল্লাহ, গড, ঈশ্বর একই সত্তা হয় কিভাবে??? এক জন হয় কিভাবে??? সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে পানি এবং এসিড কে একই বস্তু বলে মনে হতে পারে কারণ পানিও তরল এসিডও তরল অবস্থায় থাকে। কিন্তু এসিড আর পানির পার্থক্য না বুঝে এসিড কে পানি মনে করে পান করলে মৃত্যু নিশ্চিত।

নদী নানাদিক ধরে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয় কিন্তু নদী পথ ধরে যেমন কখনো চন্দ্রে পৌছাতে পারে না। নদী পথ ধরে সাগরে পৌছানো যায় আর চন্দ্রে পৌছাতে হলে আকাশ পথে যেতে হয়। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে পৌছানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথের অনুসরণ করতে হয়। সেরকম অংশীবাদীদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করা; অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা করে তাদের স্ত্রী দের যৌন দাসী হিসাবে ব্যবহার করা; অন্য সম্প্রদায়ের আবাসভূমি এবং উপাসনালয় ধ্বংস করার জন্য যে মতবাদ নির্দেশ দেয় এরুপ ঘৃণ্য মতবাদ বা পথ অনুসরন করে কখনো পরমাত্মার সান্নিধ্য পাওয়া যায় না। সকল মত পথ, ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায় এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।।




No comments:

Post a Comment