ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নাকি যোগেশ্বর ?
আজ চর্চা করবো গীতা কে নিয়ে ,, কৃষ্ণ ভক্তদের কাছে গীতা সম্পর্কে সুবিশাল আকারের মাহাত্ম প্রচার করেন যে গীতা শ্রেষ্ঠ , গীতাই সব ,গীতায় এইটা আছে ঐটা আছে । একজন সাধারণ ব্যক্তি যদি আমাদের সনাতন শাস্ত্রের বেদাদী কোনো শাস্ত্র চর্চা না করে শুধু মাত্র গীতা পড়েন তাহলে গীতায় শুধু মাত্র স্ববিরোধী কথা মিলবে । কৃষ্ণ ভক্ত রা তো গীতা ছাড়া বেদানুকূল কোনো শাস্ত্র ই মানেনা কিন্তু বেদ বিরোধী পুরান কাহানি মানতে প্রস্তুত তারা
তো আসুন এইবার চর্চা করি গীতা স্ববিরোধী নিয়ে
গীতা প্রেস ভাষ্য
গীতা - ৪ অধ্যায় ৫ ও ৬ শ্লোক
ভগবান উবাচ
বহুনী মে ব্যতীতানি জন্মানি তব অর্জুন ।
তানি অহম্ বেদ সর্বানি ন ত্বম্ বেত্থ পরন্তপ ।। ৫
অর্থ : ভগবান বললেন-হে পরন্তপ অর্জুন আমার এবং তোমার বহুজনম অতিত হয়েছে, আমি সে সমস্ত জন্মের কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার না।
অজ অপি সন অব্যয় আত্মা ভূতানাম্ ঈশ্বর অপি সন ।
প্রকৃতিম্ স্বাম অধিষ্ঠায় সম্ভবামি আত্মমায়য়া ।। ৬
অর্থ : যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্ব ভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা অবতির্ন হই।
ওপরের দুটি শ্লোক স্ববিরোধী কারণ ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলেছে তার অনেক বার জন্ম হয়েছে , কিন্তু দেখুন 2য় শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে তিনি জন্ম রহিত অর্থাৎ তার জন্ম হয়না ।
_________________________________
গীতা - ৯ অধ্যায় ২৯ শ্লোক
সমঃ অহম্ সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্য অস্তি ন প্রিয়ঃ ।
যে ভজন্তি তু মাম্ ভক্তা ময়ি তে তেষু চ অপি অহম্ ।। ২৯
অর্থ : আমি সর্বভূতে সমান ভাবে বিরাজ করি । কেউ আমার প্রিয় নয় ও অপ্রিয়ও নয়। কিন্তু যারা ভক্তি পুর্বক আমাকে ভজনা করেন তারা সভাবতই আমাতে অবস্থান করেন, আমিও তাদের হৃদয় বাস করি।
গীতা - ১৮ অধ্যায় ৬৫ ও ৬৯ শ্লোক
মন্মনা ভব মদ্ভক্তঃ মদযাজি মাম্ নমস্কুরু ।
মাম এষ্যসি সত্যম্ তে প্রতিজানে প্রিয় অসি মে ।। ৬৫
অর্থ : তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর এবং আমার ভক্ত হও। আমার পুজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই ভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে।
ন চ তস্মাত্ মনুষ্যেসু কশ্চিত্ মে প্রিয় কৃত্তম্ ।
ভবিতা ন চ মে তস্মাত্ অন্যঃ প্রিয়তর ভূবি ।। ৬৯
অর্থ : এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয়কারি এবং আমার প্রিয় আর কেউ নেই এবং ভবিষ্যতে কখন হবেও না । ( এখানে কৃষ্ণ তার কথা বলেছে যিনি কৃষ্ণ এর গীতা বাণী ভক্তদের নিকট বলবে অর্থ্যাৎ শোনাবে তার মতো প্রিয় কৃষ্ণের কাছে অন্য কেউ হবেনা )
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে তার কাছে কেও প্রিয়ও নয় এবং অপ্রিয়ও নয় । কিন্তু 2য় শ্লোকে অর্জুন কে প্রিয় বলছে অর্জুন এমন কেন ? নিচের শ্লোকে বলছে তার মতো প্রিয় কেও হবেনা , এমন কেন ? গীতায় এত স্ববিরোধী বাণী কেন কৃষ্ণ ভক্ত গণ ?
_______________________________
গীতা - ৭ অধ্যায় ৬ শ্লোক
এতত্ যেনীনি ভূতানী সর্বানি ইতি উপধারয় ।
অহম্ কৃত্স্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয় তথা ।। ৬
অর্থ : আমার উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উত্পন্ন হয়েছে।অতএব আমিই জগতের উত্পত্তি ও প্রলয়ের মুল কারন।
গীতা - ১৮ অধ্যায় ৪৬ শ্লোক
যতঃ প্রবৃত্তিঃ ভূতানাম্ যেন সর্বম্ ইদম্ ততম্ ।
স্বকর্মনা তম্ অভ্যর্চ্য সিদ্ধিম্ বিন্দতি মানবঃ ।। ৪৬
অর্থ : যে পরমেশ্বর ভগবান থেকে সমস্ত জীবের উত্পত্তি, যিনি এই সমগ্র বিশ্ব ব্যপ্ত আছেন, তাকে মানুষ তার কর্মের দ্বারা অর্চনা করে সিদ্ধি লাভ করে।
ওপরের শ্লোকে কৃষ্ণ বলছে -‘ আমি জড় চেতন উৎপত্তি করেছে এবং এগুলোর উৎপত্তি এবং প্রলয় এর মূল কারণ আমি ‘ ।।। কিন্তু পরের শ্লোক কৃষ্ণ বলছে - ‘ যে পরমেশ্বর ভগবান থেকে সমস্ত জীবের উত্পত্তি, যিনি এই সমগ্র বিশ্ব ব্যপ্ত আছেন , তাকে মানুষ কর্মর দ্বারা সিদ্ধিলাভ করে ‘ ।।
এই শ্লোকে কৃষ্ণ কোন ঈশ্বর এই কথা বলছে ? এই শ্লোকে কৃষ্ণ নিজেকে ঈশ্বর না বলে অন্য কাউকে বলেছে ,,,
এমন কেন ? স্ববিরোধী ?
____________________
গীতা - ৯ অধ্যায় ২৮ শ্লোক
শুভ অশুভ ফলৈঃ এবম্ মোক্ষ কর্ম বন্ধনৈঃ ।
সন্ন্যাস যোগ যুক্তাত্মা বিমুক্ত মাম্ উপৈষসি ।। ২৮
অর্থ : এই ভাবে আমাকে সমস’ কর্ম অর্পন দ্বারা শুভ এবং অশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হবো। এই ভাবে সন্নাস যোগে যুক্ত হয়ে তুমি মুক্ত হবে এবং আমাকেই প্রাপ্ত হবে।
গীতা - ১৮ অধ্যায় ৬২ শ্লোক
তম এব শরনম্ গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।
তত্ প্রসাদাত্ পরাম্ শান্তিম্ স্থানম্ প্রপ্সসি শাশ্বতম্ ।। ৬২
অর্থ : হে ভারত সর্বত ভাবে তুমি সেই পরমেশ্বর শরনাগত হও । তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং
তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে ।
ওপরের শ্লোকে বলছে আমাকেই প্রাপ্ত হবে , কিন্তু নিচের শ্লোক টি দেখুন ! এই শ্লোকে কৃষ্ণ কোন ঈশ্বর এর শরণাগত হতে বলেছে ? কৃষ্ণ বলছে – ‘ তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে ‘কৃষ্ণ নিজেই নিজেকে ‘ তার ‘বলে নাকি ? এত্তো স্ববিরোধী বাণী কেন গীতায় ?
____________________________
গীতা - ১৩ অধ্যায় ১৪, ১৫ ও ১৬ শ্লোক
সর্বতঃ পানি পাদম তত্ সর্বতঃ অক্ষি শির মুখম্ ।
সর্বতঃ শ্রুতিমত্ লোকে সর্বম আবৃতম্ তিষ্ঠতি ।। ১৪
অর্থ : তার হস্ত পদ চক্ষু ও কর্ন মস্তক ও মুখ সর্বত ব্যপ্ত এই ভাবে তিনি সকলকেই আবৃত করে বিরাজমান।
সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্ ৷
অসক্তং সর্বভৃচ্চৈব নির্গুণং গুণভোক্তৃ চ ৷৷ ১৫
অর্থ : সেই পরম আত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের জ্ঞাতা হয়েও তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয় ইন্দ্রিয় রহিত । যদিও তিনি সকলের পালক তথাপি তিনি সম্পুর্ন অনাসক্ত নির্গুণ হয়েও সমস্ত গুনের ভোক্তা
বহিঃ অন্তঃ চ ভুতানাম্ অচরম্ চরম্ এব চ ।
সুক্ষ্মত্বাত্ তত্ অবিজ্ঞেয়ম দুরস্তম্ চ অন্তিকে চ তত্ ।। ১৬
অর্থ : সেই পরম্ তত্ত্ব সমস্ত ভুতের অন্তরে ও বাহিরে বর্ত্তমান । তার থেকেই সমস্ত চরাচর ,তিনি জড় ইন্দ্রিয়ের অগোচর এবং অবিজ্ঞেয় । যদিও তিনি বহুদুরে অবস্থিত তবুও তিনি সকলের অত্যন্ত নিকটে।
আপনাদের মতে তো কৃষ্ণ ঈশ্বর তাহলে এই শ্লোক গুলো কৃষ্ণ কোন ঈশ্বর এর উদ্দেশ্যে বলেছে ? এর উত্তর টি নিয়ে আসবেন কৃষ্ণ ভক্তগণ ।
সমস্ত কৃষ্ণ ভক্তদের উদ্দেশ্যে থাকলো এই প্রশ্ন গুলো ,,
এর উত্তর গুলো একটু আনবেন কৃষ্ণ ভক্তগণ, বেদাদী শাস্ত্র না পড়ে না বুঝে যারা কৃষ্ণ কে ঈশ্বর বলে এবং যারা গীতা কে সমস্ত কিছুর মূল ভাবে তারা অবশ্যই উত্তর গুলো দেবেন ।
যদি না পারেন তো গর্তে প্রবেশ করুন , কারণ গীতা না পড়ে না বুঝে কৃষ্ণ কে ঈশ্বর ঈশ্বর বলে চিল্লায় অপ্রচার করবেন না আমি অনুরোধ করছি আপনাদের কাছে । আর বেদাদী শাস্ত্র না জানলে এই প্রশ্নের গুলোর উত্তর দিতে পারবেন না এই টুকু স্পষ্ট বলতে পারি আমি ।।
" ওঁম শান্তি শান্তি শান্তি "
🙏 নমস্কার 🙏
নমষ্কার🙏
ReplyDeleteযোগেশ্বর এবং ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য কি??
নমষ্কার🙏
ReplyDeleteযোগেশ্বর এবং ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য কি??
যিনি শ্রেষ্ঠ যোগী তিনিই যোগেশ্বর
Delete